ঢাকা, রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ কার্তিক ১৪৩১, ৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কাটাতারের ওপারে নয় এপারে ফিরতে চায় শিশু রমজান

প্রকাশনার সময়: ০৩ জুন ২০২২, ২১:২৮

ভারত থেকে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় বিএসএফ’র ছোঁড়া স্টান গ্রেনেডের আঘাতে আহত বাংলাদেশী শিশু রমজান আলী (১০) এখন ভারতের দিনহাটা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। বাবা-মা জানে না তাদের সন্তান বেঁচে আছে কিনা।

অপরদিকে আহত রমজান আলীও জানে না বাবা-মায়ের ভাগ্যে কি জুটেছে। এমন পরিস্থিতিতে দিশেহারা রমজান বাড়ি ফেরার আঁঁকুতি জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের কুচবিহার জেলার বিশিষ্ট সাংবাদিক খাজা মাইনুদ্দিন চিশতীর এক রিপোর্টে শিশু রমজান আলীর বিষয়টি সকলের নজরে আসে। তিনি জানান, গত ১৭ মে কুচবিহার জেলার দিনহাটা থানার ২ নম্বর ব্লক দিয়ে বাংলাদেশের খুলনা জেলার বাগেরহাটের রায়ান্দা শরণখোলার উপজেলার খোন্তাকাটা গ্রামের বাসিন্দা মুনির শরীফ, তার স্ত্রী ও পূত্র রমজান আলীসহ ১০/১৫জনের একটি দল কাজ শেষে অবৈধভাবে দালালের মাধ্যমে গোপনে বাংলাদেশে প্রবেশ করছিল।

এসময় বিএসএফ টহলদল বিষয়টি টের পেয়ে অবৈধ অভিবাসীদের উপর চড়াও হয়। এসময় দূর থেকে অভিবাসীদের উপর স্টান গ্রেনেড ছুঁড়ে মারা হয়। অকস্মাৎ বিস্ফোরকের উচ্চ শব্দ আর আলোর ঝরকানিতে দিকবিদিক ছোটাছুটি করতে থাকে অভিবাসী দল। এসময় স্টান গ্রেনেড রমজান আলীর শরীরের উপর এসে পরলে তার পাজরে ও পেটে আঘাত লাগে। সেখানেই লুটিয়ে পরে শিশুটি। অপরদিকে রমজান আলীর বাবা-মা ও অন্যান্যরা কাটাতারের বেড়া টপকিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। পরে বিএসএফ আহত শিশুটিকে উদ্ধার করে দিনহাটা হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়। বর্তমানে সে ভারতীয় পুলিশি হেফাজতে চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে রয়েছে।

এক তথ্যে স্টান গ্রেনেড সম্পর্কে বলা হয়েছে, এটি অ-প্রাণগাতি বিস্ফোরক ডিভাইস। যা আলোর ঝলকানি ও উচ্চ শব্দে বিস্ফোরিত হয় এবং মানুষকে সাময়িকভাবে বিভ্রান্ত করে।

শিশু রমজান আলী জানায়, বাবা-মায়ের সাথে কাজের সন্ধানে তারা ভারতে আসে। এরপর তার বাবা শরীফ মুনির বেঙ্গালুরুতে কাজ পেয়ে সেখানে পরিবারসহ অবস্থান নেয়। দীর্ঘদিন ভারতে অবস্থানের পর গত ১৭ মে ঝড়-বৃষ্টির রাতে দিনহাটা থানা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় রমজান আহত অবস্থায় বিএসএফ’র কাছে ধরা পরে। এতদিন বাবা-মাকে দেখতে না পেয়ে হাসপাতালের বেডে কান্নায় ভেঙ্গে পরে শিশুটি। সে জানে না তার বাবা-মা কোথায় আছে। আর বাবা-মা জানে না তাদের ছেলে বেঁচে আছে কিনা।

পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন শিশুটির মানবিক খবর শুনে নড়েচড়ে বসেছে গণমাধ্যমকর্মীসহ মানবাধিকার সংগঠনগুলো। তারা রমজান আলীকে বাংলাদেশে ফেরৎ পাঠাতে নানা উদ্যোগ গ্রহন করলেও শিশু রমজানের বাড়ী ফেরাটা অনিশ্চিতার মধ্যে রয়েছে।

এ ব্যাপারে কুড়িগ্রামের বিশিষ্ট আইনজীবী, মানবাধিকার কর্মী ও বর্ডার ভিকটিমস রেসকিউ লিগ্যাল এসিসট্যান্স ফোরামের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের আহবায়ক অ্যাডভোকেট এস.এম আব্রাহাম লিংকন জানান, আমরা উভয় পক্ষ শিশুটিকে দেশে ফেরাতে ভারত সরকার, দিল্লী, কলকাতা ও আসামস্থ বাংলাদেশের সহকারি হাইকমিশনারের দ্বারস্থ হয়েছি। এছাড়াও পশ্চিম বাংলার মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ মাসুম, ভারতীয় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনসহ উভয় দেশের গণমাধ্যমের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। মানবিক বিষয় বিবেচনা করে অবুঝ শিশুটিকে জেলে না রেখে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেয়া উচিত।

নয়া শতাব্দী/জেআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ