রাজশাহী জেলায় পদ্মা নদীর অধিকাংশ এলাকাজুড়ে এখন শুধু ধু ধু বালুচর। পদ্মার চিরচেনা রূপ যেন হারাতে বসেছে। পদ্মায় জেলেদের নৌকা এখন অচল। তাই পেশা বদল করে অন্য পেশায় ঝুঁকছে জেলেরা।
মরা পদ্মায় জেলেদের নৌকাগুলো দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থেকে নষ্ট হতে চলেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, তীব্র তাপদাহ, ফারাক্কা ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উত্তরাঞ্চল মরুকরণের দিকে যাচ্ছে। কিন্ত প্রাচীনকাল থেকেই পদ্মা নদীতে মাছ আহরণকে ঘিরে গড়ে উঠে জেলে পল্লী। মাছ ধরাই ছিলো তাদের জীবন-জীবিকার উৎস। এখন চিত্র পুরোটাই ভিন্ন। জেলেদের মাছ সংগ্রহে পেট চলে না। বছরের অধিকাংশ সময়ই নদীতে পানি থাকে না। আবার বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি এলেও আগের মতো আর মাছ আসে না। দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষায় থেকে জেলেদের জীবনে নেমে আসে দুর্বিসহ। বাধ্য হয়ে পেশা বদল করে ক্ষুদ্র ব্যবসা কিংবা কৃষি কাজে মনোযোগ দিচ্ছেন তারা।
বাঁধের কারণে একদিকে প্রমত্তা পদ্মা ও মহানন্দা যেমন নাব্যতা হারিয়েছে। একসময়ের ভয়াল পদ্মা এখন পানিশূন্য। এসব কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দিন দিন নিচে নামছে। পদ্মায় পানি শুন্যের কারণে পরিবেশের উপরও ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। শুষ্ক মৌসুমে হস্তচালিত নুলকূপে পানি উঠছে না। নদীগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় পানির স্তর অনেক নিচে নেমে গেছে। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছে কৃষি ও পরিবেশ। শুষ্ক মৌসুমে ভারতে একতরফা পানি প্রত্যাহারের ফলে এই অঞ্চল অনেকটা মরুভূমিতে পরিণত হয়। আবার বর্ষায় ফারাক্কার সব গেট খুলে দিলে হঠাৎ ফুঁসে উঠা পদ্মা ভাসিয়ে নিয়ে যায় বাড়িঘর, ফসলসহ সবকিছু। আর অব্যাহত ভাঙনে বসতভিটা, ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় আস্তে আস্তে পাল্টে যাচ্ছে রাজশাহী ও চাঁপাইনাবগঞ্জ জেলার মানচিত্র।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. চৌধুরী সারওয়ার জাহান নয়া শতাব্দীকে জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে উত্তরাঞ্চলে তাপদাহ বেড়েই চলেছে। নদীগুলো নাব্যতা হারাচ্ছে। পরিবেশ বিপর্যয়ের ঘটছে। শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানি না থাকায় শহরের মধ্যে থেকে স্লুইস গেটের মাধ্যমে বর্জ্য ফেলার কারণে পদ্মা নদীর পানি দূষণ বাড়ছে। পদ্মায় জলজ জীবৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে। পদ্মা ও বারনইয়ের মাছসহ জলজ প্রাণী বহুলাংশে কমে গেছে। দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে তীব্র তাপদাহসহ বিভিন্ন পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। অচিরেই জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণসহ পদ্মা নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা খুবই প্রয়োজন। এতে জেলেদের জীবিকা টিকে থাকবে। রক্ষা পাবে পরিবেশ।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মিজানুর রহমান নয়া শতাব্দীকে বলেন, অতীতে দেখা গেছে, পদ্মা নদীতে সারাবছরই পানি থাকায় প্রচুর মাছ জন্মনিত। দেশে নদীতে মাছ সংকট থাকতো না। মাছের দামও কম ছিলো। কিন্তু এখন পদ্মায় পানি না থাকায় দীর্ঘ এলাকাজুড়ে চর পড়েছে। এতে পানিশুন্য পদ্মায় মাছ নেই। জেলেদের মুখেও হাসি নেই। বাধ্য হয়ে তারা পেশা বদল করছেন। নদীতে স্বল্প পানি থাকলেও পানি যেমন দূষিত হচ্ছে একইভাবে পরিবেশের উপর এর প্রভাব পড়ছে। নদীতে মাছ কমে যাচ্ছে। কীটনাশক বর্জ্যের কারণে পানি ও মাটি দূষণের ফলে জীব জগতে এর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। বিভিন্ন রোগ-বালাই ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ