গাজীপুরের কাপাসিয়ায় অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে কয়লা কারখানা। এই কারখানাগুলোতে শাল-গজারি, আকাশমনি, ইউক্যালিপটাস, মেহগনি ও বেলজিয়ামসহ নানা প্রজাতির গাছ পোড়ানো হচ্ছে কয়লা বানানোর কাজে।
অবৈধভাবে কারখানাগুলো গড়ে উঠায় কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে। শিশু, বৃদ্ধ, পশু-পাখি ও বন্যপ্রাণিদের নানা শ্রেণির মানুষ অসুখ-বিসুখে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়াও শাল-গজারিসহ সামাজিক বনায়ন উজাড় করে ফেলছে একটি চক্র।
সরেজমিনে দেখা যায়, তরগাঁও গ্রামের উত্তর শেষ প্রান্তে চিনাডুলি গ্রামের সাথে বড় বড় ৫টি চুল্লির ভেতর কাঠ পুড়িয়ে কয়লা বানানো হচ্ছে। এ চুল্লির মালিক ওই এলাকার কাওসার। এছাড়া উপজেলার রায়েদ ইউনিয়নের পোড়া বাজার সংলগ্ন আমতলি এলাকায় রাস্তার সাথে ৫টি বড় মাটির চুলা দিয়ে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করছেন মিলন মিয়া। সে সরকারি রাস্তা দখল করে কাঠগুলো রাস্তার উপরই রেখেছে। এসব কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে সামাজিক বন ঘেঁষে এবং ঘনবসতি এলাকায়।
কয়লা বানানোর হচ্ছে মাটির তৈরি বড় আকারের চুলায়। সংরক্ষিত ও সামাজিক বন থেকে আনা কাঠ ওই চুলায় দিন-রাত পুড়িয়ে কয়লা বানানো হচ্ছে।
কারখানার আশপাশে বিশাল আকৃতির কাঠ স্তুপ করে রাখা হয়েছে। চার-পাঁচজন শ্রমিক দিন-রাত কাঠ চুলায় পোড়ানোর কাজ করছেন। দিনরাত ওইসব চুলা থেকে নির্গত ধোঁয়া গ্রামে ছড়িয়ে পড়ছে। এতে এসব এলাকার শিশু, বৃদ্ধ, গবাদি পশু-পাখিসহ ফসলও নানা রোগে আক্রান্ত ও ক্ষতিগস্ত হচ্ছে। ধ্বংস হচ্ছে সামাজিক বনায়ন ও সংরক্ষিত শাল-গজারি।
কারখানা থেকে ১০০ গজের মধ্যে আবদুল ফারুক হুসেনের বাড়ি। তিনি বলেন, দিনরাত কারাখানার ধোঁয়া ও গন্ধে বাড়িতে থাকা যায় না। পরিবারের প্রায় সকলেই কোন না কোন অসুখে আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষ করে কাশিতো আছেই।
পরিবেশ অধিদফতরের তথ্য মতে, জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদফতরের কোনো অনুমোদন ছাড়াই অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এসব কয়লা তৈরির কারখানায় অবাধে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। অবৈধ থাকা সত্ত্বেও জনবসতি এলাকায় ও ফসলি জমি নষ্ট করে এসব চুল্লি স্থাপন করা হয়েছে। শক্ত কাঁচা লাল মাটি, ইট ও কাঠের গুঁড়া মিশিয়ে তৈরি করা চুল্লিতে প্রতিদিন কয়েকশ মণ কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। একটি চুল্লিতে সপ্তাহে কমপক্ষে ৩০০-৩৫০ মণ কাঠ পোড়ানো হয়।
গোসিংগা বন বিট কর্মকর্তা মনিরুল ইসলামের মুঠোফোনে ফোন দিলে তাকে পাওয়া যায়নি। সালনা বিট কর্মকর্তা বিপ্লব হোসেন বলেন, কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করা দায়ি ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। বনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে করাতকলসহ বন ও পরিবেশ বিধ্বংসী কোনো কারখানা গড়ে তোলা বেআইনি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার একেএম গোলাম মোর্শেদ খান বলেন, ‘খুব শিগগিরই ওইসব কয়লা কারখানা উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করা হবে।’
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ