ঢাকা, সোমবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২ কার্তিক ১৪৩১, ২৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

জনস্রোত ঠেকানো যাচ্ছে না দৌলতদিয়ায়

প্রকাশনার সময়: ২৭ জুলাই ২০২১, ১৯:২১

কোনো ভাবেই ঠেকানো যাচ্ছেনা নদীপার হওয়া যাত্রীদের বাঁধভাঙা স্রোত। কোভিড-১৯ সংক্রমণের বিস্তার রোধে সরকারের কঠোর বিধিনিষেধের ধার ধারছেন না কেউ। দক্ষিণ বঙ্গের প্রবেশদ্বার দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে বিপুল সংখ্যক যানবাহন ও যাত্রী পারাপার নিত্যদিনের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ সকল যাত্রী ও যানবাহন পারাপার ঠেকাতে স্থানীয় প্রশাসন কঠোর অবস্থান নিলেও তা কার্যকর করা দুরুহ হয়ে পড়েছে। আইনকে তোয়াক্কার বাইরে ঠেলে দিয়ে প্রয়োজন আগে মেটাচ্ছে এসব যাত্রীরা।

এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মঙ্গলবার সকাল থেকেই দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ঢাকামুখী অসংখ্য মানুষ ও ব্যক্তিগত গাড়ি নদী পার হওয়ার জন্য দৌলতদিয়া ঘাটে আসছেন। অপরদিকে পাটুরিয়া ঘাট থেকে ছেড়ে আসা প্রতিটি ফেরিতে আসছে শতশত সাধারণ যাত্রী ও যানবাহন। উভয়মুখী যাত্রীর চাপে প্রতিটি ফেরি ও ঘাট এলাকায় উপেক্ষিত হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি। অধিকাংশ যাত্রীর মুখে মাস্ক নেই। মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব।

বেলা ১২টার দিকে দেখা যায়, দৌলতদিয়ার ৫নং ফেরিঘাটে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও আনসারদের একটি বিরাট দল ফেরিতে যাত্রী চলাচল নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। তাদের শত বাধার মধ্য দিয়েও ঘাটে আসা কয়েকশ যাত্রী, বেশকিছু মোটরচালক ও ব্যক্তিগত গাড়ি প্রতিযোগিতা করে ঘাটে আসা ফেরি ‘ভাষা শহীদ বরকতে’ উঠে পড়ছে।

এ সময় তাদের ফেরি থেকে নেমে যেতে বার বার অনুরোধ করলেও অধিকাংশ যাত্রী নামছিলেন না। এতে করে ম্যাজিস্ট্রেট ফেরি ছাড়তে চালককে নিষেধ করেন। পরে তিনি সেনা সদস্য, পুলিশ ও আনসারদের সহায়তা নিয়ে বেশিরভাগ যাত্রী ও মোটর সাইকেল চালকদের এক প্রকার জোর করে ফেরি থেকে নামিয়ে দেন। তবে যৌক্তিক কারণ দেখানো কিছু যাত্রীকে ফেরিতে ওঠার সুযোগ দেন।

এদিকে ৫নং ঘাট দিয়ে পার হতে না পারা যাত্রীরা চলে যান ৬নং ঘাটে। সেখানে অপেক্ষমান একটি ফেরিতে সকল যাত্রী উঠে পড়েন। বিষয়টি টের পেয়ে ম্যাজিস্ট্রেট ও সেনা সদস্যরা আবার ওই ঘাটে গেলেও ততক্ষণে শাপলা শালুক নামের ফেরিটি ঘাট ছেড়ে যায়। এভাবেই নানা দুর্ভোগ যন্ত্রণা ও বাধা বিপত্তির মধ্য দিয়ে দিনভর চলতে থাকে এ রুটে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার।

এ সময় স্থানীয় কয়েকজন বলেন, দিনের চেয়ে রাতে এ রুট দিয়ে বেশী যাত্রী ও ব্যক্তিগত গাড়ি পার হচ্ছে। লকডাউনে মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে। যে কারণে শত বাধা সত্বেও মানুষ প্রয়োজন ও কর্মের উদ্দেশ্যে ছুটে যাচ্ছে।

আলাপকালে কুষ্টিয়া থেকে আসা ঢাকায় সোনালী ব্যাংকের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, অফিস থেকে উর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাকে অনতিবিলম্বে চাকরিতে যোগ দেয়ার আদেশ দিয়েছেন। কিন্তু ঘাটে এসে ফেরিতে উঠতে গিয়ে বিপত্তিতে পড়ি।

ঝিনাইদাহ থেকে আসা শাকিল হোসেন নামের এক প্রবাসী জানান, আমার ছুটির মেয়াদ শেষ হয়ে আসছে। ঢাকায় গিয়ে টিকিটের ব্যবস্থা করতে হবে। সে জন্য নানা ভোগান্তি সহ্য করে ঘাট পর্যন্ত এসেছি। যেভাবেই হোক আমাকে ঢাকায় পৌঁছাতেই হবে। এ বিষয়ে গোয়ালন্দ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ঘাটে আসা প্রতিটি মানুষই কোন না কোন জরুরি কাজের জন্য এসেছেন। তবে আমরা যৌক্তিক কারণ ছাড়া কাউকে ফেরিতে উঠতে দিচ্ছি না।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক মোঃ শিহাব উদ্দিন বলেন, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে অ্যাম্বুলেন্স, পচনশীল মালসহ জরুরি যানবাহন পারাপারের জন্য বর্তমানে ৮ টি ফেরি চালু রাখা হয়েছে। ঘাটে কোনো অপেক্ষমান গাড়ি নেই। তবে বিভিন্ন উপায়ে যে সকল যাত্রী ঘাটে আসছেন তারা বাধা প্রাপ্ত হলেও সুযোগ বুঝে ফেরিতে পার হয়ে যাচ্ছেন। মহাসড়কে আটকাতে না পারলেও দূরদুরান্ত থেকে আসা যাত্রীদের ফেরিঘাটে আটকানো অসম্ভব হয়ে উঠছে।

নয়া শতাব্দী/এম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ