রমজান ও ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষ্যে বগুড়ার দুই শতাধিক কারখানায় চিকন সাদা সেমাই তৈরীতে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছে কারিগররা। এখানকার এ সেমাই অনেক জনপ্রিয় ও চাহিদা থাকায় বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চল পেরিয়ে দেশের বিভিন্ন বাজারের বিক্রি হবে। এবার ময়দাসহ অন্যান্য উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় কিছুটা এ সাদা সেমাই’র তৈরীতে খরচ বেশী হওয়ায় খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। এছাড়া শহরের বিভিন্ন মাকের্টে এ চিকন সেমাই বিক্রি শুরু হয়েছে। তবে ঘন ঘন লোড শেডিং, শ্রমিক মজুরি ও উপকরণের দাম বৃদ্ধির কারণে গত বছরের মতো লাভ করতে হচ্ছে না। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে গত বছরের চেয়ে এবার আরো বেশী চিকন সাদা সেমাই উৎপাদন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত দুই বছর করোনার কারণে ব্যবসায় মন্দাভাব হয়েছে। তবে শ্রমিকের মজুরি ও উপকরণের দাম বৃদ্ধির কারনে গত বছরের মতো লাভ করতে হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সেমাই কারখানার মালিকরা।
জানা যায়, বগুড়া জেলায় এ বছর কমপক্ষে দুই শতাধিক সেমাই কারখানায় সাদা চিকন সেমাই তৈরী হচ্ছে। সবচেয়ে বেশী কারখানা রয়েছে বগুড়া শহরের বৃন্দাবনপাড়া, শহরতলীর বেজোড়া, নিশ্চিন্তপুর, পূর্বপালশা, ঢাকান্ত, পালশা এলাকার কারখানা গুলো। এসব কারখানাগুলোর কারিগররা ঈদ-উল-ফিতর এবং রোজা উপলক্ষ্যে অনেক আগেই থেকে কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এখানকার কারিগররা কেউ ময়দা গলানো কেউ তৈরীতে এবং কেউবা সেমাই শুকনার কাজে চরম ব্যস্ত সময় পার করছে। কেউ কেউ কারখানা খুলে আবার কেউ কেউ নিজ নিজ বাড়িতে সেমাই তৈরী ও প্যাকেটজাত করে তা বাজারজাত করছেন । এরা বেশীরভাগই মৌসুমি ব্যবসায়ী। পুরো রোজার মাসে সেমাই তৈরী ও বিক্রি শেষে তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নেন তারা । হাজার খানেক সেমাই শ্রমিক (যাদের বেশির ভাগই নারী)। বগুড়া শহরের একটি সেমাই কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে সারা বছর বিস্কুট, পাউরুটি তৈরী হলেও রোজার মাসে তা বন্ধ করে চিকন সেমাই ও লাচ্ছা তৈরী হচ্ছে।
ঢাকান্ত এলাকার কারখানাটি ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম জানান, বগুড়ার উৎপাদিত সেমাই ও লাচ্ছা বগুড়া দেশের অন্যান্য জেলায় অনেক চাহিদা রয়েছে। এ বছর উৎপাদন খরচ বাড়ার কারণে পাইকারী ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। খুচরা বাজারে দাম বাড়িয়ে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। এ বছর মজুরী বৃদ্ধি ও ঘন ঘন বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার কারণে উৎপাদন খরচ কিছুটা বেড়েছে।
ওই কারখানার নারী সেমাই শ্রমিক মেমেনা বেগম জানায়, তারা সেমাই তৈররি কাজ করে প্রতিদিন ৩০০ টাকা মজুরি পাচ্ছে। প্রত্যেক রমজান মাসে তারা এ কাজ করে থাকে। এ মাসে অনেক সময় দিনে কাজের পাশাপাশি রাতেও কাজ করতে হয় নারী শ্রমিকদের।
সাবগ্রাম নিশ্চিন্তপুর এলাকার কারখানার কারিগর কাফেলা বেগম ও সাহিদা আকতার জানান, রোজা শুরু হওয়ার ২ সপ্তাহ আগে থেকে চিকন সাদা সেমাই তৈরীতে আমরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সেমাই তৈরী করা হচ্ছে। প্রতি বছরই ঈদের আগে আমাদের এখানকার তৈরী চিকন সেমাই দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠায়। এবারও কারখানা কর্তৃপক্ষ চাহিদা অনুযায়ী সেইসব শহরগুলোতে সেমাই পাঠানো শুরু করেছে। সে কারণে আমাদের গত দুই সপ্তাহের আগের তুলনায় এখন ব্যস্ত সময় পাড় করছি।
বগুড়া ফতেহ আলী বাজারের পশারী ট্রেডার্স’র প্রোপ্রাইটার শহিদুল ইসলাম পশারী জানান, রোজার শুরু থেকেই লাচ্ছা সেমাই এবং চিকন সেমাই বিক্রি বেড়েছে। তবে, লাচ্ছা সেমাইটাই বেশী বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু বাজারের অন্যান্য পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় এবার লাচ্ছা ও চিকন সেমাই’র কেজি প্রতি ১০-২০ টাকা দাম বেড়েছে।
বগুড়া চেম্বার অব কর্মাস এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজ সহ সভাপতি মাফুজুল ইসলাম রাজ জানান, বগুড়া শহর এবং শহর তলীতে দুই শতাধিক কারখানায় সাদা চিকন সেমাই তৈরী করে থাকে। এই বগুড়া সেমাই সারাদেশে চাহিদা রয়েছে। তবে, এসব কারখানার মালিকরা করোনার কারণে গত দুই বছর ভালো ব্যবসা করতে পারেনি। তবে, এবছর করোনা কালীন সময়ের আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে বলে কারখানার মালিকরা আশাবাদী হয়েছেন।
নয়া শতাব্দী/এমআরএইচ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ