ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশেই সড়ক ও জনপদ বিভাগের (সওজ) নির্দেশনা বোর্ড। নির্দেশনায় স্পষ্ট লেখা রয়েছে মহাসড়কের ১০০ গজের ভেতর কোনো বাজার থাকবে না। অথচ প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে গড়ে উঠেছে এ অবৈধ বাজার। এছাড়াও ব্যাটারী এবং সিএনজি চালিত তিন চাকার যান।
ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রতিদিন মহাসড়কে বসছে সবজি ও ফলের বাজার। এতে নোংরা হচ্ছে পরিবেশ। চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে মানুষ ও যানবাহন চলাচল। ফুটপাতসহ সড়কে নিত্যদিন সবজির হাট বসায় সড়ক সংকুচিত হয়ে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট। ফলে ব্যাপক দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে গাড়ির চালক-যাত্রী, পথচারী ও শিক্ষার্থীদের। এতে একদিকে যেমন দুর্ভোগ অপরদিকে দূরপাল্লার বাসসহ অন্যান্য যানবাহন চলতে না পারায় সড়কে তৈরি হচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তীব্র জট। নিয়মিতই ত্রিশাল পৌর এলাকার সরকারি নজরুল কলেজের সামনের বাসস্ট্যান্ডে এমন দৃশ্যের দেখা মেলে।
মহাসড়ক দখলে নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাড়িয়ে যাত্রী উঠাচ্ছে তিন চাকার যানবাহন। এতে নিয়মিতই দীর্ঘ যানজট লেগেই থাকছে ওই এলাকায়। ফলে দুর্ভোগের মাত্রা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। পাশাপাশি দুর্ঘটনারও আশঙ্কা বাড়ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এই অস্থায়ী বাজারের কোনো অনুমোদন নেই। ইজারাবিহীন এই বাজার কাদের মদদে চলে এবং প্রশাসন দেখেও কেনো ব্যবস্থা নেয় না তা চলাচলকারীদের মনে বড় একটি প্রশ্ন। বিকেল থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত কাঁচাবাজার এতোটায় সম্প্রসারিত থাকে যে যানবাহনতো দূরের কথা, পথচারীদের পায়ে হেঁটে চলাও দুষ্কর হয়ে পড়ে। ওভার ব্রিজে উঠানামার স্থানেই এই বাজার বসায় যাত্রীদের ওভারব্রিজ ব্যবহারও প্রায় বন্ধের পথে।
বাজার করতে আসা স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, সপ্তাহের প্রতিদিনেই এখানে দোকানপাট বসানো হয়। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক হওয়ায় এই মহাসড়কে অতিমাত্রায় দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল করে। আবার অবৈধ তিন চাকার যানবাহনও যাত্রী ওঠায় এখান থেকে। এ কারণে পায়ে হেঁটে চলতেও হিমশিম খেতে হয়। এভাবে বাজার বসানোয় যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। এর স্থায়ী সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
পথচারী মো: আতিকুল ইসলাম বলেন, এই মহাসড়কের ওপর দোকানপাট বসার কারণে দীর্ঘ যানজট তৈরি হচ্ছে। এ কারণে আমাদের মতো পথচারীদের চলাচল করা কষ্টকর হয়ে উঠেছে। তারপরেও প্রয়োজনের তাগিদে চলাচলতো করতেই হয়। বাস চালক মানিক মিয়া বলেন, তরিতরকারির দোকানপাট ও ফলের দোকান নিয়ে মহাসড়কের ওপর বসার কারণে সড়ক সরু হয়ে যায়। এতে চরম যানজট তৈরি হয়। সড়কের পাশের ওপর থেকে এসব দোকানপাট সরিয়ে দিলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
ত্রিশাল উপজেলার নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) সাবেক সভাপতি ইমরান হাসান বুলবুল বলেন, মহাসড়ক দখল করে এই অবৈধ বাজার উচ্ছেদ অভিযানে তৎপরতা নেই প্রশাসনের। মূলত প্রশাসনের ঢিলেঢালা পদক্ষেপ দেখা গেছে এ বাজার নিয়ে। এ অবৈধ বাজার স্থাপনা উচ্ছেদে আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এ বিষয়ে ত্রিশাল বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা সরকার বলেন, আমাদের নির্দিষ্ট কাঁচাবাজার থাকা সত্ত্বেও লোকজন কে বা কাদের নির্দেশনায় মহাসড়কের ওপর তরিতরকারির দোকানপাটসহ অন্যান্য দোকান নিয়ে বসে, তা আমার ঠিক জানা নাই। তবে উপজেলা প্রশাসন যদি মহাসড়কের দুপাশ থেকে এসব দোকানপাট উচ্ছেদের উদ্যোগ নেয়, তাহলে তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।
এ বিষয়ে উপজেলার সহকারী কমিশনার(ভূমি) হাসান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জানান, আমরা দুবার মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছি। প্রথমবার অবৈধ ব্যবসায়ীদের নোটিশের মাধ্যমে সতর্ক করেছি। দ্বিতীয়বার ছয়টি অবৈধ দোকানকে ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তার পরেও দোকানদাররা রোডস এন্ড হাইওয়ের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে রয়েছে। তিনি আরও জানান, আমরা দ্রুত রোডস এন্ড হাইওয়ের সাথে সমন্বয় করে বৃহৎ একটি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবো। এ বিষয়ে ময়মনসিংহ সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে এটা আমাদের চলমান প্রক্রিয়া। উচ্ছেদের জন্য আমাদের ম্যাজিস্ট্রেট নেই। ম্যাজিস্ট্রেটের জন্য আবেদন করা হয়েছে। শিগগিরই অভিযান পরিচালনা করা হবে।
প্রসঙ্গত গেল রমজানের শুরুতে আংশিক অস্থায়ী কাঁচাবাজার উচ্ছেদ করা হলে অল্প সময়ের জন্য হাট বসা বন্ধ ছিল। তার পর থেকে আবার সেই পুরোনো চিত্র।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ