পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার প্রাণকেন্দ্র বাহেরচর বাজার। যার উন্নতি সাধিত হয়েছিল পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া গহিনখালী খাল ঘিরে। এই খালকে ঘিরেই প্রাচীন সভ্যতার ইতিহাসের মতো গড়ে ওঠে ছিল রাঙ্গাবালীর জনপদ। কিন্তু কালের বিবর্তনে ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলদারিত্বের কারণে নাব্যতা সংকটে ভুগছে এই খালটি। দখল করে গড়ে তোলা হচ্ছে পাকা ভবনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ঘর-বাড়ি। এতে খালটি হারাচ্ছে তার নিজস্ব শ্রী।
জানা যায়, একসময় প্রবল স্রোতে মুখরিত ছিল গহিনখালী খাল। প্রস্থ ও গভীরতা ছিল পরিপূর্ণ বটে। ফলে নির্বিঘ্নে যাতায়াত করত বড় বড় যাত্রীবাহী লঞ্চ এবং মালামাল বহনকারী কার্গো। বর্তমানে লঞ্চ-কার্গো তো দূরের কথা, ইঞ্জিন চালিত ছোট-বড় ট্রলার চলাচলেও দেখা দিয়েছে বিঘ্নতা। যার কারণে নৌপথ নির্ভর এই অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যের নানান কর্মযজ্ঞ থমকে যাচ্ছে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে অর্থনৈতিক উন্নয়নের বড় এই অংশ।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নৌপথে উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগ রক্ষায় একমাত্র নির্ভরযোগ্য মাধ্যম রাঙ্গাবালী সদর ও ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া এই খালটি। যার গুরুত্ব ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অপরিসীম ও অপূরণীয়। যা আজ ক্ষমতাবান লোকদের পৃষ্ঠপোষকতায় অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের মাধ্যমে দখল হচ্ছে। দখলের এ পর্যায় খালটি এখন নৌযান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে স্থানীয়দের দাবি, খাল দখলের মহোৎসব নামক নাব্যতা সংকটের হাত থেকে খালকে রক্ষা করতে এবং সরকারি নির্দেশে অনুযায়ী কাঙ্খিত ব্যবস্থা নিতে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রশাসনিক নজরদারিতার অভাবে খালটির দক্ষিণ পাড়ে বাহেরচর এলাকায় অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের মহোৎসবে মেতে উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। দখলকারীরা ভাটার সময় খালের তীরে কাঠ-বাঁশ দিয়ে পার্শ্বদেয়াল নির্মাণ করেছেন। পরবর্তীতে সেখানে ইট-বালু ফেলে তীর ভরাট করছেন এবং সেখানে নিজেদের ইচ্ছা মতো অবৈধ স্থাপনা গড়ে তুলেছেন। যার কারণেই নদী তার নাব্যতা হারাচ্ছেন এবং এই অঞ্চলের নৌপথ নির্ভর ব্যবসা-বাণিজ্য হুমকির মুখে ধাবিত হচ্ছেন।
এ বিষয়ে কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, জলাশয় খাস হলে সেটি জেলা প্রশাসনের দায়িত্বে। যদিও এটি পানি সংক্রান্ত ব্যাপার তাই এটিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডেরও দায়িত্ব রয়েছে। এখানে প্রথমত, খালটাকে জেলা প্রশাসক মহোদয় উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মহোদয়কে ভিজিট করতে বললেন, অতঃপর তিনি ভিজিট করবেন এবং রিপোর্ট দিবেন। এরপর জেলা প্রশাসক মহোদয় আমাদেরকে; তথা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অথবা উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মহোদয়কে দায়িত্ব দিবেন। আমাদেরকে (পানি উন্নয়ন বোর্ডকে) দায়িত্ব দিলে আমরা ব্যবস্থা নিবো।
এ বিষয়ে রাঙ্গাবালী উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মো. মাশফাকুর রহমান বলেন, এই খালটিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু জায়গা রয়েছে ও কিছু খাস জমি রয়েছে। জেলা প্রশাসক মহোদয় আমাকে অলরেডি বলেছেন, এই খালের দখলদারদের উচ্ছেদ করার কথা। জেলা প্রশাসক মহোদয় একজন অফিসারকেও পাঠিয়েছিলেন, তিনি এসে ভিজিটও করে গিয়েছেন। এসব দখলদারদের উচ্ছেদে আমরা খুব শিগগিরই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেবো।
নয়াশতাব্দী/জেডআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ