ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় এনআইডি পাচ্ছে রোহিঙ্গারা

প্রকাশনার সময়: ৩১ মে ২০২২, ২০:১৭
অভিযুক্ত দুই জনপ্রতিনিধি

কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) পেতে ও ভোটার হতে অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন অসাধু জনপ্রতিনিধিরা। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ওয়ার্ড কাউন্সিলর, ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সুপারিশে জন্মনিবন্ধন সনদসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাচ্ছেন তারা। সেই সনদে রোহিঙ্গারা জাতীয় পরিচয়পত্র বানানোর পাশাপাশি তা প্রদর্শন করে পেয়ে যাচ্ছে পাসপোর্টও।

যেখানে প্রকৃত বাংলাদেশী জনগণ ভোটার হতে হিমশিম খাচ্ছে; প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করতে ভোগান্তি পোহায় দিনের পর দিন, সেখানে রোহিঙ্গারা কীভাবে ভোটার হচ্ছে? প্রশ্ন স্থানীয় বাসিন্দাদের। রোহিঙ্গাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও ইন্ধনদাতাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবি তুলেছেন সচেতন মহল।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মঙ্গলবার (৩১ মে) দুপুরে কক্সবাজার সদর নির্বাচন অফিসে ভোটার তালিকাভুক্তির ছবি তুলতে গিয়েই আবদুল মানিক নামক একজন রোহিঙ্গার আবেদন ফরম (নং- ১১০১৫৫০৮৬, ভোটার এলাকা- ১০৮৭) জব্দ করেছেন সদর নির্বাচন অফিসার শিমুল শর্মা। যদিওবা সে নূর হোসেন নামে ফরমটি পূরণ করেছে। অভিযোগ উঠেছে, তার এই কাজে বিপুল টাকার বিনিময়ে সনদসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পেতে সহায়তায় করেছেন ঈদগাঁও উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কালাম ও ইউপি সদস্য শাহাব উদ্দিন।

অভিযুক্ত মানিক ইসলামপুর ৬ নং ওয়ার্ডের ভিলেজার পাড়ার বাসিন্দা মরহুম শামসুল আলম প্রকাশ রোহিঙ্গা শামসুর ছেলে। পেশায় সিএনজি চালক। তার পরিবারের পাঁচ ভাই ১ বোনের সবাই রোহিঙ্গা।

সূত্র জানায়, ওই এলাকায় রোহিঙ্গাদের ভোটার করতে এই দুই জনপ্রতিনিধিসহ একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট জড়িত রয়েছে। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের আত্মীয় পরিচয়ে শনাক্ত করেন তারা। জমা দেন স্থানীয় চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরে নাগরিকত্ব সনদ। জনপ্রতিনিধিরা তাদের প্রকৃত নাগরিকের স্বীকৃতি দেয়ার কারণে অনেক ক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। আবার অনেকে কক্সবাজার শহরসহ আশেপাশে সুবিধা করতে না পেরে ওইসব এলাকায় গিয়ে একই কায়দায় অর্থাৎ জনপ্রতিনিধি ও দালাল সিন্ডিকেটের সদস্যদের সহযোগিতা নিয়ে ভোটার হচ্ছে। জন্মসনদ, নাগরিক সনদ, বাবা-মায়ের এনআইডি, বাসার বিভিন্ন বিলের কপি জমা দিতে হয় ভোটার হওয়ার ক্ষেত্রে। ইউপি সদস্য শাহাব উদ্দিন এই সিন্ডিকেটটির প্রধান হিসেবে এসব কাগজপত্র তৈরি করার ক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের সহায়তা করছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় ইউপি সদস্য শাহাব উদ্দিন অভিযুক্ত রোহিঙ্গার পক্ষ নিয়ে বলেন, ‘তার বাবা-মায়ের এনআইডি আছে তাই তাকে রোহিঙ্গা বলা যাবে না।’ এনআইডি থাকলেও তারা রোহিঙ্গা কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তাদের কার্ড সরকার বাতিল করুক তারপর তাদের রোহিঙ্গা হিসেবে গণ্য করবো।’ পিতা-মাতার আইডি কার্ড থাকলে কাউকে স্বাক্ষরসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা করতে তিনি বাধ্য বলে দাবি করেন এই জনপ্রতিনিধি।

একই সুরে কথা বলেন ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম। প্রথমে তিনি ওই রোহিঙ্গার পিতা-মাতা বাংলাদেশি বলে দাবি করলেও পরে তিনি বলেন, প্রতিদিন কয়েক হাজার স্বাক্ষর করি তবে জব্দ ফরমের স্বাক্ষর আমার কিনা যাচাই-বাছাই না করা পর্যন্ত বলতে পারবেন না বলে প্রতিবেদককে জানান তিনি।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সদর নির্বাচন অফিসার শিমুল শর্মা। তিনি বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথে ফরমটি জব্দ করা হয়েছে। বিস্তারিত তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ তবে, জনপ্রতিনিধিসহ প্রয়োজনীয় সবার স্বাক্ষর ও এতগুলো কাগজপত্র কীভাবে জোগাড় করল, তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন এই নির্বাচন কর্মকর্তা।

নয়া শতাব্দী/জেআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ