কক্সবাজার সদরের পিএমখালীতে মোরশেদ আলী ওরফে বলী মোর্শেদকে পৈশাচিকতায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অভিযুক্ত ৪ জনকে সদর আওয়ামী লীগের কমিটি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তারা সকলে এই কমিটির সদস্য ছিলেন।
মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) সন্ধ্যায় সদর আ.লীগের আহ্বায়ক মাহমুদুল করিম মাদু, যুগ্ন আহ্বায়ক জসিম উদ্দিন, ছৈয়দ রেজাউর রহমান রেজা, টিপু সুলতান দলীয় প্যাডে সই করা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এর আগে মোর্শেদ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে আব্দুল মালেককে প্রধান আসামি করে ২৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করার কথা জানায় পুলিশ। বাকি তিনজন হলেন জয়নাল আবেদীন, আবু তাহের ও সিরাজুল মোস্তফা আলাল।
কক্সবাজার জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক মেয়র মুজিবুর রহমান বলেছেন, ‘প্রকাশ্যে মোর্শেদ বলিকে হত্যা অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সে কারণে আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। তার দায়ভার তো সদর আওয়ামী লীগ নিতে পারে না। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ৪৭ ধারায় তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা আওয়ামী লীগ করার কোনো সুযোগ নেই, এটি দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ। এ দলে ভূমিদস্যু, চাঁদাবাজ, হুকুম দখল-খারাপ মানুষের জায়গা নেই।’
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) আছর নামাজের সময় ইফতার অনুষঙ্গ কিনতে চেরাংঘর বাজারে আসেন মোরশেদ আলী। তখনই সেখানে আগে থেকে উৎপেতে থাকা দুর্বৃত্তরা তাকে মধ্যযুগীয় কায়দায় পৈশাচিকতা চালায়। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পর রাত ৮টার দিকে আইসিইউতে তার মৃত্যু হয়। সৌদি প্রবাসী মোরশেদ বেড়াতে দেশে এসেছিলেন। তিনি এলাকায় ‘অন্যায়ের প্রতিবাদকারী’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। দেশে ঘুরতে আসলে গ্রামের ঐতিহ্যবাহী বলীখেলায় শখের বসে অংশগ্রহণ করতেন বলে তাকে মোরশেদ বলী নামে ডাকা হতো।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিল্ডিং ভাঙার কাজে ব্যবহৃত বিশালাকার হাতুড়ি দিয়ে প্রথম আঘাতে মাটিতে পড়ে যান মোরশেদ। ঘটনার আকস্মিকতা উপলব্ধি করতে পেরে হামলাকারীদের বলছিল- ‘আমি রোজায় বেশি ক্লান্ত, ইফতারের সুযোগ দাও, মারতে চাইলে ইফতারের পর মারিও।’
কিন্তু রোজাদার বলার আকুতিও তাদের দমাতে পারেনি। শেষ রক্ষা হয়নি প্রয়াত শিক্ষক ওমর আলীর ছেলে মোরশেদ আলী ওরফে বলী মোরশেদের।
হত্যা ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বাংলাবাজার এলাকার আলী আহমদ কোম্পানি জানান, বাজার করতে চেরাংঘর বাজারে পৌছার একটু পরে শোরগোল শুনতে পান। ঘটনাস্থলের কাছাকাছি গেলে পিএমখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন হাজারিকে বলতে শোনা যায়, ‘উপরের নির্দেশে তারে (মোরশেদ) মেরে ফেলা হচ্ছে, কেউ সামনে আসবে না। যারা আসবে তাদেরও অবস্থা খারাপ হবে।'
এসময় আবদুল মালেকসহ ১৫-২০জন সন্ত্রাসী মোরশেদকে বরফ ধোলাইয়ের মতো প্রহার ও কোপাচ্ছিল। সবাইকে তদারকি করছিলেন পিএমখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল মোস্তফা আলাল। এলোপাতাড়ি মারধর ও কোপানোর ফলে মোরশেদ একটু নিস্তেজ হয়ে গেলে কয়েক রাউন্ড ফাকা গুলি বর্ষণ করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে হামলাকারীরা।
জানাজা ও দাফন শেষে ঘটনাস্থল ও আশপাশের এলাকায় বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আওয়ামী লীগ পরিচয়ে দাপিয়ে বেড়ান আলাল-মালেকের বিশাল এক সিন্ডিকেট। তারা পাহাড় কাটা, বন দখল, জমি দখল, বিচারের নামে প্রহসন, চাঁদাবাজি, ইয়াবা বেচাকেনাসহ নানা অপরাধ করে বলে অভিযোগ রয়েছে। পুরাে ইউনিয়ন জুড়েই তাদের রাজত্ব। ভারী অস্ত্র থাকায় ভয়ে মুখ খোলে না কেউ। প্রতিবাদ করলেই মোরশেদ বলীর মতো জীবন দিতে হবে। ইউনিয়ন জুড়ে কেউ জমি ক্রয়- বিক্রয় বা দালান করলে তাদের চাঁদা দিতে হয়। তা না হলে সিন্ডিকেটটি কোনো কাজই করতে দেয় না। প্রশাসন নিরবে তদন্ত করলে এমন সব অসংখ্য অভিযোগের সত্যতা পাবে।
তারা আরও জানায়, মোরশেদ হত্যায় অংশ নেওয়া আবদুল মালেক, তাহের, মতিউল ইসলাম মতি, সিরাজুল মোস্তফা আলালসহ বেশ কয়েকজন একাধিক মামলার দাগি আসামি। এর মধ্যে আবদুল মালেক ও মতি সদ্য জেল ফেরত বলে উল্লেখ করেন তারা।
নয়া শতাব্দী/জিএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ