ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

করোনায় মৃতের লাশ বহনে ভ্যাট নেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা!

প্রকাশনার সময়: ০২ আগস্ট ২০২১, ০৬:১৩

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া প্রতিটি লাশ বহনের জন্য হাসপাতালের করিতকর্মা প্রশাসনিক কর্মকর্তা ফরিদুল হক ৩০০ টাকা করে নিতেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) এ ঘটনায় তদন্ত ও বিচার চেয়ে মমেকের পরিচালক বরাবর একটি আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন বেসরকারি লাশ বহনকারী সাত ব্যক্তি। লাশ বহনকারী রুবেল, হরমুজ, মানিক মিয়া, জামাল, হিরা, শামসু ও কামাল স্বাক্ষরিত আবেদনপত্রটি জমা দেওয়া হয়।

আবেদনে বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে আবেদনকারীরা বিনা বেতনে হাসপাতালের ওয়ার্ড থেকে মারা যাওয়া রোগীদের লাশ বহন করে আসছেন। নিহতের স্বজনদের কাছ থেকে পাওয়া সেলামি দিয়েই তাদের সংসার চলছিল। করোনাকালে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রতি লাশ বহনের জন্য তাদেরকে এক হাজার করে টাকা দেওয়ার বিষয়টি নির্ধারণ করেন। সে মতে লাশ বহন করে আসছিলেন তারা।

তবে গত রোজার ঈদের আগে তারা লাশ বহনের ১০৩টি স্লিপ জমা দেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা ফরিদুল হকের কাছে। কিন্তু তিনি প্রতি লাশের জন্য ৩০০ টাকা করে কেটে রেখে বাকি টাকা তাদের হাতে তুলে দেন।

এ বিষয়ে লাশ বহনকারী জামাল বলেন, ফরিদ স্যার প্রতি লাশের জন্য ৩০০ টাকা রেখে দিয়ে আমাদেরকে ৭০০ টাকা করে বুঝিয়ে দেন। টাকা রেখে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন তাকে প্রতি লাশ বাবদ ৩০০ টাকা করে দিতে হবে, তা না হলে কাজ করতে পারবো না।

ভুক্তভোগী কর্মীদের আবেদনে আরও বলা হয়, মাঝেমধ্যেই ফরিদুল হক হুমকি দিয়ে লাশ বহনকারীদের থেকে জরিমানার নামে এক থেকে তিন হাজার টাকা করে আদায় করেছেন।

জুন মাসের শেষের দিকে প্রতি লাশের জন্য ৩০০ টাকা দিতে অপারগতা জানানোর পর ১৪৮টি লাশ বহনের স্লিপ জমা দিতে গেলে তিনি ওই স্লিপ জমা নেননি এবং তাদেরকে তাড়িয়ে দেন। পরে জুলাই মাসের ১ তারিখ লাশ প্রতি এক হাজার টাকা আর দেওয়া হবে না, তাদেরকে মাসিক পাঁচ হাজার টাকার বেতনে লাশ বহনের কাজ করতে হবে বলে জানানো হয়। এই কথা শুনে কাজ করবেন না জানিয়ে লাশ ঘরের চাবি বুঝিয়ে দেন আবেদনকারী সাত ব্যক্তি। এরপরে ওই সাত ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে জুলাই মাসের শুরুতেই ১০ হাজার টাকা বেতনে নতুন ছয় ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া হয় লাশ বহনের জন্য।

আবেদনকারীদের কাছে করোনায় মারা যাওয়া ১৪৮ জনের লাশ বহনের স্লিপ এখনও রয়ে গেছে। বর্তমানে বেকার হয়ে অর্থাভাবে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা।

লাশ বহনকারী শামসু (৭০) বলেন, ‘প্রায় ৫০ বছর ধরে হাসপাতালে লাশ বহন করে সংসার চলছে। এর আগে হাসপাতালের কোনও কর্মকর্তা লাশের জন্য টাকা নেননি। কিন্তু প্রশাসনিক কর্মকর্তা ফরিদ স্যার যোগদানের পর থেকেই তিনি নানা অনিয়ম করে আসছেন এবং আমাদের লাশ টানার প্রাপ্য টাকা থেকে ৩০০ টাকা করে নিয়েছেন। টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় এবং এর প্রতিবাদ করায় আমাদেরকে বের করে দিয়ে নতুন লোক নিয়োগ দিয়েছেন। বৃদ্ধ বয়সে অন্য আর কী কাজ করে সংসার চলবে, এই নিয়ে রাতে ঘুম হয় না।’

লাশ বহনকারী মানিক বলেন, ‘৩০০ টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় আমাদের কাছে থাকা ১৪৮টি লাশ বহনের স্লিপ ফরিদ স্যার জমা নিচ্ছেন না।’

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে প্রশাসনিক কর্মকর্তা ফরিদুল হক বলেন, করোনাকালে প্রতি লাশ বহনের জন্য এক হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। প্রতি লাশের জন্য ভ্যাট কেটে ৮০০ টাকা করে জুন পর্যন্ত লাশ বহনকারী ব্যক্তিদের পরিশোধ করা হয়েছে। এরপর আর কোনও স্লিপ তারা জমা দেননি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আগের সিদ্ধান্ত বাতিল করে মাসিক ৫০০০ থেকে ৭০০০ টাকা বেতনে নিয়োগের কথা বললে লাশ বহনকারী ব্যক্তিরা রাজি হননি। পরে তাদের বাদ দিয়ে নতুন করে ছয় জন ব্যক্তিকে ১০ হাজার টাকা বেতনে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. ওয়ায়েজউদ্দীন বলেন, লাশ বহনকারীদের কাছ থেকে একটি আবেদন জমা হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নয়া শতাব্দী/এসইউ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ