করোনায় দীর্ঘ বিরতির পর এবার আবারো চাঙা হয়ে উঠেছে ঈদ বাজার। আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন ঘনিয়ে আসায় রাজশাহীর চিরচেনা সাহেব বাজার, সপুরার সিল্ক পল্লী, নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন ঈদ মার্কেটে কেনাবেচা জমে উঠেছে। বিশেষ করে রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী সিল্কের পোষাকের দিকেই ক্রেতাদের মনোযোগ বেশি।
তবে সিল্কের পোষাকের দাম বেশি হওয়ায় উচ্চবিত্ত শ্রেণির মানুষকেই কেবল সেখানে ভিড় জমাতে দেখা যাচ্ছে। ঈদ বাজারে হৈ হুল্লোড়, আনন্দ- উল্লাসে দরদামে মেতে উঠছেন দোকানিরা। কেনাকাটার বাড়তি চাপে রাস্তায় যানজট পরিলক্ষিত হচ্ছে।
বরাবরের মতো এবারও ঈদ উপলক্ষে রাজশাহী সিল্ক কাপড়ের চাহিদা বেশি। প্রিয়জনকে সিল্কের একটা শাড়ি বা পাঞ্জাবি ঈদে উপহার দিতে রাজশাহীর অধিকাংশ স্বচ্ছল পরিবার ছুটছেন সিল্ক শোরুমগুলোতে। তবে এবার গত কয়েক বছরের চাইতে রোজার শুরু থেকেই সিল্ক কাপড়ের চাহিদা বেড়েছে। শোরুমগুলোতেও এবার কাপড়ে এসেছে নতুনত্ব। বেচা-কেনাও জমেছে। গভীর রাত পর্যন্ত রেশম নগরী হিসেবে খ্যাত রাজশাহী সিল্কপল্লীর শোরুমগুলোতে চলছে বেচা–কেনা।
নগরীর সিল্ক শো-রুমগুলোতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঈদ উপলক্ষে এবারো কাপড়ে এসেছে বাহারি রং ও ডিজাইন, এনেছে নতুনত্ব। এম্ব্রয়ডারি, মসলিন, বলাকা, তসর, এন্ড্রি, ধুপিয়ানি, সফট সিল্ক, জয়শ্রী সিল্কের ওপর আকর্ষণীয় কারুকাজে সাজানো হয়েছে শাড়ি, থ্রি-পিচ, ছেলেদের সার্ট, পাঞ্জাবীগুলো। তবে এবার সিল্কের বহরে যোগ হয়েছে মসলিনের ওপর আর্টপ্রিন্ট শাড়ি। এটি নিয়ে এসেছে সিল্ক কাপড়ের জগতে বাহারি ডিজাইনের অন্যতম প্রতিষ্ঠান সপুরা সিল্ক শোরুম। বিশেষ করে সিল্কের সব কাপড়ই নিজেদের ফ্যাক্টরিতে উৎপাদন করে বাজারজাত করে তারা। এবার নতুন যোগ হওয়া মসলিনের ওপর আর্টপ্রিন্ট শাড়ির চাহিদাও শাড়া ফেলেছে ক্রেতাদের মাঝে বলে জানান সপুরা সিল্ক শো-রুমের ইনচার্জ সাইদুর রহমান।
তবে সিল্ক পোষাকের বাইরে অন্যান্য পোষাকের দামও এবার বেশ চড়া। অধিক মূল্যের কারণে নিম্ন আয়ের মানুষ শিশুদের জন্য নতুন পোষাক ক্রয়ে ভোগান্তিতে পড়ছেন। নিম্ন শ্রেণির মানুষ তাদের নির্ধারিত বাজেটে পোষাক কিনতে কোনোভাবেই কুলিয়ে উঠতে পারছেন না।
রাজশাহী নগরীর বাসিন্দা তরিকুল ইসলাম সৈকত নয়া শতাব্দীকে বলেন, ঈদ উৎসবের চলতি ধারা মেনে বোনাসের পুরো টাকাটা নিয়ে বেড়িয়ে পড়ি শিশুদের বায়না মেটাতে। শনিবার নগরীর সাহেব বাজার ও নিউমার্কেটে ঢুকতেই দেখি বিপনিবিতান গুলোয় হুমড়ে পড়েছে ক্রেতারা। সাধ্যাতিত চেষ্টা করেও চড়া মূল্য ও ভ্যাপসা গরমের কারণে প্রথম দফায় ফিরে আসি। রোববার দ্বিতীয় দফায় চেষ্টায় বাজার ঘুরে ঘুরে দেখা গেছে, শিশুদের পোষাকের দাম ব্যাপক চড়া। শিশুদের জামার দাম হাঁকছেন আড়াই হাজার, তিন হাজার টাকা। অনেক ঘুরে ১ হাজার টাকা দিয়ে শিশুর জন্য একটি জমা কিনেছেন বলে জানান তিনি। বাড়তি ভিড় ও তীব্র গরমে আর বাজারে থাকা সম্ভব হয়নি।
রাজশাহীর বৃহৎ সপুরা সিল্ক ফ্যাক্টরি ও শোরুম ঘুরে দেখা গেছে, রাজশাহীর বিসিক শিল্প এলাকায় মঠপুকুরের পাশেই বিশালাকার এলাকাজুড়ে সপুরা সিল্ক শো-রুম। শো-রুমটির নিচেই রয়েছে সিল্ক কাপড়ের ফ্যাক্টরি। সেখানেই তৈরি হচ্ছে ক্রেতাদের চাহিদা মতো শাড়ি, থ্রি-পিস, পাঞ্জাবি, সার্ট। আর ওপরে দোতলা ও তিন তলায় সেই কাপড় বিক্রি হচ্ছে। সিল্ক ফ্যাক্টরির শ্রমিকরা কাপড় তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। শো-রুমে চলছে কেনা-কাটা।
সপুরা সিল্ক শো-রুমে সিল্কের শাড়ি কিনতে আসা জাহিদা পারভীন নামের এক নারী বলেন, ‘রাজশাহীর সিল্ক কাপড় ঈদে বাড়তি আনন্দ দেয়। এর কদর দেশজুড়ে। উৎসব পার্বনে এই সিল্ক কাপড় প্রিয়জনের হাতে তুলে দিতেও ভালো লাগে। তাই নিজের জন্য এবং বাড়ির সদস্যদের জন্যও কিনি প্রতি বছর। এবারও কিনতে এসেছি কয়েকটি শাড়ি।’
এ শো-রুমে শাড়ি কিনতে এসেছিলেন ঢাকার একজন সরকারি কর্মকর্তা হাসনাইন খুরশেদ। রাজশাহীতে এসেছিলেন অফিসের কাজে। কাজ শেষ করেই তিনি ছুটে যান সপুরা সিল্ক শো-রুমে। গিয়ে তিনি স্ত্রীর জন্য একটি শাড়ি ও মেয়ের জন্য থ্রি-পিচ কেনেন। নিজের জন্য একটা পাঞ্জাবী খুঁজতেছিলেন। একটার পর একটা পাঞ্জাবী দেখছিলেন। এসময় কথা হয় তার সাথে। তিনি বলেন, অনেকদিনে সখ ছিল সিল্ক শো-রুমে গিয়ে ঈদের কেনাকাটা করবো। এবার অফিসিয়াল কাজে এসে এসে সেই সুযোগও পেলাম। তাই কাজে লাগালাম।’
রাজশাহীর সাহেব বাজার এলাকার মনিজা পারভীন নামের এক নারী বলেন, চড়া মুল্যের কারণে সাধ থাকলেই কি সাধ্য আছে? মন চাইলেও দুই-একটার বেশি নেয়া সম্ভব নয়। তাই একটু বেছে বেছে দেখার চেষ্টা করছি।’
সপুরা সিল্ক শো-রুমের ব্যবস্থাপক সাইদুর রহমান জানান, এবাারো ঈদ উপলক্ষে নারীদের শাড়ি কাপড়, থ্রিপিস, সালোয়ার, পুরুষদের পাঞ্জাবিতে আনা হয়েছে নতুনত্ব। পাশাপাশি পুরনো ডিজাইনের তৈরি কাপড়গুলোও রয়েছে। এবারের ঈদে তাদের বড় আকর্ষণ কাটোয়ার ডিজাইনের শাড়ি। আর আছে র-সিল্কের ওপর হাতের কারুকাজ। বিভিন্ন ডিজাইনের এই শাড়িগুলোর দাম রাখা হয়েছে তিন হাজার ৫০০ টাকা থেকে ১৮ হাজার ৫০০ টাকা। মসলিনের আর্ট প্রিন্ট শাড়ির দাম ধরা হয়েছে ৩ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা।
এছাড়াও সফট সিল্ক শাড়ি কাপড় বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৫০০ টাকা থেকে আট হাজার টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়া বাটিক সিল্ক তিন হাজার ২০০ থেকে পাঁচ হাজার টাকা, বলাকা সিল্ক ৭ থেকে ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সিল্কের তৈরি থ্রিপিস বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৬০০ থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত। এছাড়া ঈদের ভাল চলছে পার্টির ড্রেসও। শিশু-কিশোরীদের মধ্যে বেশ সারা ফেলেছে। মসলিন সিল্কের এই কাপড়, পড়বে ১২ হাজার টাকা।
‘উষা সিল্ক’র ব্যবস্থাপক জহুরুল ইসলাম বলেন, মেয়েদের থ্রিপিসের মধ্যে রয়েছে মসলিন এমব্রয়ডারি, মসলিন এপলিক, সফট সিল্ক, এনডি সিল্ক ও বিভিন্ন হাতের কাজ করা থ্রিপিস। আড়াই হাজার থেকে সাড়ে ছয় হাজার টাকায় এসব থ্রিপিস বিক্রি হচ্ছে। আবার ২০ হাজার টাকা দামেরও থ্রিপিস রয়েছে। শাড়ি বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ থেকে ২২ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ