ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
কুসিক নির্বাচন

ভোটারদের মন জয়ে অলিগলিতে ছুটছেন প্রার্থীরা

প্রকাশনার সময়: ১২ জুন ২০২২, ০০:২৯

শেষ হয়ে আসছে কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের প্রচারণার সময়, তাই শেষ সময়ে এসে প্রার্থীরা যেনো দ্বিগুণ গতিতে ছুটছেন ভোটারদের মন জয়ে। সকাল হতে রাত অবধি গণসংযোগ, পথসভা, মতবিনিময়, উঠোন বৈঠকে বিরামহীন প্রচারণা চালাচ্ছেন প্রার্থীরা। ভোটারদের দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ছুড়ছেন অভিযোগের তীর।

শনিবার নগরীর রানীর দিঘির পাড় হতে প্রচারণা শুরু করেন নৌকার প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত। এসময় আগের মেয়রকে দুর্নীতিবাজ আখ্যা দিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, কুমিল্লা শহরের প্রধান যে সমস্যা সেটা হলো অল্প বৃষ্টিতেই শহর পানির নিচে তলিয়ে যায়। টাকার বিনিময়ে অপরিকল্পিত ভবন-ইমারতের পারমিশন দিয়েছেন, এগুলোর জন্য ড্রেন সংকুচিত হয়েছে। আমি ওনাকে দুর্নীতিগ্রস্ত বলেছি, উনি চ্যালেঞ্জ করুক আমি প্রমাণ করবো উনি দুর্নীতিবাজ।

এদিন নগরীর ৭ ও ৮নং ওয়ার্ডে প্রচারণা চালান টেবিল ঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী মনিরুল হত সাক্কু। এসময় তিনি তার কর্মীদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে দাবি করে বলেন, যেখানে আমি ওয়ার্ক করতে যাচ্ছি সেখানেই ওয়ার্ক শেষে আমার কর্মীদের ফোনে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমি শঙ্কা করছি নির্বাচনের দিন সকালে বিভিন্ন উপজেলা, ইউনিয়ন হতে বহিরাগতদের প্যানিক সৃষ্টি করার জন্য কেন্দ্রের সামনে রাখা হবে, যাতে ভোটাররা না যেতে পারে। ভোট দিতে যেয়ে এ অবস্থা দেখলে ভোটাররা ভোট না দিয়ে বাসায় চলে যাবে। আমি অনুরোধ করবো সিইসি, রিটার্নিং কর্মকর্তা যেনো এই বিষয়টা দেখে।

ঘোড়া প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া নিজাম উদ্দিন কায়সার এদিন প্রচারণা শুরু করেন নগরীর রাজগঞ্জ বাজার হতে। এসময় তিনি বলেন, মানুষের মধ্যে শঙ্কা আছে যে হুমকি-ধুমকি দেওয়া হচ্ছে যে ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে দেওয়া হবে না। পুরো নির্বাচনী এরিয়াই ঝুঁকিপূর্ণ, পুরো এলাকাতেই নিছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

প্রসঙ্গত, আগামী ১৫ জুন অনুষ্ঠিত হবে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। এই নির্বাচনে মেয়র পদে পাঁচজন প্রার্থী থাকলেও মূল লড়াই হচ্ছে আওয়ামীলীগের আরফানুল হক রিফাত, বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা ও সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের বহিষ্কৃত নেতা নিজামউদ্দিন কায়সারের মধ্যে।

নিরাপদ সম্প্রীতির কুমিল্লা গড়ার প্রত্যয় কায়সারের

কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হলে ‘নিরাপদ সম্প্রীতির কুমিল্লা গড়ার প্রত্যয় নিয়ে ইশতেহার প্রকাশ করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার। শনিবার সকাল ১১টায় নির্বাচনী প্রচারের ১৫তম দিনে নগরীর ধর্মসাগর পাড়ে ইশতেহার ঘোষণা করেন তিনি। নিরাপদ ও সম্প্রীতির কুমিল্লা উপহার দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে কায়সার ১৬ পৃষ্ঠার নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন। কায়সারের ঘোষিত ইশতেহারের ১৫ দফা হলো—নিরাপদ ও সম্প্রীতির কুমিল্লা উপহার, সবার জন্য আবাসন, দুর্নীতি, কিশোর গ্যাং, মাদকসহ সামাজিক ব্যাধি নির্মূল ও নৈতিক শক্তির পুনরুদ্ধার, তথ্যপ্রযুক্তি ও ফ্রিল্যান্সিং, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, যানজট নিরসন, ২৪ ঘণ্টা অনলাইনে স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্র স্থাপন, পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, খাদ্য ও নগর কৃষি, পয়োনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং ক্রীড়া ও সংস্কৃতি। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসময় কায়সার বলেন, মেয়র হলে এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে আমার সর্বোচ্চ চার বছর সময় লাগবে। এসময়ের মধ্যে সকল প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা হবে।

১১ দফা অঙ্গীকারই রিফাতের ইশতেহার

আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত প্রচারণার প্রথম হতেই ১১ দফা অঙ্গীকার সম্বলিত একটি প্রচারপত্র বিলি করছেন। প্রচারপত্রের এই ১১ দফাই ইশতেহার বলে ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। এরআগে ইশতেহার নিয়ে করা সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ১১ দফা প্রচারপত্রই আমার ইশতেহার। এর মধ্যেই নগরীর সব সমস্যার কথা উল্লেখ আছে। আমি সব জায়গায় বলছি নির্বাচিত হলে আমি এগুলো মেনে কাজ করবো। ওই ১১ দফায় রয়েছে, সিটি কর্পোরেশনকে দুর্নীতি মুক্ত করা, ভবনের নকশা অনুমোদনে সরকারি ফির বাইরে মেয়রকে এক টাকাও ঘুষ দিতে হবে না, বহুতল ভবনের নকশা অনুমোদনে মেয়রকে বিনামূল্যে কোনো ফ্ল্যাট দিতে হবে না, ঠিকাদারেরা কার্যাদেশ নিতে মেয়রকে পারসেনটেজ হিসেবে ঘুষ দিতে হবে না, সিটি কর্পোরেশনের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হবে, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনকে দলীয় কার্যালয় না বানিয়ে কুমিল্লা গণমানুষের প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করা হবে। কুমিল্লার দীর্ঘ দিনের সদস্যা জলাবদ্ধতা ও যানজট নিরসন করা হবে, করের টাকা সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে উন্নয়ন কাজে ব্যয় করা হবে, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সব পর্যায়ের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হবে, কুমিল্লার মানুষের জন্য মেয়রের দরজা সবসময় খোলা থাকবে এবং কুমিল্লা বিভাগ বাস্তবায়নসহ সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ইভটিজিং ও মাদকমুক্ত শান্তির কুমিল্লা গড়তে স্থানীয় সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিনের হাতকে শক্তিশালী করব।

নতুন ইশতেহার নেই, আগের অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করতে চান সাক্কু

কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক দুইবারের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু এবার নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপি হতে বহিষ্কার হয়েছেন। এই নির্বাচনে নতুন ইশতেহার দেওয়া হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগের দেওয়া ইশতেহারের ৭০ ভাগ কাজ সম্পন্ন করেছি। এবার বিজয়ী হলে বাকি অসম্পূর্ণ থাকা ৩০ ভাগ কাজ শেষ করবো। সাক্কু এর আগে ২০১৭ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়ে ২৭ দফা সম্বলিত ১১ পৃষ্ঠার ইশতেহার দিয়েছিলেন।

আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ সাক্কুর

কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিরুদ্ধে বহিরাগত লোক এনে মিছিল, সমাগম ও প্রচারণা চালানোর অভিযোগ করেছেন মনিরুল হক সাক্কু। শনিবার এ বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরীর কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু। স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেছেন–নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী আরফানুক হক রিফাত এবং সদর সাংসদ আ.ক.ম বাহাউদ্দীন বাহারের নির্দেশে সিটি কর্পোরেশনের আওতা বহির্ভূত এলাকার জন প্রতিনিধি, দলীয় কর্মী বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগণ নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে জন সমাগম, মিছিল ও শোডাউন করে যাচ্ছে এবং নির্বাচনের দিন বহিরাগতদের দ্বারা জনসমাগম ঘটিয়ে নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করবেন মর্মে জনশ্রুতি আছে। যাহা আচরণবিধির লঙ্ঘন। বিষয়টি যাচাই পূর্বক বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আপনাকে বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।

নয়া শতাব্দী/এসএম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ