বরিশালের গৌরনদীতে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে শারীরিক নির্যাতন করে আটকে রাখার অভিযোগে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. মো. টিপু সুলতানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মামলার বাদী ৪২তম বিসিএসের স্বাস্থ্য ক্যাডারে সদ্য নিয়োগ পাওয়া নারী চিকিৎসক ডা. মিলাদুজ্জাহান ইরাও (২৮) একই হাসপাতালে কর্মরত। ভুক্তভোগী ডা. ইরার বাড়ি কুমিল্লা সদর থানার দৈয়ারা কচুয়া চৌমুহুনী গ্রামে।
গ্রেফতার ডা. মো. টিপু সুলতান ৩৮তম বিসিএস ক্যাডার। তার বাড়ি গৌরনদী উপজেলার নলচিড়া গ্রামে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ২০২১ সালের আগস্ট মাসে ডা. মিলাদুজ্জাহান ইরা’র সঙ্গে ডা. টিপু সুলতানের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই ডা. টিপু ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে স্ত্রীকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করতে থাকে।
গত ৪ জানুয়ারিতে টিপু সুলতান তার নলচিড়া গ্রামের বসতবাড়ির দক্ষিণ পাশের একটি রুমে ইরাকে আটক করে মারধর করেন। একপর্যায় সিলিং ফ্যানে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ঝুলিয়ে হত্যার চেষ্টা করেন। অনেক অনুরোধ ও ১০ লাখ টাকা দেয়ার আশ্বাস দিয়ে ওই অবস্থা থেকে ইরা মুক্তি পান। পরে ইরা তার বাবাকে বিষয়টি জানালে তিনি টিপুর বাবার সাথে কথা বলে একটি সমাঝোতার চেষ্টা করেন। কিন্তু ডা. টিপুর বাবা আওয়ামী লীগ নেতা মো. বাদশা ফকির তাতে কর্ণপাত করেননি।
এরপর গত ৩রা এপ্রিল টিপু তার স্ত্রী ইরাকে নিয়ে গৌরনদী উপজেলা সদরের প্রাইভেট একটি ক্লিনিকের তৃতীয় তলার একটি রুমে আটকে রাখেন। সেখানে বসে যৌতুকের ১০ লাখ টাকার জন্য তিনি পুনরায় ইরাকে মারধর করে জখম করেন। এ সময় ওই ক্লিনিকের কর্মীরা এগিয়ে এলে ইরাকে নিয়ে টিপু তার বাড়িতে চলে যান। এরপর বাড়ি’র একটি কক্ষে ইরাকে আটকে রেখে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নিয়ে যায়।
পরে এক প্রতিবেশীদের সহয়তায় ইরা তার বাবাকে এ ঘটনা জানালে তিনি কুমিল্লা থেকে ছুটে এসে মেয়েকে উদ্ধার করেন। মঙ্গলবার রাতে ডা. ইরা বাদী হয়ে স্বামী ডা. টিপু সুলতান ও শ্বশুর মো. বাদশা ফকিরকে আসামি করে গৌরনদী মডেল থানায় একটি যৌতুক দাবি ও নির্যাতনের মামলা করেন। গৌরনদী মডেল থানা পুলিশ ওই রাতেই কৌশলে ডা. টিপু সুলতানকে গ্রেফতার করে।
এদিকে যৌতুকের জন্য চিকিৎসক স্ত্রীকে শারীরিক নির্যাতন ও আটকে রাখার ঘটনায় চিকিৎসক স্বামী গ্রেফতারের খবরে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। শতশত উৎসুক জনতা অভিযুক্ত চিকিৎসককে এক নজর দেখার জন্য বুধবার ভোরে গৌরনদী মডেল থানার সামনে ভিড় করে।
অভিযুক্ত স্বামীকে গ্রেফতারের খবরে মুঠোফোনে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মামলার বাদী নারী চিকিৎসক ডা. মিলাদুজ্জাহান ইরা কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি মামলার এজাহারের বাইরে তার ওপরে নির্যাতনের কোন তথ্য দিতেও অস্বীকৃতি জানান।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও গৌরনদী মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মো. হেলাল উদ্দিন নয়া শতাব্দীকে বলেন, ‘যৌতুকের দাবিতে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগে স্ত্রীর করা মামলায় ডা. টিপু সুলতানকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। বুধবার দুপুরে অভিযুক্ত চিকিৎসককে বরিশাল আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।’
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ