প্রতিদিন সকাল থেকে অধিক রাত পর্যন্ত মাইকে বিভিন্ন ধরনের প্রচার চালানো হয়। প্রতিকারের জন্য আইন থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। প্রত্যক্ষভাবে শব্দ দূষণ তেমন কোন ক্ষতিকর মনে না হলেও এটি মানুষের জন্য ভয়ানক ক্ষতিকর। শব্দ দূষণ এক নীরব ঘাতক।
জানা গেছে, কেশবপুর পৌর শহরসহ উপজেলা ১১ ইউনিয়নে প্রতিদিন সকাল থেকে অধিক রাত পর্যন্ত ৫/৬ টি মাইকে বিভিন্ন ধরনের প্রচার চালানো হয়। শব্দ দূষণে সবচেয়ে বিপাকে পড়ছে স্কুল -কলেজের ছাত্র- ছাত্রীরা, স্কুল -কলেজে ভর্তি, নিয়োগ, নিলাম, প্রতিষ্টানের উদ্বোধন, সভা-সমাবেশ বিভিন্ন রাজনৈতিক সামাজিক ধর্মীর প্রতিষ্ঠান সহ হরেক রকমের মাইকিং হচেছ প্রতিদিন। এর মধ্যে বিশেষ করে রোগীদের আকৃষ্ট করার জন্য চিকিৎসকের নামে প্রচার, ওয়াজ মাহফিলের প্রচার, ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে বয়লার মুরগি, মাছ, মাংশ বিক্রিসহ মাইকে বিভিন্ন ধরনের প্রচার চালানো হয়।
এছাড়া ডিজেল ও পেট্রোলচালিত ইঞ্জিন বাস, ট্রাক, লরি, প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল, টেম্পু, অটো রিক্সা, অটো গাড়ী, টমটম ও থ্রিহুইলারের হাইড্রোলিক হর্ন ও ডিজেল চালিত জেনারেটরের মাধ্যমে শব্দ দূষণ হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি মাইকে প্রচারণা চালানো হচ্ছে পৌর শহরে। এতে পৌর শহরে শব্দ দূষণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
হাইড্রোলিক হর্ন ও মাইকের শব্দ মানুষের কানের জন্য যন্ত্রনাদায়ক। শব্দ দূষণের কারণে মানুষের মানসিক ও শারীরিক অসুস্থতার সৃষ্টি করে। অতিরিক্ত শব্দ উচ্চ রক্তচাপ, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন, মাথা ধরা, বদহজম, পেপটিক আলসার এবং অনিদ্রার কারণ বলে জানান চিকিৎসকরা।
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫-এর ক্ষমতাবলে শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০০৬ উল্লেখ আছে, সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ শব্দসীমা ৫৫ ডেসিবেল এবং রাত ৯টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত ৪৫ ডেসিবেল। একইভাবে নীরব এলাকায় দিনে ৫০ ও রাতে ৪০ ডেসিবেল, আবাসিক এলাকায় দিনে ৫৫ ও রাতে ৪৫ ডেসিবেল, মিশ্র এলাকায় দিনে ৬০ ও রাতে ৫০ ডেসিবেল, বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে ৭০ ও রাতে ৬০ ডেসিবেল এবং শিল্প এলাকায় দিনে ৭৫ ও রাতে ৭০ ডেসিবেল সর্বোচ্চ শব্দসীমা নির্ধারণ করা হয়।
এর ওপরে শব্দ সৃষ্টি করাকে দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। বিধিমালায় আরও উল্লেখ আছে, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকার নির্ধারিত কিছু প্রতিষ্ঠান থেকে ১০০ মিটার পর্যন্ত নীরব এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই সকল জায়গায় মোটর গাড়ির হর্ন বাজানো বা মাইকিং করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এ আইন অমান্য করলে প্রথমবার অপরাধের জন্য এক মাস কারাদণ্ড বা অনধিক পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড এবং পরবর্তী অপরাধের জন্য ছয় মাস কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে। এ সকল নিয়ম নীতি ও আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রতিদিন কেশবপুর পৌর শহরে মাইকে প্রচার ও বিভিন্ন গাড়ীর হাইড্রোলিক হর্ন অহরহ বেজে যাচ্ছে।
কেশবপুর নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব আজিজুর রহমান বলেন, পৌর শহরে অহরহ মাইকে বিভিন্ন ধরণের প্রচারণা চালাচ্ছে তাতে বসবাস করা দুরূহ। শব্দ দূষণের আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পৌর শহরের অতিরিক্ত মাইকিং হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ দূষণ রোধে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। প্রশাসনের কাছে শব্দ দূষণ রোধে; প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাই।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ আলমগীর বলেন, শব্দ দূষণের ফলে কানের টিস্যুগুলো আস্তে আস্তে বিকল হয়ে পড়ে তখন সে স্বাভাবিক শব্দ শুনতে পায় না। শিশুদের মধ্যে মানসিক ভীতির সৃষ্টি হয়। মাত্রাতিরিক্ত শব্দের কারণে মানুষের কারোনারি হার্ট ডিজিজ ,কণ্ঠনালির প্রদাহ, আলসার ও মস্তিকের রোগ হতে পারে।
কেশবপুর পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলাম মোড়ল বলেন, শব্দ দূষণ রোধে আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছি কিন্তু রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি আরো বলেন, কঠোর আইন প্রয়োগ করে শব্দ দূষণ রোধ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম এম আরাফাত হোসেন বলেন, শব্দ দূষণ মারাত্মক অন্যায়। যারা শব্দ দূষণের সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা শুরু হয়েছে। অনুমতি না নিয়ে যারা প্রচার প্রচারণা চালাবে তাদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
নয়াশতাব্দী/জেডআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ