পদ্মা সেতু উদ্বোধনের সন্ধ্যা থেকে প্রধানমন্ত্রীর জনসভা মঞ্চে ৬ দিনব্যাপী জমকালো সাংস্কৃতিক উৎসব উপভোগ করছেন পদ্মাপাড় ও দক্ষিনাঞ্চলের মানুষ। মাদারীপুরের শিবচরের বাংলাবাজারে মঞ্চে শিশু-কিশোরসহ নানা বয়সের মানুষের সাথে এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন দেশের বিভিন্ন এলাকার সংসদ সদস্যরা। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের জমকালো এই আয়োজনে অংশ নিতে পেরে নিজেদের ধন্য মনে করেন অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া দেশ বরেণ্য ও গুনী শিল্পীরা।
জেলা প্রশাসন বলছেন, সেতু উদ্বোধনকে ঘিরে পদ্মাপাড়ে এমন আয়োজন যোগ করেছে বাড়তি বিনোদনের।
সরেজমিন জানা যায়, পদ্মা পাড়। মাদারীপুরের শিবচরের বাংলাবাজার ঘাট এলাকা। চারদিকে লাইটিং-এ আলোকিত। দর্শক ও স্রোতারা আনন্দ-উল্লাসে মাতোয়ারা। স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন। তার সাথে সেতু উদ্বোধনকে ঘিরে জেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে ২৫ জুন থেকে ৬ দিনব্যাপী মনমুগ্ধকর এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখতে ভিড় করেন শিশু-কিশোরসহ নানা বয়সের মানুষ।
অনুষ্ঠানে যোগ দেন চীফ হুইফ, সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসন সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জীবনী নিয়ে যাত্রাপালা, নাটকসহ বরেণ্য ও গুনী শিল্পীদের সংগীত পরিবেশনে খুশি সবাই। ৩০ জুন পর্যন্ত এই মঞ্চে সংগীত, নৃত্য, নাটক ও কবিতা আবৃত্তিসহ রয়েছে নানান আয়োজন।
৬দিনের জমকালো এই আয়োজন বাস্তবায়ন করতে সরকারের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসনকে এক কোটি ৩৯ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত চলবে এই অনুষ্ঠান।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরিবেশনায় অনুষ্ঠানের প্রথম দিন ২৫ জুন গান পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম, খুরশীদ আলম, খাইরুল আনাম শাকিল, প্রিয়াংকা গোপ, প্রতীক হাসান। এদিন বর্ণাঢ্য লেজার শো, আতশবাজির পাশাপাশি পরিবেশন করা হয় সমবেত নৃত্য। ২৬ জুন সমবেত নৃত্যর পাশাপাশি গান পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী কনা, ইমরান ও ব্যান্ডদল স্পন্দন। ২৭ জুন সমবেত নৃত্যর পাশাপাশি গান পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী শফি মন্ডল ও রাজিব। এদিন বঙ্গবন্ধুর জীবনীর উপর মঞ্চায়ন করা হয় যাত্রাপালা কারাগার জীবন ও সংগ্রাম। ২৮ জুন সমবেত নৃত্য, নাট্যদলের পরিবেশনা ও গান পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী ঐশী। ২৯ জুন গান পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী মেহেরীন ও সজিব। এদিন বাউল দলের পরিবেশনায় বাউল গান ও বিশেষ অ্যাক্রোব্যাটিক পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হয়। ৩০ জুন থাকবে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীদের পরিবেশনা, নৃত্যাঞ্চলের পরিবেশনায় শামীম আরা নিপা ও শিবলী মুহাম্মদ এর পরিচালনায় সমবেত নৃত্য এবং গান পরিবেশন করবেন জনপ্রিয় ব্যান্ডদল জলের গান।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আসা রোকেয়া আক্তার বলেন, আমাদের এই পদ্মার পাড়ে এর আগে এত সুন্দর জমকালো কোন অনুষ্ঠান কখনো হয়নি। অনুষ্ঠান উপভোগ করলাম। খুব ভাল লাগলো।
আরেক দর্শনার্থী সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, আমাদের এলাকায় এর আগে এত বড় বড় শিল্পীরা কখনো আসেনি। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের কল্যাণে আজ আমরা দেশের নাম করা শিল্পীদের কাছ থেকে দেখলাম ও মনোমুগ্ধকর গান শুনলাম। এক যাত্রা শিল্পী বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে যাত্রা পরিবেশন করতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। আমার জীবনে এমন সুন্দর দিন আর কখনো আসবে কিনা জানি না।
দেশ বরেণ্য কণ্ঠশিল্পী কনা বলেন, বড় শো তো অনেক করেছি কিন্তু পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে আজ এসেছি এটা একটি নতুন অভিজ্ঞতা। পদ্মা সেতু সবারই স্বপ্ন ছিল। আজ পদ্মা সেতু উদ্বোধন হয়েছে। পদ্মা সেতুর একটি থিম সং-এ এর আগে আমি কণ্ঠ দিয়েছি। আজকে গাড়ি চালিয়ে পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে আসার কি যে অনুভূতি তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।
স্বনামধন্য কণ্ঠশিল্পী শফি মন্ডল বলেন, পদ্মা সেতু অনেক বড় একটি অর্জন আমাদের। তাই এই উৎসব ছয় দিন না হয়ে ছয় মাস হওয়া উচিত ছিল।
মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনে এখন আমাদের ঘরে ঘরে আনন্দ। এই আনন্দ উদযাপন করতে আমরা পদ্মার পাড়ে ৬ দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক উৎসবের আয়োজন করেছি। মাদারীপুরের পাশাপাশি, শরীয়তপুর, ফরিদপুরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে এসে মানুষ এই উৎসব উপভোগ করছে। দক্ষিনাঞ্চলের সবাই এক হয়ে এই অনুষ্ঠানকে অন্য মাত্রায় নিয়েছে। আমরা মনে করি এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি স্বরনীয় হয়ে থাকবে।
জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ নূর-ই আলম চৌধুরী বলেন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি আমাদের ঘরে ঘরে আনন্দ। যে যেভাবে পারছে আনন্দ করছে। আমাদের অনেক বড় একটি স্বপ্ন পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এটা আমাদের অনেক বড় একটি অর্জন।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ