ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আ. লীগের ১১৯ নেতাকে শোকজ, বহিষ্কার আতঙ্কে নেতাকর্মীরা

প্রকাশনার সময়: ০৬ জুন ২০২২, ১০:১৫

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র ও গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমকে গত বছরের ১৯ নভেম্বর মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত এবং দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কারের পর তার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ১১৯ জন নেতাকে কারণ দর্শানো (শোকজ) নোটিস দেওয়া হয়েছে। ১ জুন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো. আতাউল্যাহ মণ্ডল স্বাক্ষরিত শোকজ নোটিশে আগামী সাত দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।

শোকজ নোটিস পাওয়া নেতাদের মধ্যে ১৯ জন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটিতে বিভিন্ন পদে রয়েছেন। বাকি ১শ জন নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডের কমিটিতে থাকা নেতাকর্মী। এই নোটিস পাওয়ার পর বেশ কিছু নেতাকর্মীর মধ্যে বহিষ্কার আতঙ্ক বিরাজ করছে।

এদের মধ্যে- গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রউফ নয়ন, সহ-সভাপতি ও গাজীপুর আদালতের জিপি আমজাদ হোসেন বাবুল, যুগ্ম-সম্পাদক ও গাজীপুর জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান এসএম মোকছেদ আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবুর রহমান, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক সিটি কাউন্সিলর মো. রফিকুল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট মনির হোসেন মিয়া, সহ-দপ্তর সম্পাদক মাজহারুল আলম, ক্রীড়া সম্পাদক আসাদুজ্জামান তরুণ, কাউন্সিলর আজিজুর রহমান শিরিষ, সদস্য রজব আলী ও হাজী আব্দুর রশিদ প্রমুখ।

এদিকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলরদের মেয়াদ ২০২৩ সালে শেষ হবে। সে হিসেবে আগামী বছর মে অথবা জুন মাসের মধ্যেই গাজীপুর সিটির নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নির্বাচন ও মহানগর আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি গঠন করার আগেই ১১৯ নেতাকর্মীকে শোকজ দেওয়া হলো।

গত বছরের ৫ ডিসেম্বর মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী পরিষদের সভায় জাহাঙ্গীর আলম বহিষ্কার হওয়ার পর তার সঙ্গে যারা বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশ নিয়েছেন তাদের চিহ্নিত করতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির প্রধান করা হয় মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ওসমান আলীকে। তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ১১৯ নেতাকে শোকজ করা হয়েছে।

তদন্ত কমিটির এক নেতা জানান, শোকজ প্রাপ্তদের মধ্যে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রাথমিক ধাপ হিসেবে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আতাউল্যাহ মণ্ডলের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি ও দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অপরাধে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপরেও দলীয় কিছু নেতাকর্মী দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে প্রকাশ্যে ও গোপনে তার সঙ্গে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে দলীয় পদ-পদবী ব্যবহার করে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। গত ৫ ডিসেম্বর এদের বিষয়ে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সভায় ১১ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

কমিটির রিপোর্টে যাদের বিষয়ে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে তাদের শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নোটিশ প্রাপ্তির ৭ দিনের মধ্যে মহানগর কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো. আতাউল্যাহ মণ্ডলের নিকট লিখিতভাবে জবাব দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।

শোকজের তালিকায় থাকা বেশ কয়েকজন নেতা চিঠি প্রাপ্তির কথা স্বীকার করলেও অনেকে ওই চিঠি গ্রহণ করেননি।

মহানগর আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শুনেছি শতাধিক নেতাকে বহিষ্কার করার জন্য শোকজ পাঠানো শুরু হয়েছে। সামনে মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন। সিটি নির্বাচনও এগিয়ে আসছে। এ সময়ে তুচ্ছ অজুহাতে দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের দল থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

এর আগে ২০২১ সালের ১৯ নভেম্বর গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। কয়েক দিন পর তাকে মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগে জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে সরকার ও দল এ ব্যবস্থা গ্রহণ করে। একই সঙ্গে বিষয়গুলো তদন্তের জন্য সরকার তদন্ত কমিটি গঠন করে।

নয়া শতাব্দী/জিএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ