গোমতীর পাড়ের শহর কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ভোটের লড়াই বুধবার (১৫ জুন)। ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথেই ভোট উৎসবে মেতে উঠবে নগরীর ভোটাররা। আগামী পাঁচ বছরে কে থাকবেন কুমিল্লার নগর ভবনের কর্তা তা নির্ধারণে কাল ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন ভোটাররা।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের তৃতীয় নির্বাচন এটি, এর আগের দুইবারই জয়ের মালা গলায় পড়েন এবার নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপি হতে বহিষ্কার হওয়া মনিরুল হক সাক্কু। গত নির্বাচনে বিএনপির ধানের শীষ নিয়ে মনিরুল হক সাক্কু প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন নৌকার প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমার সাথে। আর এবার বিএনপি নির্বাচনে না আসায় স্বতন্ত্র হিসেবেই লড়ছেন মনিরুল হক সাক্কু। আর এবার নৌকা প্রতীকে লড়ছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত। রিফাত ছাড়াও সাক্কুকে এবার মুখোমুখি হতে হয়েছে বিএনপি শিবিরের আরেক প্রার্থীর। কুমিল্লার বিএনপির রাজনীতিতে সাক্কুর দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বি হাজী ইয়াসিন। এবারের নির্বাচনে ঘোড়া প্রতীকে লড়ছে এই ইয়াসিনের শ্যালক নিজামউদ্দিন কায়সার। বিএনপি নির্বাচনে না থাকলেও বিএনপির এই দুই নেতা রয়েছেন মাঠে। তাই ভোটের লড়াইয়ে বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের ভোট গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।
মাঠের পরিস্থিতি বলছে, বিএনপির বড় একটি অংশ কায়সারের সাথে রয়েছেন। সেই প্রেক্ষাপটে ভোটের লড়াইয়ে ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে এমনটাই আন্দাজ করা যাচ্ছে। তাই নগর পিতা হিসেবে সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর পুনরাবৃত্তি হবে নাকি পরিবর্তন হয়ে রিফাত কিংবা কায়সার জয়ের মালা পড়বে তা জানা যাবে ভোটের ফলে।
এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রচার- প্রচারণায় তেমন কোনো বড় অঘটন না ঘটলেও শেষ সময়ে এসে বহিরাগত নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু এবং নিজামউদ্দিন কায়সার। অন্যদিকে আওয়ামীলীগের প্রার্থী আরফানুল হক বলছেন ভোটের পরিবেশ নষ্ট করার প্রশ্নই উঠে না।
তবে নির্বাচনের পরিবেশ নির্বিঘ্নে রাখতে পুরো নগরীকে নিরাপত্তার চাদরে মুড়িয়ে দিয়েছে আইনশৃংখলারক্ষা বাহিনী। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা নিয়ে কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ১০৫ টি ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তার পাশাপাশি প্রতিটি ওয়ার্ডে পর্যাপ্ত সংখ্যক মোবাইল টিম কাজ করবে। একই সঙ্গে ৭৫ টি চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, পুলিশের পাশাপাশি র্যাবের ৩০ টি টহল টিম ও ১২ প্লাটুন বিজিবি থাকবে। পাশাপাশি অর্ধশতাধিক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও নয়জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাজ করবে।
এসময় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ অনিয়ম করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, দায়িত্বরত অবস্থায় কেউ গাফিলতি, অনিয়ম করলে ছাড় দেওয়া হবে না। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অতীতেও আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে যারা কাজ করেছেন, তাঁদের শাস্তি দিয়েছে পুলিশ প্রশাসন। প্রত্যেক পুলিশ সদস্যদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে।
এদিকে ভোট গ্রহণ কার্যক্রম সুষ্ঠু করতে ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে নির্বাচন কমিশন। মঙ্গলবার সকাল হতে নগরীর জেলা স্কুলের শহীদ আবু জাহিদ মিলনায়তন থেকে ইভিএম বিতরণ করা হয়। কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিজাইডিং অফিসারের মাধ্যমে ভোট গ্রহণের সরঞ্জামাদি বিতরণ করা হয়। রিটার্নিং অফিসার মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ সরঞ্জামাদি সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তারা বিতরণ করেন।
রিটার্নিং অফিসার মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী বলেন, ভোটগ্রহণকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা ইনস্টল করা হয়েছে। ভোট কক্ষে সিসি ক্যামেরা থাকবে পাশাপাশি কেন্দ্রের বাহিরে ভোটাররা যেখানে লাইন ধরে সেই স্থানও সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে। নিরাপত্তা নিশ্চিতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিজিবি, র্যাব, পুলিশের সদস্যরা মাঠে রয়েছে।
হেভিওয়েট তিন প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামীলীগের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত সকাল ৯টায় ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুলে ভোট দেবেন বলে জানা গেছে। সাবেক মেয়র ও টেবিল ঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু সকাল ১০ টায় নগরীর হোচ্ছা মিয়া বিদ্যালয়ে ভোট দিবেন। আর ঘোড়া প্রতীকে নির্বাচন করা নিজামউদ্দিন কায়সারও ভোট দিবেন নগরীর ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুল কেন্দ্রে ভোট দিবেন বলে জানা গেছে।
কুসিক নির্বাচনে এবারের মেয়রপ্রার্থীরা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত (নৌকা প্রতীক), স্বতন্ত্র প্রার্থী সদ্যবিদায়ী মেয়র মনিরুল হক সাক্কু (টেবিল ঘড়ি), নিজাম উদ্দিন কায়সার (ঘোড়া), ইসলামী আন্দোলনের রাশেদুল ইসলাম (হাতপাখা) এবং নাগরিক কমিটির কামরুল আহসান বাবুল (হরিণ)। এছাড়া কাউন্সিলর পদে ১০৮ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৩৬ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
বুধবার (১৫ জুন) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ১০৫ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হবে। এ সিটিতে মোট ভোটার দুই লাখ ২৯ হাজার ৯২০ জন। তাদের মধ্যে নারী এক লাখ ১৭ হাজার ৯২ এবং পুরুষ এক লাখ ১২ হাজার ৮২৬।
নয়া শতাব্দী/এসএম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ