ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কক্সবাজারে শিশু হত্যা মামলায় ৬ জনের মৃত্যুদণ্ড

প্রকাশনার সময়: ১১ মে ২০২২, ১৮:১৮ | আপডেট: ১১ মে ২০২২, ১৯:১৪

কক্সবাজারের টেকনাফের চাঞ্চল্যকর মো: আলী উল্লাহ আলো (৭) হত্যা মামলায় ৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

বুধবার (১১ মে) জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল বিকেলে এ রায় প্রদান করেন।

রায়ে আসামি মুহিবুল্লাহ ও মো: দিদার মিয়ার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় বিজ্ঞ বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল তাদের বেকসুর খালাস প্রদান করেছেন।

যাদেরকে ফাঁসি দেওয়ার আদেশ দেওয়া আসামিরা হলেন- মো: সুমন আলী, ইয়াছিন প্রকাশ রায়হান, মো: ইয়াকুব, মো: ইসহাক প্রকাশ কালু, নজরুল ইসলাম ও রোহিঙ্গা ছৈয়দুল আমিন প্রকাশ প্রকাশ লম্বাইয়া। রায়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া আসামির প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ডও দেওয়া হয়েছে।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ হলো: ২০১১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৬ টার দিকে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের গোদার বিল এলাকার রাজনীতিবিদ ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ও ফারজানা পারভীন সুইটি’র ৭ বছরের শিশু পুত্র মো: আলী উল্লাহ আলোকে মোহাম্মদ আবদুল্লাহ’র কর্মচারী মো: সুমন আলী বাড়ির সামনের কাচারি ঘরে অপহরণ করে মুক্তিপন দাবি করার উদ্দেশ্যে ডেকে নিয়ে যায়। পরে পাখির বাসা দেখানোর কথা বলে মো: আলী উল্লাহ আলোকে মোহাম্মদ আবদুল্লাহ’র কাচারী ঘরের সিলিং উপর তুলে তার হাত পা বেঁধে মুখে জোর করে কচটেপ লাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে।

এসময় মো: আলী উল্লাহ আলো শোর চিৎকার করলে আসামি মো: সুমন আলী ও অন্যান্যরা মো: আলী উল্লাহ আলোকে অপহরণ করার বিষয় বাড়ির লোকজন হয়ত জানতে পরেছে মনে করে। মো: আলী উল্লাহ আলো জীবিত থাকলে ঘটনা ফাঁস হতে পারে আশঙ্কায় মো: আলী উল্লাহ আলীকে আসামিরা সিলিং উপর জবাই করে নির্মমভাবে হত্যা করে।

এঘটনায় খুন হওয়া বিজিবি স্কুলের প্রথম শ্রেণির ছাত্র মো: আলী উল্লাহ আলো’র পিতা মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বাদী হয়ে ২০১১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৪/৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি দিয়ে টেকনাফ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

যার টেকনাফ থানা মামলা নম্বর-১৩/২০১১ ইংরেজি, জিআর মামলা নম্বর ৩৭০/২০১১ (টেকনাফ) এবং এসটি মামলা নম্বর-২০৮২/২০১৮ ইংরেজি।

মামলাটি পর্যায়ক্রমে টেকনাফ থানার এসআই মাহবুবুর রহমান, এসআই হারুনর রশীদ এবং টেকনাফ থানার ওসি (তদন্ত) স্বপন কুমার মজুমদার তদন্ত করে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন।

এ চার্জশিটের বিরুদ্ধে বাদী মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ২০১২ সালের ৩০ ডিসেম্বর আদালতে নারাজী আবেদন করলে বিজ্ঞ আদালত বাদীর নারাজীর আবেদন গ্রহণ করেন এবং ২০১৪ সালের ৪ মার্চ মামলাটি সিআইডিকে অধিকতর তদন্তের জন্য নির্দেশ দেন।

আদালতের নির্দেশে পর্যায়ক্রমে সিআইডি’র চট্টগ্রামের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার হ্লা চিং প্রু, সহকারী পুলিশ সুপার এস.এম সাহাব উদ্দিন আহমদ এবং সর্বশেষ সিআইডি চট্টগ্রাম মেট্টো জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির সরকার তদন্ত করে গত ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট এজাহারভুক্ত ৫ জনসহ ৮ জন আাসামির নাম উল্লেখ করে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট ফৌজদারী দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪/১০৯/১১৪ ধারায় আদালতে সম্পূরক চার্জশীট দাখিল করেন।

সম্পূরক চার্জশীটে এজাহারভুক্ত ৫ জন আসামি যথাক্রমে নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর থানার কোদ্দ নারায়নপুরের মৃত আফতাব আলীর পুত্র মো: সুমন আলী (২৬), ঠাকুরগাঁও জেলার নিশ্চিন্তপুরের মৃত শামছুল হকের পুত্র ইয়াছিন প্রকাশ রায়হান (২৯), কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রামের শ্রীপুরের মৃত আসলাম মিয়ার পুত্র মো: ইয়াকুব (৩৪), টেকনাফের গোদার বিল গ্রামের আলী হোসেনের পুত্র মো: ইসহাক প্রকাশ কালু (৩১), টেকনাফের মহেশখালীয়া পাড়ার মৃত নবী হোসেনের পুত্র নজরুল ইসলাম (২৮)। এছাড়া তদন্তে প্রাপ্ত এজাহার বহির্ভুত আরো ৩ জন আসামি যথাক্রমে মিয়ানমারের মংডু থানার ধনচি পাড়ার মৃত আবদুর রহিমের পুত্র রোহিঙ্গা ছৈয়দুল আমিন প্রকাশ লম্বাইয়া (৪৭), টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের মাঝের পাড়ার মৃত মৌলভী আবদুল জলিলের পুত্র মহিবুল্লাহ (৪৫), টেকনাফ পৌরসভার লেঙ্গুরবিলের জাফর আহমেদের পুত্র মো: দিদার মিয়ার (৩৫) বিরুদ্ধে পরস্পর যোগসাজশে অপহরণ ও হত্যা পরিকল্পনার অভিযোগ আনা হয়।

মামলাটি টেকনাফের আমলী আদালত থেকে বিচারের জন্য জেলা ও দায়রা জজ আদালতে প্রেরণ করা হয়। মামলার ৩ জন আসামি যথাক্রমে মো: সুমন আলী, ইয়াছিন প্রকাশ রায়হান ও মো: ইয়াকুব ১৬৪ ধারায় আদালতে আত্মস্বীকারোক্তি মুলক জবানবন্দী প্রদান করেন।

২০২০ সালের ২৪ জুলাই কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালত মামলাটি চার্জ গঠন করে বিচারকার্য শুরু করেন। মামলায় ২৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ ও তাদেরকে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা জেরা করেন। এরপর আলামত প্রদর্শন ও পর্যালোচনা, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট যাচাই, ফরেনসিক পরীক্ষার প্রতিবেদন যাচাই, তিন জন আসামির ১৬৪ ধারায় প্রদত্ত জবানবন্দী যাচাই, আসাসিদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ, যুক্তিতর্কসহ সকল বিচারিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে মামলাটি বুধবার রায়ের জন্য ধার্যদিন রাখা হয়। রায়ের জন্য ধার্য্য তারিখে জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল ঘটনার ১০ বছর ৮ মাস ৪ দিন পর বুধবার ১১ মে চাঞ্চল্যকর এ মামলাটির উপরোক্ত রায় প্রদান করেন।

বিজ্ঞ বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল তার এজলাসে এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে রায় পড়ে শোনান। এসময় উভয় পক্ষের আইনজীবীরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

আসামিদের মধ্যে মো: সুমন আলী, নজরুল ইসলাম, সৈয়দুল আমিন ও মহিবুল্লাহ আদালত থেকে জামিন নিয়ে পলাতক রয়েছে। অন্য ৪ জন আসামি যথাক্রমে ইয়াছিন প্রকাশ রায়হান, মো: ইয়াকুব, মো: ইসহাক প্রকাশ কালু ও মো: দিদার মিয় রায় ঘোষণার সময় আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।

রাষ্ট্র পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন পিপি এডভোকেট ফরিদুল আলম, বাদী পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন এডভোকেট আমির হোসেন, এডভোকেট দীলিপ দাশ, এডভোকেট আমিন উদ্দিন, এডভোকেট মোহাম্মদ নছর উল্লাহ প্রমুখ।

আসামিদের পক্ষে এডভোকেট শাহজালাল চৌধুরী, এডভোকেট নুরুল মোস্তফা মানিক, এডভোকেট সিরাজুল ইসলাম-৪ (স্টেট ডিফেন্স), এডভোকেট সেলিম উদ্দিন রাজু প্রমুখ মামলাটি পরিচালনা করেন।

নয়া শতাব্দী/জিএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ