চীনের উহান শহর থেকে শুরু হওয়া করোনাভাইরাস বাংলাদেশে প্রবেশ করায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে পুরো দেশ। করোনাভাইরাস যেন ছড়াতে না পারে সেজন্য লোক সমাগম এড়িয়ে চলতে বলা হয় শুরু থেকে। এসময় প্রয়োজন ছাড়া কাউকে ঘরের বাইরে বের হতে বারণ করা হয়। ফলে রাত-দিন কোলাহলের শহর ময়মনসিংহেও নেমে আসে নীরবতা। ময়মনসিংহ নগরীর যেসব সড়কে চিরচেনা যানজট লেগে থাকতো সেসব সড়কে প্রায় শূন্য হয়ে যায় যানবাহন ও মানুষের জটলা। ফলে বিপণী বিতানগুলোও অনেকটা ক্রেতাশূন্য অবস্থায় পড়ে ছিল।
তবে গত ২ বছরের মন্দা কাটিয়ে চলতি বছর জমে উঠেছে ময়মনসিংহের ঈদের বাজার। মানুষের চলাফেরায় ফিরে এসেছে স্বাভাবিক ছন্দ। আর বিধিনিষেধ না থাকায় এখন জমজমাট ঈদ বাজার। তবে অন্যবারের চেয়ে দাম বেশি হওয়ার দাবি করেছেন ক্রেতারা।
ঈদের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে ব্যবসায়ীরা জানান, এবারের ঈদে গ্রাহকদের চাহিদামত পণ্য সরবরাহে ব্যবসায়ীরা নতুনভাবে পুঁজি বিনিয়োগ করায় ইতোমধ্যে বাজারে নতুনত্ব ও ঈদের আমেজ শুরু হয়েছে। আগের বছরগুলোর ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবারের ঈদে পণ্য বিক্রিতে মনোযোগ দিয়েছে ব্যবসায়ীরা। এখন তাঁরা নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। ময়মনসিংহের বিভিন্ন মার্কেটে পোশাক, প্রসাধনী, জুতা ও গয়নার দোকানে বেড়েছে ক্রেতাদের ভিড়।
ক্রেতারা বলছেন, করোনার বিধিনিষেধের কারণে দীর্ঘদিন কেনাকাটা করতে না পারলেও এবার সুযোগ পেয়ে কেনাকাটা করছেন। তবে, দাম একটু বেশি থাকায় চাহিদা অনুযায়ী কেনাকাটা করতে পারছেন না অনেকেই । এ ছাড়া নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার প্রভাব পড়েছে ঈদের বাজেটেও।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এবার ঈদের কেনাকাটায় তরুণীদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে সারারা, গারারা, পুস্পা, তাওয়াক্কাল নামের বাহারী পোষাক। ময়মনসিংহের অভিজাত বিপণী বিতান ও শপিংমলগুলোতে প্রতিদিন বাড়ছে ক্রেতা সমাগম। নজরকাড়া রকমারি ডিজাইনের শাড়ী, পাঞ্জাবি, থ্রি-পিসের পাশাপাশি নতুন নতুন ব্র্যান্ডের জমকালো পণ্যের পসরা সাজিয়ে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করছেন দোকানীরা। ঈদের কেনাকাটায় পোষাক পছন্দ করতে ক্রেতারা চষে বেড়াচ্ছেন এক মার্কেট থেকে আরেক মার্কেট। তবে এ পর্যন্ত শিশুদের পোশাক বেশি বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছেন দোকানিরা। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত খোলা থাকছে নগরীর বিপণী বিতানগুলো, রয়েছে জোরদার পুলিশি টহল।
কসমেটিক ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি কাজী নজরুল ইসলাম বলেন, আমাদের পণ্যগুলো ঈদের শেষের দিকে বেচাকেনা বাড়ে। তবে ইতোমধ্যে বেচাকেনা শুরু হয়ে গেছে। আশা করছি শেষ দিকে বিক্রি আরো বাড়বে এবং কসমেটিক ব্যবসায়ীরা করোনাকালীন লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারবে।
নগরীর মফিজ উদ্দিন ইনডেক্স প্লাজার পোষাক ব্যবসায়ী খোরশেদ আলম বলেন, গত দীর্ঘদিনের ক্ষতি এ বছর কিছুটা হলেও পুষিয়ে নেয়া যাবে। এছাড়া বর্তমান দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি গার্মেন্টস ব্যবসায়েও ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। যেখানে ২০১৯ সালের রমজানের এ সময়ে দৈনিক লাখ টাকার বেশি বিক্রি হতো সেখানে তা এখন কমে ৭০ থেকে ৯০ হাজার টাকা।
সূচনা সেন্টার পয়েন্টের পোষাক ব্যবসায়ী সালমান বলেন, মার্কেটের অধিকাংশ ব্যবসায়ীরা ঈদ উপলক্ষে নতুন বিনিয়োগ করেছে। পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলে এবং সাধারণ মানুষ আবার আগের মতো ঈদের মার্কেটে কেনাকাটা করলে করোনাকালীন ক্ষতি কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে।
বাসাবাড়ী হর্কাস মার্কেটের থান কাপড় ও থ্রি-পিস ব্যবসায়ী মো: রনি বলেন, আমাদের মার্কেটে আনস্টিস থ্রি-পিস, টু পিস, ওড়না ও থান কাপড় ব্যবসা থাকায় ইতোমধ্যে আমাদের ব্যবসা ব্যাপক ভাবে জমে উঠেছে। কারণ, আমাদের মার্কেটের পণ্যগুলো নিয়ে টেইলারিং করতে হয়। তাই রোজার প্রথম থেকেই আমাদের ব্যবসা জমজমাট।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কামরুল ইসলাম বর্তমান দেশের অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট চিন্তা করে এবার বেশি দামের বস্ত্র মজুদ করা হয়নি। সাধারণ মধ্য ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির কথা মাথায় রেখে কাপড় মজুদ করা হয়েছে। আশা করি জমজমাট বেচাকেনা হবে।
নগরীর বারী প্লাজায় নিজের এবং স্বামী-সন্তানের জামা কিনতে এসেছেন স্কুল শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌস সানি। পোষাকে কিছুতো নতুনত্ব আছেই। তবে বিগত বছরের তুলনায় একইরকম পোশাকের দাম আগের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে। তিনি বলেন, সকালে বাসা থেকে বের হয়ে দুপুর পর্যন্ত ঘুরেছেন বিভিন্ন মার্কেট ও শপিংমলে। শেষ পছন্দের ঈদ পোশাক কিনে বাড়ি ফিরছেন তাঁরা।
নয়া শতাব্দী/এমআরএইচ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ