সয়াবিন তেলের দাম বেধে দেওয়ার কয়েক দিন অতিবায়িত হলেও নওগাঁর বদলগাছী বাজারে এর কোন ছোঁয়া লাগেনি। সরকারের বেধে দেয়া নিয়মনিতীকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে খোলা বাজারে এখনও দেদারছে সয়াবিন তেল পাইকারি ২১৫ ও খুচরা ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা। প্রশাসনের তেমন কোন মাথা ব্যাথা নেই বললেই চলে।
রোববার (৮ মে) সকালে বদলগাছী বাজারে সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহকালে কয়েকজন ব্যবসায়ী নয়া শতাব্দীতে জানান, দুদিন আগে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বাজার মনিটরিং করেছেন। ব্যবসায়ীদের সয়াবিন তেল ক্রয়ের মেমো দেখেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেন নাই বলে স্থানীয়রা জানান।
উপজেলা সদর হাটখোলা বাজােরর পশ্চিম পার্শ্বে অবস্থিত ইউনিক ট্রেডাস এর স্বত্বাধিকারী এখলাছুর রহমান জানান, তিনি বগুড়ার বসাক ট্রেডাস থেকে ৬ মে সয়াবিন তেল কিনেছেন ব্যারেল প্রতি ৩৮ হাজার ৩ শত টাকা দরে। আর যানবাহন ভাড়া বাবদ আরো ২০০ টাকা, লেবার খরচসহ তার পড়েছে প্রতি কেজি ২০৫ টাকা। পাইকারী ও খুচরা বাজারে তিনি বিক্রি করছেন ২১৫ টাকা কেজি।
বাজারে অবস্থিত লিটন ভ্যারাইটি স্টোর এর স্বত্বাধিকারী লিটন জানান, তারা নওগাঁ মেসার্স সুমন এন্ড ব্রাদার্স থেকে সয়াবিন তেল ব্যারেল প্রতি কিনেছেন ৩৮ হাজার টাকা। আর বাজারে পাইকারী ও খুচরা বিক্রি করছেন ২১০ টাকা কেজি দরে। তার পাশেই ফারুক ষ্টোর এর স্বত্বাধিকারী ফিরোজ হোসেন জানান, তারা ও নওগাঁ মেসার্স সুমন এন্ড ব্রাদার্স থেকে সয়াবিন তেল ব্যারেল প্রতি কিনেছেন ৩৮ হাজার টাকা। তারা খুচরা ও পাইকারী ২১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন।
কিন্তু বদলগাছী বাজারে সয়াবিন তেলের সাধারণ ভোক্তারা বলছেন অন্য কথা। প্রকৃতপক্ষে ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফার জন্য তারা আরো বেশি দরে বিক্রি করছে বলে অভিযোগ তাদের। আর বোতলজাত সোয়াবিন তেল তো বাজার থেকে একেবারে উধাও। বেশি দরেও কিনতে পাওয়া যাচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে, পূর্বে মজুদকৃত বোতলজাত সয়াবিন তেল থাকলেও খোলা বাজারে তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফার জন্য বোতলজাত তেল খুলে খোলা তেল হিসেবে বিক্রি করছে। এজন্য বাজারে সয়াবিন তেল খোলা পাওয়া গেলেও বোতলজাত তেল পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে ধনি থেকে শুরু করে সাধারণ ভোক্তারাও এখন খোলা সয়াবিন তেলের উপর নির্ভর হয়ে পড়েছে।
আর এ সুযোগে অধিকাংশ ব্যবসায়ীরা ডিজিটাল মিটারে তেল বিক্রয় করলেও মাপে কারসাজি রয়েছে বলে কয়েক জন ক্রেতা জানিয়েছেন। তারা উচ্চমূল্যে খোলা সয়াবিন কিনলেও কেজি প্রতি প্রায় ২০ গ্রাম থেকে ৫০ গ্রাম পর্যন্ত তেল ওজনে কম দেয়া হচ্ছে। ক্রেতারা সাধারণ পাইকারী ও খুচরা তেল ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে ক্রয় করে অন্য ডিজিটাল মিটারে ওজন করলে ওই পরিমান তেল কম হলে বিষয়টি ধরা পড়ছে। কিন্তু ক্রেতা সাধারণের যেন কিছুই করার নেই। যে বোতলে অন্যের ডিজিটাল মেশিনে ওজন করলে ২০/৫০ গ্রাম ওজন কম হলেও পুনরায় ব্যবসায়ীদের কাছে নিয়ে গেলে ওজন ঠিক আছে বলে জানানো হচ্ছে। ডিজিটাল দেশে ডিজিটাল চুরি হলেও ভোক্তা বা ক্রেতা সাধারণ নিরুপায়।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গ্রামের খুচরা মুদি ব্যবসায়ীরা পাইকারী খোলা সয়াবিন ২১৫ টাকা কেজি দরে কিনে এনে তারা ২২০ টাকা দরে বিক্রি করছে।
উপজেলার সচেতন মহল মনে করছে, সয়াবিন তেলের দাম নিয়ে যেন মগের মুল্লুক তৈরি হয়েছে। সকারের বেধে দেয়া নির্ধারিত দামকে তোয়াক্কা করছে না তেল ব্যবসায়ীরা। সরকারকে স্থানীয় প্রশাসন দ্বারা বাজার মনিটরিং জোরদার করে সয়াবিন তেলসহ অন্যান্য ভোজ্য তেলের দাম নিয়ন্ত্রণ না করলে সাধারণ জনতা আরো কঠিন বিপাকে পরবে। প্রবাদ রয়েছে, নুন আনতে পান্তা ফুরাই। এখন তেল আনতে তরকারী ফুরাই অবস্থা। অবশেষে এমনি অবস্থা বর্তমানে বিরাজমান।
বদলগাছী সদর হাটখোলা বাজারের পশ্চিম পার্শ্বে অবস্থিত ইউনিক ট্রেডাস এর স্বত্বাধিকারী এখলাছুর রহমান, লিটন ভ্যারাইটি স্টোর এর লিটন ও ফারুক ভ্যারাইটি স্টোর এর স্বত্বাধিকারী ফিরোজ হোসেন জানিয়েছেন, তারা বেশি দামে সয়াবিন তেল কিনে বেশি দামে বিক্রি করছেন। যারা বড় বড় ব্যবসায়ী ও মিল মালিক রয়েছে তারা দাম কমালেই কেবল তারা কম দামে বিক্রি করতে পারবে। সরকার মিল মালিক ও বড় বড় ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ করলেই তেলে দাম স্বাভাবিক হবে এবং জন সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আসবে বলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা মনে করছে।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ