ঈদের ছুটিতে নাটোর উত্তরা গণভবনে দর্শনার্থীদের ভিড় কয়েক গুন বেড়েছে। ইতিহাসের স্থাপত্যকলার অন্যতম নিদর্শন ও ঐতিহ্যপূর্ণ প্রধানমন্ত্রীর দ্বিতীয় বাসভবন হিসেবে পরিচিত এ গণভবন। গণভবনের মূল ফটকের সামনে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে আসা দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।
বুধবার (৪ মে) সকালে নাটোর উত্তরা গণভবনে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ঈদে গণভবনের মূল ফটকের সামনে টিকিটের জন্য লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে দর্শনার্থীদের। এসময় জনপ্রতি ২০টাকার টিকিট ক্রয় করে গণভবনের ভিতরে প্রবেশ করছে দর্শনার্থীরা। অনেকে সপরিবার নিয়ে এসেছেন, অনেকে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবী নিয়ে দলবেঁধে গণভবনে ঘুরতে এসেছে। এসময় শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সী নারী-পুরুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। অপরদিকে টিকিটের বিনিময়ে সংগ্রহশালায় পরিদর্শন করেছেন দর্শনার্থীরা।
উত্তরা গণভবনের মূল ফটক পার হলেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে দু’পাশে বিভিন্ন প্রজাতির সারি সারি ফুলের গাছ। গাছে ফুটেছে নানান রঙের দৃষ্টিনন্দন ফুল। সঙ্গে মিনি চিড়িয়াখানা আর সংগ্রহশালা দেখে খুশি শিশু-কিশোররা।
গণভবন প্রতিষ্ঠাতা-
দয়ারাম রায় ১৭৩৪ সালে ৪২একর জমির উপর উত্তরা গণভবন রাজ প্রসাদটি নির্মাণ করেন। এ রাজবংশের রাজাগণ ১৭১০ সাল থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত এ রাজ্য শাসন করেন। বিশালাকার এ গণভবনে রয়েছে দিঘী, বাগান, ইটালিয়ান গার্ডেন, চিড়িয়াখানা, নতুন সংগ্রহশালা ও পাখিদের অভয়াশ্রমসহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বাহারী রকমের গাছপালা। পুরো গণভবনের চারপাশে উঁচু দেওয়াল দ্বারা বেষ্টিত।
গণভবনে প্রবেশদ্বারে রয়েছি বিশাল এক ফটক। গণভবনের ভিতরে রয়েছে বিভিন্ন দেশ থেকে আনা হরেক রকমারি বাহারী ফুল, ঔসুধি গাছ। গণভবনের সামনের মাঠে ফুটেছে দৃষ্টিনন্দন গাঁদা ও গ্লাডিওলাস ফুল। গণভবনে ঢুকলেই যেন পর্যটকদের ফুলের সৌন্দর্য ও সুবাস দিয়ে অভ্যর্থনা জানায়। এ গণভবন প্রাঙ্গণে আছে ইতালি থেকে সংগৃহীত মনোরম ভাস্কর্যে সজ্জিত বাগান। যেখানে রয়েছে বিরল প্রজাতির নানা উদ্ভিদ।
গণভবনে ঘুরতে আসা দর্শনার্থী নলডাঙ্গা উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আলীম সরদার বলেন, উত্তরা গণভবন আমার খুব প্রিয় একটি স্থান। সময় পেলেই বাচ্চাদের নিয়ে ঘুরতে চলে আসি। বিশেষ করে গণভবনে অনেক রকমারি ফুলের গাছ রয়েছে। গাছে গাছে বাহারী ফুল ফুটেছে। এসব ফুলের গাছ আগে কখনো দেখিনি।
জোছনা বেগম নামে এক দর্শনার্থী বলেন, গণভবনের সবকিছুই সুন্দর। বিশেষ করে রানীমহলে দেশি-বিদেশি আকর্ষণীয় ফুলের দৃষ্টিনন্দন গাছ। পুরো গণভবন জুরে সবুজ গাছপালায় ছায়া। এখানে মিনি চিড়িয়াখানায় দেশি-বিদেশি পশু-পাখি রয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে রোপণ করা একটি ‘হৈমন্তী’ গাছ রয়েছে।
দর্শনার্থী মিতু খাতুন বলেন, উত্তরা গণভবনের বাহির থেকে দেখলে বুঝার উপায় নেই, ভিতরে এত সুন্দর পরিবেশ। দেশ-বিদেশের বাহারী ফুল আর চারদিতে সবুজ গাছ আমাকে মুগ্ধ করেছে। সত্যিই বলতে অনেক সুন্দর একটি জায়গা।
কলেজের শিক্ষক শহীদুল হক সরকার বলেন, ঈদের ছুটিতে সপরিবারে ঘুরতে এসেছি। উত্তরা গণভবন চমৎকার একটি স্থান। এখানে এলে যে কেউ উত্তরা গণভবনের প্রেমে পড়ে যাবে। এখানে বসে আড্ডা দেয়া আর ঘুড়ে বেড়ানোর মতো পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে। সবমিলে দারুন একটি স্থান।
রবিউল আউয়াল নামে এক দর্শনার্থী বলেন, এখানে আগেও অনেক বার এসেছি। যত বার এসেছি ততই মুগ্ধ হয়েছে। পরিবার নিয়ে সময় কাটানোর মতো একটি জায়গা। আমি প্রায় পরিবার নিয়ে এ গণভবনে ঘুরতে আসি।
রাজশাহী থেকে মনিরুল ইসলাম নামে এক কিশোর বলেন, আমার পরিবারের সাথে এখানে বেড়াতে এসেছি। অনেক সুন্দর লাগছে, চারদিকে গাছ আর ফুল। আমার বেশি ভালো লেগেছে গণভবনের সংগ্রহশালা। ওখানে রাজা-রানীর ছবিসহ পুরোনো অনেক আসবাপত্র রয়েছে।
নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, ঈদের ছুটিতে উত্তরা গণভবনে দর্শনার্থীরা ভিড় বেড়েছে। এখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দর্শনার্থীরা আসছেন। দর্শনার্থীরা ২০টাকা টিকিট ক্রয় করে গণভবন পরিদর্শন করতে পারছেন।
নয়া শতাব্দী/জিএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ