কথায় বলে-আমের আনা মাছের পাই/যদি টিকে যায়/কে কত খায়। শত প্রতিকুল আবহাওয়াতেও শেষ পর্যন্ত বাজারে আমের ঢল নামে। এবারো ঘটতে পারে সেই দশাই। আমের রাজধানী খ্যাত রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ অঞ্চলে এখন গাছে গাছে উঁকি দিচ্ছে রসালো আম।
গত সপ্তাহে এই অঞ্চলে বয়ে যাওয়ায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার কারণে গুটি আম ঝরে পড়েছে। তবে গত মঙ্গলবার রাত ও বুধবার সকালে দুই দফা বৃষ্টিপাত আমের জন্য আর্শীবাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গুটি রক্ষায় চাষিরা শ্যালোমেশিন দিয়ে আম গাছে পানি স্প্রে করেছেন। অনাবৃষ্টির কারণে এবার আমের গুটি ঝরে যাওয়ায় ফলনে কিছুটা ছন্দপতন ঘটতে পারে। তবে বর্তমানে আবহাওয়া আবার অনুকূলে আসায় আমের ফলনে আবারও চাঙা ভাব বিরাজ করছে বলে জানান আম চাষিরা।
বর্তমানে গাছে গাছে আম মাঝারি সাইজের আকার ধারণ করেছে। চাষিরা আমের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। বিশেষ করে মৌসুমি আম ব্যবসায়ীরা এখন বাগান ক্রয়ে দরকষাকষিতে মেতেছেন। কারণ রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম দেশে আমের চাহিদা পূরণ করে থাকে। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হয় বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলের আম। তাই আমকে ঘিরে এখন চাষি ও ব্যবসায়ীরা স্বপ্নপূণের অপেক্ষায় রয়েছেন। আমের মৌসুমে রাজশাহীতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীদের সমাগম ঘটে। বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে শিক্ষার্থীরাও স্বল্প সময়ের জন্য হলেও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অনলাইনের মাধ্যমে আমের ব্যবসা করে থাকেন। কোটি কোটি টাকার ব্যবসা জমে উঠে এই অঞ্চলে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম নয়া শতাব্দীকে বলেন, চলতি মৌসুমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ৩৭ হাজার ১৬৫ হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়েছে। বাগান থেকে এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৯৭ হাজার ২৩০ মেট্রিক টন। তিনি বলেন, সম্প্রতি শিবগঞ্জ উপজেলায় শিলাবৃষ্টির কারণে হাল্কা আমের গুটি নষ্ট হয়েছে। তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল, গোমস্তাপুর, ভোলাহাট উপজেলায় আমের খুব ভালো ফল এসেছে। আমরা আাশা করছি জেলায় এবার আমের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে আমের ফলনও ভালো হবে।রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, রাজশাহী জেলায় ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমির বাগান থেকে এবার আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৭৬ মেট্রিক টন। মৌসুমের শুরুতে গাছে মুকুল ভালো এসেছিল। তবে এবার রাজশাহীতে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার কারণে অনাবৃষ্টিতে আমের গুটি ঝরে পড়েছে। তাই শুরুতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা একটু বেশি ধরা হলেও এখন তা কিছুটা কম ধরা হয়েছে। তবে বর্তমানে আবহাওয়ার কিছুটা পরিবর্তন হওয়ায় আমের উৎপাদন ভালো হবে বলে জানায় রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আলীম উদ্দীন নয়া শতাব্দীকে বলেন, বর্তমান আবহাওয়া আমের জন্য অনুকূলে। মাঝখানে তীব্র গরমের পর বৃষ্টি আমের জন্য আর্শীবাদ। গত বুধবারের বৃষ্টিপাত আমসহ মৌসুমি সকল ফলের জন্য খুবই উপকার হয়েছে। তবে অনাবৃষ্টির কারণে কিছু আমের গুটি ঝরে গেছে। কিন্তু যে পরিমান আম গাছে রয়েছে তা টিকে থাকলেই উৎপাদন ভালো হবে বলে জানান তিনি।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ