ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কাঁকড়া চাষে ঝুঁকছে সাতক্ষীরার চাষীরা

প্রকাশনার সময়: ২৪ এপ্রিল ২০২২, ২০:৪৪

সাতক্ষীরা উপকূলীয় এলাকার লোনা পানি ও আবহাওয়া কাঁকড়া চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় প্রতি বছরই বাণিজ্যিকভাবে বাড়ছে এর চাষ। সাদাসোনা খ্যাত বাগদা চিংড়িতে মড়ক ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়সহ বিভিন্ন কারণে মাছ উজাড় হয়ে যাওয়ার ফলে এ চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন অনেক চাষী। একই জমিতে কাঁকড়ার পাশাপাশি সাদা মাছ চাষ করা সম্ভব বলে আগ্রহ বাড়ছে কাঁকড়া চাষে।

কাঁকড়া চাষ লাভজনক ও বিদেশে রপ্তানিযোগ্য হওয়ায় উপকূলীয় অঞ্চল শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালিনীতে ক্রিকেটের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান ৪০ বিঘা জমির উপরে গড়ে তুলেছেন- সাকিব আল হাসান এগ্রো ফার্ম নামে একটি কাঁকড়ার খামার।

করোনাকালীন সময়ে ২ বছর বিদেশে কাঁকড়া রপ্তানি বন্ধ থাকায় অনেক চাষী এই চাষ বন্ধ করে দেয়। তবে আবার ও রপ্তানি শুরু হওয়াতে এ চাষে ঝুঁকছেন অনেকে। কাঁকড়ার পোনা পর্যাপ্ত উৎপাদন হলে সাতক্ষীরায় কাঁকড়া চাষের সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

সাতক্ষীরা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে উপকূলীয় উপজেলা শ্যামনগর ও আশাশুনিসহ বিভিন্ন উপজেলায় এ বছর কাঁকড়া চাষ হয়েছে ৩১৪ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এক হাজার ৯০০ মে. টন। ৭ বছর আগে কাকড়া চাষ হয়েছিল মাত্র ৫০ হেক্টর জমিতে। ৭ বছরে কাঁকড়া চাষ বেড়েছে ৬ গুন। এ সব কাঁকড়া ইউরোপ, আমেরিকা, চীনসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানী করা হচ্ছে।

শ্যামনগরের কাঁকড়া চাষী গৌতম সরকার বলেন, প্রতি বছর ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়ে মাছ ভেসে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়। তাছাড়া চিংড়ি পোনার লবণ সহনীয় ক্ষমতার ভারসাম্য না থাকায় ভাইরাসে বাগদা মরে উজাড় হয়ে যায়। বর্তমানে খাচা পদ্ধতিতে ৬ বিঘা জমিতে কাঁকড়া চাষ শুরু করেছি।

সৌরভ সরকার বলেন, আমাদের এখানে বেশিরভাগ খাঁচা পদ্ধতিতে কাঁকড়া চাষ করা হয়। বিদেশে সফটশেল কাঁকড়ার চাহিদা বেশি। ৭শ’ খাঁচায় কাঁকড়া চাষ করতে সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা খরচ হয়। এবং বাজার ভালো থাকলে হয় ৫-৬ লক্ষ টাকা বিক্রয় করা যায়। তাছাড়া একই জমিতে সাদা মাছের চাষ করা হয়।

দূগাবাঁটি এলাকার দীপঙ্কর বলেন, এ বছর কাঁকড়ার চাষ বেশ ভালো। এ গ্রেডের কাঁকড়া বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকায়। বি গ্রেডের কাঁকড়া বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ টাকায়। আর সি গ্রেডের কাঁকড়া বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকায়। এখানের কাঁকড়া বিদেশে রপ্তানি করা হয়।

সুন্দরবনের নদী থেকে কাঁকড়া ধরে ঘেরের খাঁচায় চাষ করা হয়। বছরের বেশ কিছুদিন জেলেদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয় সুন্দরবনে প্রবেশে। এখানে কাঁকড়া সংগ্রহে বাধাগ্রস্ত হয় চাষীরা। সমস্যা সমাধানে হ্যাচারী স্থাপনে উৎসাহ দিলেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আনিসুর রহমান জানান, সাতক্ষীরায় কাঁকড়া চাষের জন্য সম্ভাবনাময়। সফটশেলের চাহিদা বেশি। কাঁকড়া প্রসেসিং প্লান্ট রয়েছে শ্যামনগরে, যার মাধ্যমে কাকড়া সরাসরি বিদেশে যাচ্ছে। ঝুঁকি কম বলে অনেকেই এ চাষে ঝুঁকছেন। সমস্যা হলো পোনা নিয়ে। পোনা সবই সুন্দরবন থেকে সংগ্রহ করা হয়। বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি ও জুন-জুলাইয়ে সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরা নিষিদ্ধ থাকে। তখন কাঁকড়া পোনা সংকটে পড়েন চাষীরা। তাই হ্যাচারী স্থাপন প্রয়োজন। সরকারিভাবে দেশে শুধুমাত্র কক্সবাজারে হ্যাচারী রয়েছে। আমরা বেসরকারিভাবে হ্যাচারী স্থাপনে উৎসাহ দিচ্ছি চাষীদের।

নয়া শতাব্দী/জেআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ