জৈষ্ঠ্যের খরতাপ ভোগাচ্ছে সবাইকে। এরপরও সাগরের হাওয়া খেতে লোকারণ্য সৈকতের বালিয়াড়ি। ভিড় রয়েছে হোটেল-মোটেল জোনের অলিগলি রাস্তায়। সবখানেই লোকজনের ভিড়। পর্যটকবাহি ও সাধারণ পরিবহন এবং ইজিবাইক, সিএনজি অটোরিক্সায় বাইপাস সড়ক, কলাতলী ডলফিন মোড়, হোটেল-মোটেল জোন, লাবণী, শৈবাল সড়ক সবখানেই জানজটের ছোঁয়া। অনেক জায়গায় যানবাহনের সাথে লোকজটও হচ্ছে। বড় বাসগুলো টার্মিনাল ও কলাতলী ডলফিন মোড়ে থাকলেও মাঝারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন গাড়ি পর্যটন এলাকা ও শহরে ঢোকায় এ যানজট বলে অভিমত স্থানীয়দের। ঈদুল ফিতরের আনন্দ ভাগাভাগি করতে আসা পর্যটকে লোকারণ্য হয়ে আছে কক্সবাজার সৈকতের বালিয়াড়ি ও পর্যটনস্পটগুলো।
ঈদের দ্বিতীয় দিন থেকে পর্যটক উপস্থিতি কয়েকগুণ বেড়েছে। ঈদ ও সপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে আগামী শনিবার পর্যন্ত পর্যটন নগরীতে পাঁচ লাখের বেশি পর্যটক উপস্থিতির আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এসময়ে প্রায় অর্ধহাজার কোটি টাকার বাণিজ্যের আশাও করছেন তারা।
বুধবার বিকেলে সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে গোসল করতে নেমে মো. সাইফুল নামে এক রোহিঙ্গা কিশোরের মৃত্যু হয়। এ সময় আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় রায়হান নামে আরও এক রোহিঙ্গা কিশোরকে।
সৈকতে হারিয়ে যাওয়া শিশু ও বয়োবৃদ্ধদের খুঁজে পরিবারের কাছে ফেরাতে এবং তৃষ্ণার্থ পর্যটককে পানি পানের ব্যবস্থা করেছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।
টইটম্বুর পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সর্তক অবস্থায় দায়িত্বপালন করছে ট্যুরিস্ট ও জেলা পুলিশ। মোতায়েন রয়েছে অতিরিক্ত পুলিশও। মাঠে টহল দিচ্ছেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেটসহ ভ্রাম্যমান আদালত। যেকোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছে পর্যটন স্পটগুলো।
ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম জানান, ঈদ-সপ্তাহিক মিলিয়ে টানা ছুটিকে টার্গেট করে পূর্ব পরিকল্পনায় বিপুল সংখ্যক পর্যটক কক্সবাজার এসেছেন। কেউ এসেছেন ঈদ রাতে, আবার কেউ এসেছেন বুধবার সকাল-বিকেল ও রাতে। বৃহস্পতিবারও আসছেন অনেকে।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সপ্তাহ-পক্ষকাল আগে থেকেই তারকা মানের হোটেলগুলো আগাম বুকিং হয়ে আছে। গেস্ট হাউজগুলোতে দেখেশুনে উঠছেন পর্যটকরা। পর্যটনকেন্দ্রিক সাড়ে চার শতাধিক হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট রয়েছে কক্সবাজারে।
তিনি আরো জানান, ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে দ্রুত সাধারণ চিকিৎসা ও খাবার পানির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। হারিয়ে যাওয়া বয়োবৃদ্ধ ও শিশুদের উদ্ধার করে স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দিতে কাজ করছে পর্যটন পুলিশ। বুধবার একদিনেই ডজনাধিক হারিয়ে যাওয়া শিশুকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে পুলিশ।
গোসলকালীন বিপদাপন্ন পর্যটকদের রক্ষায় সর্তক অবস্থায় রয়েছেন লাইফগার্ড কর্মীরা। পাশাপাশি করোনার সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে পর্যটকদের সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়ে মাইকিং করছেন জেলা প্রশাসনের বিচ কর্মীরা।
চট্টগ্রামের অক্সিজেন এলাকা থেকে পরিবারের সবাইকে নিয়ে আসা শহিদুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ দু’বছর করোনা ভীতির কারণে বেড়ানো হয়নি। চাকরির কারণে অফিস-বাসা এই জীবনের বাইরে যাওয়া সম্ভব হয় না। তার উপর গত দু’বছর করোনা সব স্তব্ধ করে রেখেছিল। এবার টানা ছুটি পেয়ে সবাইকে নিয়ে কক্সবাজার এসে কলাতলী দ্য গ্রান্ড সী বিচ হোটেলে উঠেছি। সৈকতে লোকারণ্য বলে দিচ্ছে এ গরমেও পর্যটকে লোকারণ্য হয়েছে কক্সবাজার।
তারকা হোটেলে ওশান প্যারাডাইসের পরিচালক আবদুল কাদের মিশু বলেন, পর্যটন মৌসুমে কমবেশি পর্যটক নিত্যদিন কক্সবাজারে অবস্থান করেন। একমাস সিয়াম সাধনার পর টানা ছুটি মিলিয়ে একসঙ্গে অনেক লোক বেড়াতে এসেছেন। করোনা কালের ক্ষতি কাটাতে এভাবে পুরো মৌসুম ভর্তি থাকুক এটাই আমাদের কাম্য।
দিগন্ত ট্যুরিজমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইয়ার মোহাম্মদ বলেন, শুধু কক্সবাজার নয়, ইনানী-হিমছড়িসহ সকল পর্যটন স্পটে পর্যটকের উপস্থিতি বেড়েছে। ঈদের দিন স্বজনদের বাড়ি বাড়ি বেড়ানোর পর বুধবার থেকে পর্যটন স্পষ্টগুলোতে ঢুঁ মারছেন ভ্রমণ পিয়াসীরা।
কলাতলীর ইউনি রিসোর্ট ও কোয়ালিটি হোম হোটেলের মালিক ইসলাম শফিক বলেন, গরমের কারণে যে পরিমাণ লোকসমাগম হবে না বলে মনে করেছিলাম, বাস্তবে তার চেয়ে বেশি পর্যটক উপস্থিতি লক্ষ্যনীয়। তবে, এদের অধিকাংশই আশপাশের এলাকার। সকালে এসে সন্ধ্যায় ফিরে যাচ্ছেন অনেকে। তাই গেস্ট হাউজগুলোতে রুম বুকিং আশানুরূপ হচ্ছে না।
সি সেইফ লাইফ গার্ডের সুপারভাইজার মোহাম্মদ ওসমান বলেন, সৈকতে ঢেউয়ের সাথে খেলছেন পর্যটকরা। আনন্দে আত্মহারা হয়েছে অনেকে বিপদসীমার বাইরেও চলে যান। তাদের কিনারায় আনতে কাজ করার পাশাপাশি নিরাপদ থাকতে বারবার সতর্ক করা হচ্ছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, ঈদের আনন্দের সাথে সাগরের ঢেউয়ের নাচনের আনন্দ উপভোগ করতে সৈকতের সুগন্ধা, লাবনী ও কলাতলী পয়েন্টেসহ সবখানে পর্যটক সমাগম হয়েছে। বিনোদনের পাশাপাশি পর্যটকদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে সর্বদা সচেতনতামূলক মাইকিং করা হচ্ছে। সৈকতের ১১টি পয়েন্টে তথ্যকেন্দ্র স্থাপন করা আছে। কোথাও পর্যটক হয়রানির অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে মাঠে রয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
কক্সবাজার পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান বলেন, পর্যটকের নিরাপত্তায় দায়িত্বপালন করছে পুলিশ। অনাকাঙ্ক্ষিত যেকোন ঘটনা রোধে পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে এবং পর্যটক বেশেও নারী পুলিশ সদস্যরা সৈকতে ঘুরছেন। টহলে রয়েছে এলিট ফোর্স র্যাবও।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ