ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কুসিক নির্বাচন : অভিযোগ-দোষারোপে চলছে প্রচারণা

দক্ষিণের ৬৭ হাজার ভোট পাল্টে দিতে পারে জয়ের গতিপথ
প্রকাশনার সময়: ১০ জুন ২০২২, ২০:৫৪ | আপডেট: ১০ জুন ২০২২, ২১:১২

শেষ মুহূর্তে চলছে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা। শেষসময়ে এসে নগরী জুড়ে আলোচনা কি হবে জয়ের সমীকরণ, কোন সমীকরণে ভর করে নির্বাচিত হবে নগরপিতা। মেয়র পদে পাঁচজন প্রার্থী থাকলেও ভোটের মাঠের পরিস্থিতি বলছে তিন প্রার্থীর মধ্যে হবে মূল লড়াই।

এই তিন প্রার্থী হলেন- নৌকার প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত, টেবিল ঘড়ি প্রতীকে নির্বাচন করা স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু ও ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার।

কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন গঠিত হয় কুমিল্লা পৌরসভার ১৮টি ও সদর দক্ষিণ পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের সমন্বয়ে। সদরের ১৮ টি আসনের চেয়ে সিটি কর্পোরেশনের সুযোগ সুবিধায় দক্ষিণের নয়টি ওয়ার্ড তুলনামূলক অনগ্রসর। এই নয় ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের দাবি- তারা সিটির সুফল হতে বঞ্চিত। তাই এবারের নির্বাচনে এই নয় ওয়ার্ডের ভোটের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে।

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, কুসিকের মোট ভোটার ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ১২ হাজার ৮২৬ এবং নারী ভোটার ১ লাখ ১৭ হাজার ৯২ জন। এর মধ্যে সিটির দক্ষিণের ৯টি ওয়ার্ডে ভোটকেন্দ্র ৩২টি আর ভোটার ৬৭ হাজার ২০ জন। দক্ষিণের এই ৬৭ হাজার ভোটার যেকোন প্রার্থীর জয় পরাজয়ের সমীকরণ পাল্টে দিতে পারেন। তাই তিন প্রার্থীরই চোখ এখন সদর দক্ষিণের ভোটারদের দিকে।

বিগত দুই নির্বাচনেই মেয়র নির্বাচিত হন এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে বিএনপি হতে বহিষ্কার হওয়া মনিরুল হক সাক্কু। প্রথমবার সাক্কুর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলো কুমিল্লার বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা আফজাল খান। সে নির্বাচনে অনায়েসেই জয়ের মালা পড়েন সাক্কু। দ্বিতিয় বার সাক্কু প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন আফজাল খানের কন্যা আঞ্জুম সুলতানার সাথে। সে নির্বাচনেও ১১ হাজার ভোটে জয়ী হন সাক্কু। তবে এবার সাক্কুর শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী দুইজন। আওয়ামী লীগের আরফানুল হক রিফাতের সাথে সাক্কুর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে রয়েছে সেচ্ছাসেবক দল নেতা নিজামউদ্দিন কায়সার। সে হিসেবে এবারেরর সাক্কুর নির্বাচনে জয়ের সমীকরণ আগের মত সহজ হবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।

২০১৭ সালের নির্বাচনে দক্ষিণের ৯টি ওয়ার্ডে ভোটকেন্দ্র ছিলো ৩১টি, যার ২০টিতেই সাক্কু জিতেছেন। আর মাত্র ৯টি কেন্দ্রে জয় পেয়েছেন সীমা। দুইটি কেন্দ্র স্থগিত করে কমিশন। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণের অংশে সীমা ভোট পেয়েছিলেন ১৫ হাজার ৬৯১টি। আর সাক্কু পেয়েছিলেন ১৯ হাজার ৫৬১। ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি প্রথম সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও সাক্কু পান ১৯ হাজার ৬৯৮ ভোট আর আফজল খান পান ১৫ হাজার ৩২ ভোট। ২০১৭ সালের নির্বাচনে মোট ভোটার ছিল ২ লাখ ৭ হাজার ৫৬৬ জন। ওই নির্বাচনে ১ লাখ ৩২ হাজার ৬৯০ ভোট পড়েছিল। বিএনপি প্রার্থী সাক্কু ৬৮ হাজার ৯৪৮ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমা পেয়েছিলেন ৫৭ হাজার ৮৬৩ ভোট। এ বছর ভোটার বেড়েছে ২২ হাজারের বেশি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিগতদিনের পরিসংখ্যান বিবেচনায় ভোটের মাঠে ৬৭ হাজার ভোট গুরুত্বপূর্ণ একটা ফ্যাক্টর, এখানের ভোট যার ঝুলিতে বেশি যাবে তার জয়ের পথ সুগম হবে। এজন্যই মেয়র প্রার্থীদের চোখ দক্ষিণের ৯টি ওয়ার্ডের দিকে। প্রতীক পেয়ে প্রথমদিন থেকেই দক্ষিণের এলাকা দিয়ে প্রচারণা শুরু করেন ঘোড়া প্রতীকের নিজাম উদ্দিন কায়সার। অন্য দুই হেভিওয়েট প্রার্থীও এই এলাকায় কর্মীদের সাথে নিয়ে প্রচারণায় বাড়তি মনোযোগ দিচ্ছেন। এই নয় ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত পথসভা, উঠোন বৈঠক, গণসংযোগ চালাচ্ছেন হেভিওয়েট তিনি প্রার্থীই।

সদর দক্ষিণ উপজেলার ওয়ার্ডগুলো একসময় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের নির্বাচনী এলাকা ছিলো। পরবর্তীতে নতুন করে সীমানা বিন্যাস করে সিটির সব ওয়ার্ড সদর আসনে সংযুক্ত করা হয়। সংসদীয় আসনে না থাকলেও এদিকের ওয়ার্ডগুলোতে এখনো প্রভাব আছে মোস্তফা কামালের। এরই মধ্যে অর্থমন্ত্রীর ছোট ভাই ও সদর দক্ষিণ উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার নৌকার পক্ষে নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রচারণায় নেমেছেন। অপরদিকে এই ওয়ার্ডগুলোতে প্রভাব রয়েছে সাবেক এমপি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরীর। বিএনপি নির্বাচনে না আসায় মনিরুল হক চৌধুরী প্রকাশ্যে ভোটের মাঠে নেই। তবে এখানকার বেশ কয়েকজন বিএনপি নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিগত দুই মেয়াদে এখানে কাঙ্খিত উন্নয়ন হয়নি। তাই এর সুবিধা কায়সার পেতে পারে। পাশাপাশি দল সরাসরি নির্বাচনে না আসলেও নেতাকর্মীদের বড় একটা অংশ কায়সারের পক্ষে কজ করছে।

এদিকে তিন প্রার্থীই দক্ষিণের ভোটারদের মন জয়ে দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। সবাই বলছেন নির্বাচিত হলে নিশ্চিত করা হবে নাগরিক সুবিধা।

শেষ সময়েও চলছে অভিযোগ- দোষারোপ:

শেষ সময়ে এসেও থেমে নেই প্রার্থীদের অভিযোগ- পাল্টা অভিযোগ। একে অপরের প্রতি নানা অভিযোগে ভোটের মাঠ সরগরম রেখেছে প্রার্থীরা। শুক্রবারও হেভিওয়েট তিন প্রার্থী ভোটের মাঠ উত্তপ্ত করেছেন অভিযোগ- দোষারোপে।

আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত শুক্রবার ১০টায় নগরীর ১১ নম্বর ওয়ার্ডের রানির দিঘীরপাড় এলাকায় নির্বাচনি কার্যালয় হতে প্রচারণা শুরু করেন। এসময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, কুমিল্লার মানুষ বাহার ভাইকে সম্মান করে, রাজনীতির উর্ধ্বে গিয়ে সবাই তাকে শ্রদ্ধা করে। আমার কোনো মিটিং এ কি আপনারা তাকে দেখেছেন। তিনি আচরণবিধি মেনে বাসায় অবস্থান করছেন, মাঝে মধ্যে আওয়ামী লীগ অফিসে যান। এখন কি আওয়ামী লীগ অফিস বন্ধ করে দেব? সাক্কু বাহার ভাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন তাকে কুমিল্লা ছাড়তে বলেছে। এইটা দুঃখজনক, সাক্কু বাহার ভাইকে কুমিল্লা থেকে বিতাড়িত করার চেষ্টা করছে।

সাবেক মেয়র স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের তেলিকোনা এলাকা থেকে গণসংযোগ শুরু করেন। এ সময় কর্মীদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, আমার কর্মীদের মোবাইল ফোনে হুমকি দেয়া হচ্ছে। নির্বাচন আসবে, নির্বাচন চলে যাবে, সকলে মিলে মিশে থাকতে হবে। দেশে গণতন্ত্র আছে। ভোটাররা যাকে ভালো মনে করে তাকে ভোট দেবে।

ঘোড়া প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার সকাল ১০টায় কুমিল্লা নগরীর ২০ নম্বর ওয়ার্ডের লক্ষীনগর দিশাবন্দ এলাকায় প্রচারণা চালায়। এসময় তিনি অভিযোগ করে বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিবন্ধকতা যারা করতে পারে তারা ২০১৮ তে ভোটের অধিকার হরণ করেছে। সেই নৌকার মাজি বর্তমান সংসদ সদস্য তারা এখনো এই ব্যবস্থাটাই গ্রহণ করছে। আমরা বিভিন্ন সোর্স থেকে খবর পেয়েছি তারা মানুষকে নির্বাচনের দিন ঠেকানোর চেষ্টা করছে। সংসদ সদস্যকে শুধুমাত্র নোটিশ দিলে হবে না তাকে অকার্যকর করতে হবে। তিনি এখনো সীমানায় বসে বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনকে ডাকছে।

প্রসঙ্গত, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৫ জুন। কুমিল্লা সিটির তৃতীয় এ নির্বাচনে ২৭টি ওয়ার্ডের ১০৫টি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ সিটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০ জন। এদের মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ১৭ হাজার ৯২ জন। পুরুষ ভোটার ১ লাখ ১২ হাজার ৮২৬ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছে ২ জন। এই নির্বাচনে মেয়র পদে পাঁচ জন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৩৬ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১০৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

নয়া শতাব্দী/জেআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ