উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির পানি গাইবান্ধার সদর, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার নদী তীরবর্তী চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলে প্রবেশ করায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এমন অবস্থায় পরিবার-পরিজন ও গরু-ছাগল নিয়ে চরম খাদ্য সংকটে দিন পার করছেন বন্যা কবলিত এলাকার নিম্ন আয়ের মানুষজন।
সরেজমিনে গাইবান্ধার বন্যা কবলিত কয়েকটি ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, পানিবন্দী মানুষের কোথাও ঠাঁই মিলছে না। ঝুঁকিতে পড়েছে শিশু ও বৃদ্ধদের জীবন। বিশুদ্ধ পানির অভাবে দেখা দিয়েছে নানা ধরনের পানিবাহিত রোগ। এছাড়া শুকনো খাবার, ঔষধ, বিশুদ্ধ পানি ও পয়নিঃষ্কাশনের দেখা দিয়েছে তীব্র সংকট। বন্যা কবলিত প্রতিটি গ্রামে সরকারি ত্রাণের জন্য হাহাকার চলছে।
আশ্রয়কেন্দ্র ও উঁচু বাঁধে ঠাঁই নেয়া লোকজন জানান, গ্রামের প্রতিটি ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। অনেকের বাড়িঘরে গলা সমান পানি। তারা নিজ বসতবাড়ি ছেড়ে পরিবার ও গৃহপালিত পশু নিয়ে বিভিন্ন উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। কেউ কেউ শহরের আত্নীয় স্বজনের বাড়িতে চলে গেছে। কেউ কেউ আবার পানির মধ্যেই কষ্ট করে টিকে আছে। রান্নাবান্নার জন্য শুকনো চুলা, খড়ি এবং গো-খাদ্যের অভাব প্রকট আকার ধারণ করেছে।
বিশেষ করে সদরের মোল্লারচর ও কামারজানি, সুন্দরগঞ্জের হরিপুর ও বেলকা, কাপাসিয়া, ফুলছড়ির কঞ্চিপাড়া, এরেন্ডাবাড়ি ও ফজলুপুর ইউনিয়ন এবং সাঘাটা উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চলের প্রায় ১০ ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার বাড়িঘরে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। অনেক স্থানে বন্যা কবলিত মানুষদের ঘরে এখনও সরকারি খাদ্য পৌঁছায়নি। ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে এসব এলাকার বানভাসিরা। বন্যার পানিতে এসব এলাকার ফসলি জমির পাট, বাদাম, কাউন, মরিচসহ বিভিন্ন শাকসবজির ক্ষেত তলিয়ে গেছে। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।
এদিকে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নদী ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ভাঙন দেখা দিয়েছে চার উপজেলার অন্তত ২৩টি পয়েন্টে। ইতোমধ্যে এসব এলাকার অনেক বসতবাড়ি, গাছপালা ও ফসলি জমিসহ নানা স্থাপনা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বন্যার্ত মানুষের জন্য ১৮টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এখানে ৮’শ ৫জন পুরুষ, ৬’শ ৬১ জন মহিলা, ৪’শ ৫৪ জন শিশু, ২’শ ১০টি গরু আশ্রিত রয়েছে। এদের চিকিৎসার জন্য ২৯টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এরমধ্যে চালু রয়েছে ১০টি।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা, ফুলছড়ি উপজেলার ২৩টি ইউনিয়নের ২১ হাজার ৮’শ ৩৪ জন মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৬১ হাজার ৫’শ ১৪ জন। পানিবন্দী হওয়ায় ওইসব এলাকার লোকজনকে এখন চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বর্ন্যাতদের জন্য ৬’শ ৫মেট্রিক টন চাল, নগদ ২২ লাখ টাকা ও শিশু খাদ্যের জন্য ১৮ লাখ ৯৩ হাজার ও গো-খাদ্যের জন্য ৩৭ লাখ ৯৯ হাজার টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এর মধ্যে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে চার উপজেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য ৮০ মেট্রিক টন চাল, নগদ ৬ লাখ টাকা, শিশু খাদ্যের জন্য ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা, গো-খাদ্যের জন্য ১৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে ১’শ ৫টি পরিবারকে শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
বর্তমানে ৫২৫ মেট্রিক টন চাল, ১৬ লাখ টাকা, শিশু খাদ্যের জন্য ৩লাখ ৪৩ হাজার টাকা এবং গো-খাদ্যের জন্য ২১লাখ ৯৯ হাজার টাকা মজুদ রয়েছে।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (ভারপ্রাপ্ত) নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান বলেন, বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) ঘাঘট নদীর পানি শহর পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে, ব্রহ্মপুত্র নদের ফুলছড়ি পয়েন্টে ১৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে, তিস্তা নদীর পানি ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে এবং করতোয়া নদীর পানি ১’শ ১৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভারি বৃষ্টিপাত না হলে বিপদের তেমন কোন আশঙ্কা নেই।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ