ড্রাগন ফল যার উৎপত্তি সেন্ট্রাল আমেরিকায়। তবে বাণিজ্যিকভাবে এটি সর্বাধিক চাষ হয় ভিয়েতনামে। বলা বাহুল্য, ভিয়েতনামের সাথে বাংলাদেশের মাটি ও জলবায়ুর বেশ সাদৃশ্যের কারণে দিন দিন বাংলাদেশেও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ড্রাগন ফলের চাষ।
কয়েক বছর আগেও বাংলাদেশের মানুষ জানতো এটি বিদেশি ফল। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে দেশে এ ফলের চাষ এতটা বেড়েছে যে, এখন এটি দেশি ফল বলেও পরিচিত। ভালুকাতেও ড্রাগনের চাষ হচ্ছে। বর্তমানে উপজেলার কৃষি অফিসের মাধ্যমে এ ফলের চাষ ছড়িয়ে দিতে নানাভাবে চেষ্টা চলছে। দেওয়া হচ্ছে উৎসাহ। এতে কৃষকরা ফলটি চাষে মনোযোগী হচ্ছেন।
তেমনি একজন কৃষক বিল্লাল হোসেন। তিনি ১০ বিগা জমির উপর বাণিজ্যিকভাবে গড়ে তুলেছেন ভিয়েতনামী ফল ড্রাগনের এক বিশাল বাগান। প্রতি মৌসুমে মার্চ থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ড্রাগন ফল পাওয়া যায়। টক-মিষ্টি ও মিষ্টি স্বাদের ড্রাগন চাষ করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন ভালুকা উপজেলার উথুরা ইউনিয়নের চামিয়াদী গ্রামের বিল্লাল হোসেন মাতাব্বর।
কৃষক বিল্লাল হোসেন মাতাব্বর জানান, ২০১৭ সালে ড্রাগন বাগানের সূচনা করেন ২৫ শত চারা দিয়ে। এখন ৩ হাজারের অধিক ড্রাগন গাছ রয়েছে তার বাগানে।
তার বাগানের প্রতিটি গাছে রয়েছে ফুল, মুকুল এবং পাকা ড্রাগন। এ দেশের আবহাওয়া লাল, হলুদ এবং সাদা ড্রাগন ফল চাষের জন্য বেশ উপযোগী হলেও তিনি গড়ে তুলেছেন লাল ড্রাগনের বাগান।
তার সাফল্যের গল্প জানতে চাইলে বিল্লাল হোসেন মাতাব্বর জানান, ড্রাগন খুবই সুস্বাদু ফল। এটি চাষে সুবিধা হলো রোগ-বালাই কম হয় এবং রাসায়নিক সার খবুই কম লাগে। এছাড়া চারা লাগানোর এক বছরের মধ্যে ফল পাওয়া যায়। খরচ কম হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, যেহেতু রাসায়নিক সার লাগে না সেহেতু খরচটা অনেকাংশে কমে যায়। ড্রাগন চাষে প্রধানত জৈব সার লাগে। আর এক্ষেত্রে তিনি গোবর সার এবং হাস-মুরগীর মলমূত্র, বিষ্ঠা ব্যবহার করে থাকেন।
এপ্রিল থেকে জুন মাসে ফুল আসে, আর খাবার উপযুক্ত হয় সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাসে। ফুল আসার ৩০ থেকে ৪০ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায়। নভেম্বর মাস পর্যন্ত ফুল ফোটা এবং ফল ধরা অব্যাহত থাকে। এক একটি ফলের ওজন ২৫০ গ্রাম থেকে এক কেজিরও বেশি হয়ে থাকে। একটি পূর্ণাঙ্গ গাছ থেকে ১০০ থেকে ১৩০টি পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। সঠিক পরিচর্যা করতে পারলে একটি গাছ হতে ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত ফলন পাওয়া সম্ভব। ড্রাগন গাছে শুধু রাতে স্বপরাগায়িত হয়ে ফুল ফোটে। ফুল লম্বাটে সাদা ও হলুদ রঙের হয়। তবে মাছি, মৌমাছি ও পোকা-মাকড় পরাগায়ন ত্বরান্বিত করে। কৃত্রিম পরাগায়নও করা যায়।
চাষি বিল্লাল হোসেন মাতব্বর জানান, ২০০১ এ ব্রুনাই যান এবং ২০০৬ সালে দেশে ফিরে প্রথমে মাছ ব্যবসা শুরু করেন। পরে ২০১৭ সালে বন্ধু আনিছুর রহমানকে নিয়ে যৌথভাবে ড্রাগন বাগানের সূচনা করেন। গত ৫ বছরে তিনি ড্রাগন চাষ করে মোট ১০ লক্ষ টাকা খরচ করে ৩ চালান বিক্রি করে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা খরচ উঠিয়ে নিয়েছেন। এখন তার বাগানটি লাভের উপরে রয়েছে। ভালুকাসহ ঢাকা, ময়মনসিংহ ও গাজীপুরের বিভিন্ন জায়গায় ড্রাগন ফল পাইকারী ও খুচরা বিক্রি করেন।
তিনি আরো বলেন, এবছর করোনার মধ্যে এতো পরিমাণ চাহিদা ক্রেতাদের যা আমরা সরবরাহ করতে পারছি না। অনেকেই আমার কাছ থেকে চারা কিনছে, ছোট-বড় খামার করছে। ড্রাগন চাষ বিশেষ করে করোনাকালে বিদেশ ফেরতদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হচ্ছে।
ভালুকা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জেসমিন জাহান বলেন, ভালুকার মাটি ড্রাগন চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় কৃষকরা এ ফল চাষে ঝুঁকছেন। এতে বিশাল জনগোষ্ঠীর পুষ্টি ঘাটতি কমে আসছে, অর্থনীতিও হয়ে উঠছে শক্তিশালী, কৃষকরা যাতে ড্রাগন ফল আরও বেশি করে চাষ করতে পারে তার জন্য নতুন-নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি করতে কৃষি অফিস মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। কৃষকের আয় বৃদ্ধি ও পুষ্টির চাহিদা পূরণে ড্রাগন চাষে উদ্বুদ্ধকরণ, মাঠ পর্যায়ে তদারকি এবং এর চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে অবহিত করার ফলে উপজেলার অনেক কৃষক এখন ড্রাগন চাষ করছেন।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ