ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইটনায় পানির নিচে কৃষকের সোনালী ধান

প্রকাশনার সময়: ২৩ এপ্রিল ২০২২, ১৭:৩৭ | আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২২, ১৭:৩৯

কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনার তলার হাওরসহ বিভিন্ন হাওর সম্পূর্ণ ডুবে গেছে। সোনার ধান ফসল হারিয়ে কৃষক পরিবারের মধ্যে হতাশা নেমে এসেছে। ফসলের কথা বলতে গিয়ে কৃষকরা ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। সেই সাথে বাড়ির কৃষাণীদের মাঝে নতুন ফসল তোলার আনন্দ বিষাদে পরিণত হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ইটনার রায়টুটি ইউনিয়নে ১০হাজার হেক্টর জমির মধ্যে প্রায় ৫হাজার হেক্টর জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। এই ইউনিয়নের কৃষক তাজ্জাত আলী (৬১) নয়া শতাব্দীকে বলেন যে, ঋণ করে জমা রেখে তলার হাওরে ২ আড়া (৩২০শতাংশ) জমিতে বিআর ২৮ধান চাষ করেছিলাম। সবগুলো ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। বাকী বছর চলতে গেলে আমাকে মুজুরি কেটে, মাটি কেটে অথবা রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতে হবে। একই গ্রামের কৃষক শামিম বলেন, কি আর বলবো, জমির কথা, ভাষা নেই। আমি তলার হাওরে ৮ আড়া জমিতে ধান করেছিলাম। সব জমি এখন পানির নিচে। কিছু ধান কেটেছিলাম কাঁচাপাকা তা দিয়ে কোনরকমে অন্নযোগ যোগ হবে। কিন্তু ঋণ দিতে পারবো না।

উত্তর রাইটুটি গ্রামের কৃষক ইছব আলী (৬০) জানান, আমি ৪-৫আড়া জমিতে ধান করেছিলাম। সব ধান জমি পানির নিচে। মগড়া নদীর পাড় ঘেঁসে গজারিয়া থেকে রোহাকান্দা পর্যন্ত যদি বেড়ি বাঁধ থাকতো তাহলে আমাদের জমি পানিতে নিমজ্জিত হতো না। আমরা নিশ্চিন্তে থাকতাম।

কৃষাণী আমেনা খাতুন বলেন, আমার বাড়ির কর্তা তলার হাওরে ধান চাষ করছিলেন। তার সবগুলো জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। আমাদের পরিবারের কারো মনে আনন্দ নেই। ধান হারিয়ে কর্তার মুখ সবসময় মলিন থাকে। সংসারের প্রয়োজনীয় জিনিষ আনতে এখন হিমশিম খাচ্ছি। ডুঁকরে কাঁদতে পারছি না এ অবস্থায়। সরকার যদি এই রোজার ঈদের আগে আমাদের দিকে সুদৃষ্টি দেয় তাহলে আমরা উপকৃত হবো।

রায়টুটির গ্রামের সমাজ সেবক ও রাজনৈতিক ব্যক্তি মাহিন মিল্কী বলেন, উজানের পানিতে ধানি জমি তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকের এ ক্ষতি কয়েক বছরেও পুষিয়ে নেয়া কষ্টকর হবে। ইটনার রাইটুটির তলার হাওরকে রক্ষা করতে মগড়া নদীকে ঘিরে বাঁধ দেয়া অতি জরুরি। এছাড়াও ধনুনদীসহ সবকটি নদী পাড়ের বাঁধগুলো যদি দেয়া যায় তাহলে কৃষকরা নিশ্চিন্তে ধান চাষ করতে পারবে এবং সোনার ফসল ধান ফসল ঘরে তুলতে পারবে। বর্তমান কৃষক বান্ধব সরকারকে কৃষকদের কথা মাথায় রেখে এ কাজগুলো করতে হবে।

রায়টুটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনামূল হক খান বাবু মিল্কী বলেন, আমার ইউনিয়নের প্রায় ১০হাজার হেক্টর জমির মধ্যে প্রায় ৫হাজার হেক্টর জমির ফসল পানিতে ডুবে গেছে। এতে হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। নদীগুলোকে ঘিরে বেড়ি বাঁধ নির্মাণের জোর দাবি জানাচ্ছি সরকারের কাছে। না হলে প্রতিবছর ফসলহানির ঘটনা ঘটবে এবং কৃষক সর্বশান্ত হবে।

নয়া শতাব্দী/জেআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ