কক্সবাজারে ভুল চিকিৎসায় ফারজানা আক্তার (২৭) নামে এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে একটি বেসরকারি ক্লিনিকের চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। রোববার (৫ জুন) দুপুর ১২টার দিকে কক্সবাজার শহরের বির্তকিত ফুয়াদ আল খতিব হাসপাতালের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেন রোগীর স্বজনরা। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ।
এদিকে এই চাঞ্চল্যকর ঘটনা ধামাচাপা দিতে রোগীর স্বজনদের ডেকে ভয়ভীতি দেখানোর পাশাপাশি তিনদিন পর সমঝোতার আশ্বাস দেন বলে অভিযোগ করেন স্বজনরা। প্রসূতি ফারজানা আক্তার টেকনাফ পৌরসভার নাইক্ষ্যংপাড়া এলাকার মেয়ে এবং সেন্টমার্টিনের জিয়াউর রহমানের স্ত্রী।
নিহতের স্বামী জিয়াউর রহমান জানান, গত ৪ জুন রাত ১১টায় তার স্ত্রীকে ডাক্তার দেখাতে ফুয়াদ আল খতীব হাসপাতালে নিয়ে যান। আল্ট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্ট অনুযায়ী তার স্ত্রীর আরো ১-২সপ্তাহ সময় থাকলেও সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক ডাঃ ফাতিমা জান্নাত জানান, ‘তার স্ত্রীকে সিজার করতে হবে।’ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রাত সাড়ে ১১ টায় ফারজানাকে ফুয়াদ আল খতীব হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তখন ডাক্তার অস্ত্রোপচার করার পরামর্শ দেন, অন্যথায় সমস্যা হওয়ার ভয় দেখান।
পরে রাত ১২ টার দিকে টাকা যোগাড় করে হাসপাতালে গেলে তার স্ত্রীকে বেডে দেখতে না পেয়ে জানতে চাইলে একজন দায়িত্বরত স্টাফ জানান, ‘অস্ত্রোপচার করতে তার স্ত্রীকে ওটিতে ঢুকানো হয়েছে।’ প্রায় ৩ ঘণ্টা পর ডাক্তারে এসে জানান, ‘তার স্ত্রীর অবস্থা সংকটাপন্ন।’ তাকে তখন সদর হাসপাতালের আইসিউতে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে রেফার্ড করে নিথর দেহ বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
রোগীর স্বজন ও স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, ফুয়াদ আল খতীব হাসপাতালের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসা দিয়ে রোগী মৃত্যুর অভিযোগ এবারই প্রথম নয়। এর আগেও ভুল চিকিৎসার কারণে কয়েকজন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তবে সব ঘটনাই অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজ করে ফেলে। এই সব বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে কঠিন প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। পাশাপাশি ওই চিকিৎসকের লাইসেন্স বাতিলের দাবি করেন তারা। একই সঙ্গে ভুক্তভোগী পরিবারকে আইনি সহযোগিতার দাবি জানান সবাই।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ডাঃ ফাতেমা জান্নাত এর কাছে জানতে চাইলে বলেন, রোগীর ব্যাথা আরম্ভ হওয়ায় অপারেশন রুমে নিয়ে সিজার করলে প্রথমে রোগী সুস্থ ছিল। কিছুক্ষণ পর রোগী হার্ট ফেল করে পরবর্তীতে রক্তজমাট না বাধায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে দীর্ঘক্ষণ পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় তাকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হয়।
তবে অভিভাবক ছাড়া কেন রোগীকে ওটিতে নিয়ে যাওয়া হল সে প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেন নি তিনি।
ফুয়াদ আল খতীব হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুদ্দিন খালিদ বলেন, আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ বোর্ড গঠন করে চেষ্টা করেছি। হয়ত তার হায়াত এতটুকুই ছিল।
ফুয়াদ আল-খতীব হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সুজন জানান, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও অভিযুক্ত ডাক্তারসহ মৃত রোগীর অভিভাবকদের নিয়ে এক সাথে বসে বিষয়টি সমাধান করা হবে।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার (ওসি) তদন্ত মোঃ সেলিম উদ্দিন জানান, ফুয়াদ আল খতীব হাসপাতালে রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় এখনও রোগীর পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ আসেনি। তবে রোগীর চিকিৎসার সব কাগজপত্র দেখে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নয়াশতাব্দী/জেডআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ