দফায় দফায় দাম বৃদ্ধির ধকল সইতে না সইতে আবারও দাম বাড়ানো হয়েছে ভোজ্যতেল সয়াবিনের। এতে খুলনার সাধারণ ক্রেতারা ক্ষুব্ধ ও হতাশা ব্যক্ত করেছেন। এদিকে, বাড়তি দর ঘোষণার পর নতুন দামের তেল এখনো বাজারে না আসলেও নগরীর অধিকাংশ খুচরা ব্যবসায়ী তা কার্যকর করে ফেলেছেন। তারা আগের কম মূল্যের তেল বাড়তি দামেই বিক্রি করছেন।
জানা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম নিম্নমুখী হওয়ায় গত সপ্তাহে বাণিজ্যমন্ত্রী দেশের বাজারে তেলের দাম কমবে বলে আশ্বাস দিলেও ঘটেছে উল্টোটা। এবার একলাফে বাড়ানো হয়েছে লিটারে ৭ টাকা। খুচরা পর্যায়ে যা বিক্রি করা হবে ২০৫ টাকায়। এ অবস্থায় মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের কপালে আবারও চিন্তার ভাজ পড়েছে।
এদিকে জাতীয় বাজেট ঘোষণার দিন সয়াবিনের দাম আরও এক দফা বাড়ায় হতাশা ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন সাধারণ মানুষ।
নগরীর রূপসা বাজারে ক্রেতা শহিদুল আলম বলেন, পাঁচ সদস্যের পরিবার তার। মাসে তার ৫ লিটার তেলের প্রয়োজন হয়। কিন্ত গত ২ বছর তেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার কারণে তেলের ব্যবহার কমিয়ে দিয়েছেন। যেটুকু প্রয়োজন পড়ে সেটুকু ক্রয় করেন। তিনি আরো বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম এখন কম। সেখানে তেলের দাম কম হলে আমাদের এখানে কম হওয়ার কথা। সেটি না হয়ে একের পর এক দাম বেড়েই চলেছে। ভবিষ্যতে সয়াবিন তেলের বিকল্প হিসেবে তিনি অন্য তেল ব্যবহারের চিন্তা করছেন।
একই বাজারের ক্রেতা রাজিব মুন্সি জানান, গত কয়েকদিন আগেও বাণিজ্যমন্ত্রী তেলের দাম কমানোর কথা বলেছেন। কিন্তু আরও একদফা দাম বৃদ্ধির ঘোষণায় তিনি হতাশ। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে যে বেতন পান তা দিয়ে সংসার চলে না তার। আয় বাড়েনি কিন্তু বেড়েছে ব্যয়ের পরিমাণ। কি করবেন তা ভেবে উঠতে পারছেন না। তাই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমানোর জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ রেখেছেন তিনি।
তেলের দাম আরও একদফা বৃদ্ধির খবর জেনে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন জোড়াকল বাজারের মাসুদ সরদার। ১৫ সদস্য নিয়ে তার পরিবার। মাসে ১৫ লিটার তেলের প্রয়োজন হয়। দাম বৃদ্ধির পর থেকে তেলের ব্যবহার কমিয়ে দিয়েছেন। প্রয়োজন হলেই দোকান থেকে আধা লিটার তেল কেনেন তিনি। এ পরিমাণ তেলে তার সংসার চলতে চায় না।
তিনি আরো বলেন, একের পর এক নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিষের দাম বেড়ে চললেও সরকার আমাদের কথা চিন্তা করে না। প্রতিবেশী দেশ ভারতে কোন পণ্যের দাম ১০ পয়সা বাড়লে তার কৈফিয়ত জনগণকে দিতে হয়। কিন্তু আমাদের দেশে তা অনুপস্থিত।
উল্লেখ্য, গত ২ জুন সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজার অনুযায়ী দেশে তেলের দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই, দাম কমবে। কিন্তু ৯ জুন বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব খন্দকার নূরুল হকের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে দাম বাড়ানোর কথা জানানো হয়।
এতে জানানো হয়েছে, এই দফায় দাম বৃদ্ধির পর এক লিটার খোলা সয়াবিন তেলের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য হবে ১৮৫ টাকা। আর বোতলজাত এক লিটার সয়াবিনের সর্বোচ্চ খুচরা দাম হবে ২০৫ টাকা। এছাড়া পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম হবে সর্বোচ্চ ৯৯৭ টাকা। এক লিটার খোলা পাম তেলের দাম বেড়ে দাঁড়াল ১৫৮ টাকা।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ