অপেক্ষার প্রহর শেষ। বিধি-নিষেধ কেটে মুক্ত বাজারে উঠতে শুরু করেছে প্রতিক্ষিত রাজশাহীর আম। এতোদিন অলি-গলিতে ভ্যানে করে পাকা আম বিক্রি হলেও শুক্রবার থেকে প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সময় মেনে বাগান থেকে আম সংগ্রহের উৎসব শুরু হয়েছে।
শুক্রবার (১৩ মে) প্রথমদিন স্থানীয় গুটি জাতের আম উঠেছে বাজারে। ফলে ব্যবসায়ীদের আর বসে থাকার সময় নেই। দেশব্যাপী কুড়িয়ার সার্ভিস ও অনলাইনে অর্ডার মোতাবেক ব্যবসা জমে উঠবে।
কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী- এবার প্রতিকেজি আমের গড় মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪২ টাকা। সেই হিসেবে চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে ৯০১ কোটি ৬৪ লাখ ২ হাজার ৮০ টাকার আমের ব্যবসা জমবে বলে জানায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। প্রতি বছরের ন্যায় এবারো আমকে ঘিরে রাজশাহীতে জমজমাট বাণিজ্য চলবে। দেশের অর্থনীতি চাঙা হবে। অসময়ে আম সংগ্রহ বন্ধ রাখতে গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় রাজশাহীতে প্রশাসন আম পাড়ার সময় বেধে দিচ্ছেন। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শুক্রবার থেকে গুটি আম পারছেন চাষিরা।
রাজশাহী জেলা প্রশাসনের নির্দেশনানুসারে ১৩ মে থেকে মৌসুম চলবে ২০ আগস্ট পর্যন্ত। রাজশাহীর সবচেয়ে বড় আমের হাট বানেশ্বর বাজারে এখন চাষিরা গাছ থেকে আম পেড়ে বাজারে তুলছেন। সেখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা এসে আম ক্রয় করছেন। রাজশাহীর আম যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন শহরে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, গত বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে আমের উৎপাদন কম। প্রকৃতিগতভাবেই চলতি মৌসুম আমের জন্য অফ সিজন হওয়ায় রাজশাহীর আম বাগানগুলোতে মুকুল কম হয়েছে। তাই আমের উৎপাদন কিছুটা কম। তবে গত বছর আমের উৎপাদন বেশি হলেও করোনা মহামারী ও আমের ভরা মৌসুমে রমজান মাসের কারণে আমচাষিরা ন্যায্য মূল্য পায়নি। এবার শুরুতেই আমের মূূল্য চড়া।
অধিদপ্তর সূত্রে আরো জানা গেছে, চলতি বছরের তুলনায় গত বছর কম জমিতে (১৭ হাজার ৯ শত ৪৩ হেক্টর) আমের চাষ হয়েছিল। কিন্তু গত মৌসুমে উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ১৭ হাজার ১২৮.২৪ মেট্রিকটন আম। গড়ে ৪০ টাকা কেজি দরে আম কেনা-বেচা নির্ধারণ করেছিল কৃষি অধিদপ্তর। সেই হিসেবে গত মৌসুমে ৮০৬ কোটি ৯ লাখ ৯৩ হাজার টাকার আমের ব্যবসা হয়েছে। এবার তুলনামূলক বেশি জমিতে আমের চাষ হয়েছে। কিন্তু আমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৭৬.২৪ মেট্রিকটন। ফরে এবার প্রতিকেজি আমের গড় মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪২ টাকা। এতে চলতি মৌসুমে ৯০১ কোটি ৬৪ লাখ ২ হাজার ৮০ টাকার আমের ব্যবসা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রাজশাহীর ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মুহাম্মদ শরিফুল হক বৃহস্পতিবার ম্যাংগো ক্যালেন্ডার ঘোষণা করেন। নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী আগামী সপ্তাহে দ্বিতীয় দফায় পাড়া হবে গোপালভোগ জাতের আম । এরপর আমের জাত ভেদে নির্ধারিত সাতটি ধাপে আগস্ট পর্যন্ত সংগ্রহ করা হবে লক্ষ্মণভোগ, রাণীপছন্দ, খিরশাপাত, ল্যাংড়া, আম্রপালি, ফজলিসহ অন্যান্য জনপ্রিয় জাতের আম। এ সময়ের মধ্যে কেউ নিয়মের ব্যত্যয় করে আম সংগ্রহ করলে প্রশাসন সেই বাগানি বা ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ