রাত পোহালেই পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদ উদযাপনে পিছিয়ে নেই ফরিদপুরের দুইটি যৌনপল্লীর বাসিন্দারা। তাদের মাঝেও বইছে ঈদের আমেজ। করোনাকালীন সময় পার করার দুই বছর পর ঈদ উদযাপন করতে পারছে তারা।
শহরের রথখোলা ও সিএন্ডবি ঘাট যৌনপল্লীতে গিয়ে দেখা যায়, যৌনকর্মীরা তাদের হাতে মেহেদি লাগাচ্ছে। কেউবা নতুন জামা পড়েছে, আবার কেউবা রুপচর্চা নিয়ে ব্যস্ত। আবার কেউ ঘর সাজাচ্ছে।
রথখোলা যৌনপল্লীর বাসিন্দা আসমা জানান, এবারের ঈদটা খুব ভালো যাবে মনে হয়। গত দুই বছর করোনার কারণে ঈদ করতে পারিনি। তাছাড়া সারা বছর অপেক্ষায় থাকি ঈদের জন্য। কারণ ঈদে কাস্টমার বেশি আসে, অর্থও উপার্জন হয় বেশি। করোনার কারণে কাস্টমার একেবারেই কমে গেছিল। অনেক কষ্ট হয়েছে। ঈদে ভালো রোজগার হবে আশা করছি।
তিনি আরো জানান, ঈদে নতুন জামা কিনেছি। কিছু কসমেটিকস কিনেছি। ঘর সাজিয়েছি। নতুন জামা পড়ে ঈদের দিন কাস্টমারকে আকর্ষণের চেষ্টা করবো।
আরেক বাসিন্দা রেশমা বলেন, ঈদের দিন খুব আনন্দ করি আমরা। এখানে যারা আছে তাদের সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিই। বাড়ি থেকে জানে না এখানে আছি। সবাই জানে গার্মেন্টেসে চাকরি করি। তাই অনেক কষ্ট হয়, তাপরও পেটের দায় এখানে থাকি। প্রায় ৫বছর এখানে আছি, ঈদের সময় এখানেই থাকি। কারণ সারা বছর কাস্টমার কম থাকলেও ঈদের দিন থেকে ১০দিন অনেক কাস্টমার আসে, রোজগারও ভালো হয়। ঈদের জন্য হাতে মেহেদি লাগিয়েছি, নতুন জামা কিনেছি।
সিএন্ডবি ঘাট যৌনপল্লীর বাসিন্দা রোকেয়া বলেন, আমি এখানে থাকি পরিবারের কেউ জানে না। আমার একটি ৫বছর বয়সী ছেলে আছে, বাড়িতে আমার মায়ের কাছে থাকে। প্রতিমাসে টাকা পাঠাই। কিন্তু ঈদে ছেলের কাছে যাওয়া হয় না। কারণ ঈদের কয়দিনই মূলত রোজগার বেশি হয়ে থাকে।
তিনি বলেন, এমন কাজ করি যা কাউকে বলা যায় না, আবার সহ্যও করা যায় না। কিছুই করার নেই অর্থের জন্যই করতে হয়। মন চায় বাড়িতে গিয়ে ছেলের সাথে ঈদ করি কিন্তু ভাগ্যে নাই। এমনিতেই করোনার কারণে গত দুই বছর রোজগার হয়নি। দেনা হয়ে গেছি। তারপরও মন না চাইলেও ঈদের দিন সেজে থাকতে হয়।
যৌনকর্মী রাহেলা বলেন, ঈদের দিন সকালে সেমাই রান্না করি, দুপুরে মাংস, পোলাও রান্না করে একে অপরকে খাওয়াই। এখানে যারা আমরা আছি সকলেই বোনের মতো থাকি।
তিনি আরো বলেন, আমি এখানে প্রায় ৬ বছর আছি। প্রথম প্রথম খারাপ লাগতো, এখন সয়ে গেছে। তালমিলিয়ে চলি। ঈদের দিন আসলে ছোটবেলার কথা মনে পড়ে। মা-বাবা, ভাই বোনের সাথে ঈদ করার কথা মনে পড়ে। কষ্ট লাগে, কিন্তু কিছুই করার নাই। সবকিছু ভুলে ঈদের দিন নতুন জামা পড়ে সবার সাথে মিশে কষ্ট ভুলে থাকার চেষ্টা করি।
শাপলা মহিলা সংস্থার প্রকল্প সমন্বয়কারী প্রশান্ত কুমার সাহা জানান, দীর্ঘদিন যাবৎ শাপলা মহিলা সংস্থা যৌনকর্মী ও তাদের সন্তানদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা সহ বিবিধ বিষয় নিয়ে কাজ করে আসছে। ইতোমধ্যেই করোনায় ক্ষতিগ্রস্থ্য যৌনকর্মীদের জনপ্রতি ৫ হাজার ৫০০ টাকা করে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, ঈদ উপলক্ষে যৌনকর্মীদের ৯১ জন শিশুকে নতুন পোশাক কিনে দেয়া হয়েছে। এছাড়া শিশুদের মাঝে পুষ্টি সমৃদ্ধ খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ