ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

যমুনা নদীর ভাঙনে আতঙ্কিত নদী পাড়ের মানুষ

প্রকাশনার সময়: ১৮ এপ্রিল ২০২২, ২১:৩৯

সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে যমুনা নদীতে আবারও ভাঙন শুরু হয়েছে। গত কয়েকদিনে যমুনা নদীর পানি দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাঙন শুরু হয়েছে। এনায়েতপুরের ব্রাক্ষনগ্রাম, আরকান্দি ও জালালপুরে ভাঙনে তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ভাঙনে ঘরবাড়ি, ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ভাঙনের আশঙ্কায় অনেকে ঘরবাড়ি আসবাপত্র অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন।

এদিকে ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য স্থানীয় এলাকাবাসী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জানিয়েছেন, এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে হাটপাচিল পর্যন্ত সাড়ে ৬ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষা কাজের জন্য সাড়ে ৬’শ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। সেই অনুযারী কাজও শুরু হয়েছে।

তবে এলাকাবাসীর অভিযোগ- নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের ১০ ও ১৪ নং প্যাকেজ এলাকার কাজ এখনও শুরু হয়নি। ইতোমধ্যে যমুনা নদীতে দ্রুত গতিতে পানি বাড়তে শুরু করেছে। পানি বৃদ্ধির ফলে এই এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনের কারণে এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এজন্য বর্ষা শুরু আগেই ১০ ও ১৪ নং প্যাকেজ এলাকার কাজ শুরুর দাবি জানান তারা।

সিরাজগঞ্জ জেলা যমুনা নদী বেষ্টিত। জেলার ৫টি উপজেলা যমুনার তীরে অবস্থিত। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়। ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড শহর রক্ষা বাঁধ হার্ড পয়েন্টসহ ৪টি ক্রস বাঁধ নির্মাণ করলেও ভাঙন থেকে রক্ষা পচ্ছে না সিরাজগঞ্জের মানুষ। ২০২১ সালের ২৯ জুন সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধের ১৫০ মিটার ও কাজীপুর উপজেলার মাইজবাড়ি ইউনিয়নের ঢেকুরিয়ায় নির্মাণাধীন ইকোপার্কের গাইড বাঁধে ধস নেমে যমুনা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

জেলার সবচেয়ে বেশি ভাঙন কবলিত এলাকা চৌহালী উপজেলার এনায়েতপুর ও শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুড়ী ইউনিয়ন। গত বছরের বন্যায় শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুড়ী, জালালপুর ও খুকনী ইউনিয়নের পাচিল, হাট পাচিল, পাকরতলা, ব্রক্ষনগ্রাম, জয়পুরা, আরকান্দি, কুঠিপাড়া, ভেকা গ্রামের প্রায় ৪ শতাধিক ঘরবাড়ি যমুনা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন কবলিত মানুষ ‘বাঁধ নির্মাণের দাবিতে একাধিবকার মানববন্ধন, সভা, সেমিনার, অনশন পালন করেছে।

স্থানীয় জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী সুলতান মাহমুদ বলেন, এনায়েতপুরকে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করতে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি পয়েন্টে কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু ১০ ও ১৪ নম্বর পয়েন্টে কাজ শুরু করা হয়নি। গত কয়েকদিন ধরে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পানি বৃদ্ধির কারণে ভাঙনও শুরু হয়েছে। বর্ষা শুরুর আগেই এই দুটি পয়েন্টে দ্রুত কাজ শুরু করতে না পারলে ভাঙনে নিঃশ্ব হবে এলাকার মানুষ। দ্রুত সময়ে কাজ শুরু করার দাবিতে এলাকাবাসী মানববন্ধন করেছে।

স্থানীয় কামরুল জামান কামরুল বলেন, এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে হাটপাচিল পর্যন্ত সাড়ে ৬ কিলোমিটার নদীর তীর রক্ষা কাজের জন্য সরকার বরাদ্দ দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানাই। এজন্য এলাকাবাসী আনন্দিত। তবে গত কয়েকদিন হলো নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এমতাবস্থায় পূর্ণ্য বর্ষা শুরুর আগেই ভাঙন কবলিত এলাকায় দ্রুত কাজ শুরুর দাবি জানাচ্ছি।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এসটিসি গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক সরদার ফরিদ হোসাইন বলেন, ১০ ও ১৪ নং পয়েন্টে আমরা কাজ শুরু করার জন্য একাধিকবার চেষ্টা করেছি। কিন্তু মালামাল রাখার জায়গা পাচ্ছি না। এজন্য কাজ শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না। আমরা স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বার সহায়তা নিচ্ছি। আশাকরি দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শুরু করতে পারবো।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড সাড়ে ৬’শ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে। চৌহালী উপজেলার এনায়েতপুর স্পার বাঁধ থেকে উজানের শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুড়ী ইউনিয়নের পাচিল পর্যন্ত সাড়ে ৬ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। নদীর ডান তীরে স্লোব তৈরি করা হয়েছে। বালির বস্তা দিয়ে নদীর তীর ঢেকে দেয়া হবে। এজন্য দ্রুত গতিতে কাজ চলছে।

নয়া শতাব্দী/জেআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ