ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

মধুমতির ভাঙন ঝুঁকিতে ‘স্বপ্ননগর’

প্রকাশনার সময়: ২১ মে ২০২২, ১৫:২৫

মধুমতি নদী ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে দেশের অন্যতম বৃহৎ আশ্রয়ণ প্রকল্প ‘স্বপ্ননগর’। মুজিববর্ষে গড়ে তোলা ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলায় মধুমতি নদীর ভাঙনে আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রায় ৩’শ ঘর হুমকির মুখে পড়েছে। গত তিন বছরে স্থানীয় চারটি ইউনিয়নের ৬’শ পরিবারের ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে মধুমতি নদীগর্ভে। বর্তমানে সেখানকার প্রায় ১ হাজার পরিবার হুমকির মুখে রয়েছে। নদী তীর রক্ষায় পদক্ষেপ না নিলে এসব ঘর দ্রুতই নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন নদী পাড়ের বাসিন্দারা। নদী তীর রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিতে তারা কয়েকবার মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করলেও কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থাপনা ঝুঁকিতে রয়েছে। মধুমতির ভাঙনে বাজড়া গ্রামের পুরনো একটি মসজিদ বিলীন হয়ে গেছে। গোপালপুর ইউনিয়নের সবচেয়ে বড় গ্রাম ছিলো খোলাবাড়িয়া। এখন ওই পুরো গ্রাম মধুমতি নদীর গর্ভে চলে গেছে।

স্থানীয়রা জানান, আলফাডাঙ্গার গোপালপুর ইউনিয়নের ছাতিয়াগাতি, দিগনগর, খোলাবাড়িয়া, কাতলাসুর ও পগনবেগ এই পাঁচটি গ্রামে মধুমতি নদীর ভাঙনের মাত্রা তীব্র আকার ধারণ করেছে সম্প্রতি। এছাড়া আশেপাশের বাজড়া, বাঁশতলা, দক্ষিণ চর নারানদিয়া, পশ্চিম চর নারানদিয়া ও পাড়া গ্রামসহ পার্শ্ববর্তী পাচুরিয়া, টগরবন্দ ও বানা ইউনিয়নেও মধুমতি নদীর ভাঙন চলছে। নদীর পাড় ভেঙ্গে বিলীন হচ্ছে একের পর এক বসতভিটা, ফসলি জমি, স্কুল, মসজিদসহ নানা স্থাপনা।

আলফাডাঙ্গার গোপালপুর ইউনিয়নের চরকাতলাসুর গ্রামে ৫৩ একর জমির ওপর নগরের সব সুবিধা নিয়ে ‘স্বপ্ননগর’ নামে আবাসন এলাকা নির্মাণ করা হয়েছে। যাদের জমি নেই, ঘর নেই; এমন ২শ ৮৬ পরিবারের ঠাঁই হয়েছে স্বপ্ননগরে। ঘর নির্মাণের পাশাপাশি তৈরি করা হয়েছে মসজিদ, মন্দির, বিদ্যালয়, হাট, খেলার মাঠ, ঈদগাহ, কমিউনিটি ক্লিনিক, শিশুপার্ক, ইকোপার্ক ও সামাজিক বনায়ন। এছাড়া উপকারভোগীদের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এসকল পরিবারকে জমিসহ ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর। দুই বছর না যেতেই এসব ঘরের বাসিন্দারা এখন নদী ভাঙনে ঘর হারানো আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা খালেদা আক্তার জানান, প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে তারা মাথা গোজার ঠাই হিসেবে একটু আশ্রয় পেয়েছিলেন। এখন এই আশ্রয় হারালে তাদের আবার পথে পথেই থাকতে হবে।

স্বপ্ননগরের বাসিন্দা রাশেদ হোসেন বলেন, অন্যের বাড়িতে স্ত্রী, সন্তান নিয়ে থাকতাম। প্রধানমন্ত্রী আমাদের ঘর দিয়েছে, সেই ঘরে শান্তিতে বসবাস করছি। কিন্তু নদী ভাঙনে যদি এই ঘর বিলীন হয়ে যায় তাহলে আবার আশ্রয়হীন হয়ে যাবো। প্রধানমন্ত্রীর নিকট আকুল আবেদন আমাদের মাথা গোজার ঠাই দিয়েছেন, এই ঘর যাতে নদীতে ভেঙে না যায় সে ব্যবস্থা নিবেন।

ছাতিয়াগাতি গ্রামের মুকুল হোসেন বিশা মিয়া বলেন, পৈত্রিকসূত্রে তাদের প্রায় ৩০ একরের বেশী জমি ছিলো মধুমতির তীরে। এখন প্রায় সবই শেষ শুধু ভিটেটুকু বাদে। তাও ভাঙনের মুখে পড়েছে। বাপদাদার কবর ও মসজিদটাও নদীতে তলিয়ে যাবে যদি ভাঙনরোধ করা না যায়। আলফাডাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান এ. কে. এম জাহিদুল ইসলাম বলেন, মধুমতির এই ভাঙন নিয়ে বহুবার জেলার ও উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সভায় বলা হয়েছে। নদী শাসন না করায় এখন প্রধানমন্ত্রীর দেয়া মুজিব বর্ষের উপহার জেলার সবচেয়ে বড় আশ্রয়ণ প্রকল্প স্বপ্ননগর হুমকীর মুখে।

তিনি আরো বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য মনজুর হোসেন বুলবুল এবং ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার একাধিকবার ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শনও করে গেছেন। কিন্তু ভাঙনরোধে সমন্বিত কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এভাবে ভাঙতে থাকলে অল্প সময়ের মধ্যে আরো প্রায় হাজারখানেক পরিবারের ঘরবাড়ি নদীতে তলিয়ে যাবে। বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে এটিই প্রত্যাশা।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, বিষয়টি আমরা পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভাতেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ওই এলাকার আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ অন্যান্য সম্পদের যাতে আর ক্ষতি না হয় সেজন্য আবারো পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে ব্যাবস্থা গ্রহণের সুপারিশ জানাবো।

নয়া শতাব্দী/জেআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ