আলী গ্রুপ ও গ্রীণ সোসাইটিসহ কয়েকটি সন্ত্রাসী বাহিনীর কাছে রীতিমতো জিম্মি হয়ে পড়েছেন কক্সবাজার সদরের পিএমখালী ইউনিয়নের বাসিন্দারা। এসব বাহিনীর সদস্যদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নির্দেশেই যেন চলে এলাকাগুলোর সার্বিক কার্যক্রম। কোনো কোনো সময় প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্তরাও তাদের কাছে অসহায় হয়ে পড়েন। এসব সন্ত্রাসীর সক্রিয় অংশগ্রহণে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন, লুটপাট, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষসহ নানা অপকর্ম যেন একরকম স্থায়ী সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে।
তারা এতটাই শক্তিশালী যে, ভোট নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি নির্বাচনেও বিশেষ ভূমিকা রাখে তারা ক্যাডার বাহিনীগুলোর অত্যাচারে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, হত্যা ছাড়া অন্য কোনো নির্যাতনের ব্যাপারে ভয়ে কেউ আইনের শরণাপন্ন হন না।
শুধু তাই নয়, রাতে ওই সব সন্ত্রাসীর উপস্থিতি টের পাওয়া মাত্রই আতঙ্কে ঘরের বাতি বন্ধ করে দেন স্থানীয়রা। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নানা উৎকণ্ঠায় দীর্ঘদিন এলাকাবাসীর ‘ঘুম হারাম’ বললেও অতিরঞ্জিত হবে না-এমন মন্তব্য অনেকেরই।
তবে সম্প্রতি মোরশেদ হত্যাণ্ডে ভিডিও ফেসবুকে ভাইরালের ঘটনার পর মামলা হলে ওইসব সন্ত্রাসী গা-ঢাকা দেয়ায় আগের তুলনায় কিছুটা স্বস্তিতে আছেন গ্রামবাসী। এদিকে সন্ত্রাসীদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে যুবকদের একটি অংশ নিজেরাই বাহিনী গড়ে তুলছে। তাদের উদ্দেশ্য প্রতিশোধ নেয়া। পাশাপাশি ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে এক বাহিনী ভেঙে সৃষ্টি হয়েছে আরেক বাহিনীর।
এভাবেই দিনে দিনে গড়ে উঠেছে এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী বাহিনী। আয়তনে ২৭ বর্গকিলোমিটারের ইউনিয়নে প্রায় অর্ধেকে রয়েছে আলী বাহিনীর দৌরাত্ম্য।
স্থানীয়রা বলছেন, রাজনীতির আদর্শে বিভক্ত হলেও বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের কক্সবাজারের পিএমখালী এলাকার নেতাকর্মীরা খুনোখুনিতে একাকার হয়ে পড়েছেন। তাও আবার হত্যাকাণ্ড ঘটানোর জন্য বিএনপি নেতা মোহাম্মদুল হকের দুই ভাই মোহাম্মদ আলী প্রকাশ মোহাম্মদ ও ছৈয়দুল হক সুদুর সৌদি আরব থেকে বিপুল অংকের টাকা নিয়ে সম্প্রতি দেশে ফিরেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
ইফতার পর্যন্ত প্রাণে না মারার আকুতি জানিয়েও দিনদুপরে প্রকাশ্যে নির্মভাবে খুনের শিকার মোরশেদ আলী ওরফে মোরশেদ বলিকে পূর্বপরিকল্পিত করা হয়েছে। তাকে হত্যার আগে মামলা থেকে রেহাই পেতে থানা পুলিশের সাথে খুনিরা বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময় কন্টাক্ট করেছিল। এমটাই দাবি করেছে মোরশেদ আলির পরিবার। যদিও অভিযুক্ত কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি তদন্ত সেলিম উদ্দিন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
গত বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে পিএমখালী ইউনিয়নের চেরাংঘর স্টেশনবাজারে ইফতারি কিনতে গেলে সেখানে মোরশেদ বলিকে ঘিরে ধরে শত শত মানুষের সামনে হাতুড়ি পেঠা ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এসময় মোরশেদ ইফতার প্রর্যন্ত তাকে প্রাণে না মারার আকুতি জানালেও মন গলেনি খুনিদের। উল্টো খুনিরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাধারণ মানুষদের উদ্দেশ্য করে মোরশেদ বলিকে উপরের নির্দেশে মেরে ফেলা হচ্ছে তোমারা কেউ বাঁচাতে আসবে না এমন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বলে জানা গেছে।
আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শনিবার সন্ধ্যায় কক্সবাজার মডেল থানায় চাঞ্চল্যকর মোরশেদ বলি হত্যাকাণ্ডের মামলা দায়ের করেন নিহতের ছোট ভাই জাহেদ আলী। মামলায় ২৬ জনের নাম উল্লেখ ও ৮-১০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে ১৫-১৬ জনই স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী। এ ঘটনায় দেশব্যাপী আলোচিত কক্সবাজারে পাওয়ার আলির এক ভাইসহ এ পর্যন্ত তিনজন গ্রেফতার হয়েছেন। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন সদর মডেল থানার ওসি মনিরুল গিয়াস।
খুনের শিকার মোরশেদ ওরফে মোরশেদ বলি সদরের পিএমখালী ইউনিয়নের মাইজপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মৃত মাস্টার ওমর আলির ছেলে।
এদিকে মোরশেদকে হত্যার ওপরে নির্দেশ দাতা হিসেবে আলোচনায় এসেছেন দেশব্যাপী আলোচিত কক্সবাজারের ছৈয়দ মোহাম্মদ আলি ওরফে পাওয়ার আলি বা আলি ভাই এর নামও।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি সিরাজুল মোস্তফা আলাল ও ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক জয়নাল আবেদীন হত্যাকাণ্ডের সময় উপস্থিত শত শত মানুষকে উদ্দেশ্য করে হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন- তোমরা মোরশেদ বলিকে বাঁচাতে কেউ আসবে না। তাকে মেরে ফেলার জন্য ওপরের নির্দেশ আছে।
ক্ষমতাসীন দল ও অঙ্গ সংগঠনের দুই তৃণমূল নেতা ‘ওপরের নির্দেশ’ প্রাপ্ত হয়ে একজন নিরীহ ব্যক্তিকে শত শত মানুষের সামনে পৈশাচিকভাবে হত্যার ঘটনাটি নিয়ে এলাকায় তোলপাড় চলছে। পবিত্র রমজান মাসে একজন রোজাদার মানুষকে ইফতারি কিনার সময় একদম প্রকাশ্য দিনের বেলায় এমন নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনাটি বিবেকবান মানুষের হৃদয় ছুঁয়েছে।
আলোচিত এ মামলার ১নং সাক্ষী বাংলা বাজারের বাসিন্দা আলি আহমেদ কোম্পনি অভিযোগ করে বলেন, বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময় কক্সবাজার সদর মডেল থানা কন্টাক্ট করে মোরশেদ আলিকে হত্যা করা হয়েছে। তদন্ত ওসি সেলিমের হাতে পাওয়ার আলির ভাই মাহমদুল করিম ওরফে ওসি করিম ঘটনার আগে একটি কাজী অফিসে দুই দফায় এ অর্থ তুলে দিয়েছেন। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে তাকে প্রাণে না মারার শর্ত দেওয়া হয়েছিল।
তিনি বলেন, মোরশেদ আলিকে হত্যার জন্য যে ওপরে নির্দেশের কথা বলা হচ্ছে তিনি হলেন পাওয়ার আলি। পিএম খালীর এবং কক্সবাজারের সবাই জানেন মোরশেদ হত্যায় জড়িত সবাই দখলবাজ, ভূমিদস্যুর একটি সঙ্ঘবদ্ধ সিন্ডিকেট। আর তাদের মূল শক্তি ও গডফাদার হলেন পাওয়ার আলি। তার নির্দেশ ছাড়া পিএমখালীর গাছের পাতাও নড়ে না।
আলি আহমেদ কোম্পানি আরো দাবি করেন, ঘটনার পর পুলিশ ও র্যাব উপস্থিত হয়ে যে তিনজনকে আটক করে তাদের মাঝে পাওয়ার আলির ভাই দিদারকেও আটক করা হয়। তার দোকান থেকে মোরশেদকে হত্যার জন্য রাখা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করা হয়। জব্দ করা হয় সিসিটিভি ফুটজ। এরপরও উপস্থিত পুলিশের একজন অফিসারকে আলির ভাই আটকৃত দিদারকে ছেড়ে দিতে বার বার ফোন করেন তদন্ত ওসি সেলিম উদ্দিন। কিন্তু পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত থাকার কারণে তিনি তা হতে দেননি। হত্যা মালায় পাওয়ার আলি দুই ভাই মাহমদুল করিম ও দিদারুল আলমকে আসামি করা হয়েছে।
একই অভিযোগ করেছেন, নিহত মোরশেদের চাচাতো ভাই আবুল কালাম। তিনি বলেন, আমার ভাই মোরশেদকে হত্যার আগে পাওয়ার আলির ভাই যিনি কক্সবাজার সদর থানা কন্ট্রোল সেই মাহমদুল করিমের সাথে খুনিদের বৈঠক হয়। মোরশেদকে হত্যার সময় থানা পুলিশ সামাল দেওয়ার জন্য মাহমুদুল হক থানায় বসে থাকবেন বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত হয়।
কিন্তু আমরা যেন তা বুঝতে না পারি সে জন্য মাহমুদুল করিম আমার এক ভাইয়ের সাথে ঘটনা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যোগাযোগ রাখেন। যখন জেনেছেন মোরশেদ মারাগেছে এ থেকে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।
আবুল কালাম আরো বলেন, খুনিরা মূলতো একটি ভূমিদস্যু, দখলবাজি দখলবাজদের একটি সিন্ডিকেট। যার নেতৃত্ব দেন পাওয়ার আলির ভাই মাহমুদুল করিম, তাদের সাথে রয়েছে সদর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মাদুল করিম মাদু। তাদের পেছনে পাওয়ার আলি রয়েছে এমন ধারনা থেকে তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস করে না। কিন্তু মোরশেদ তাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে আসছে রুখে দাড়িয়েছে। এ কারণে তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মোরশেদ বলি নামের প্রবাসী ব্যক্তিকে হত্যার শিকার হতে হয়েছে স্থানীয় তৃণমূল পর্যায়ের বিএনপি নেতা ও সাবেক মেম্বার মোহাম্মদুল হকের সঙ্গে ঝগড়াকে কেন্দ্র করে। আর পুরো হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের তৃণমূল নেতাদের নেতৃত্বে।
বাজারে হত্যাকাণ্ড ঘটার জন্য যখন সংঘবদ্ধ খুনির দল মোরশেদকে ঘিরে ধরেছিল তখন রোজাদার মোরশেদ তাদের কাছে আকুতি জানিয়ে প্রাণ ভিক্ষা চেয়ে বলেছিলেন-আমি রোজাদার। আমাকে তোমরা মেরেই যখন ফেলবে তবে ইফতারটা করার সময় দাও। প্রত্যক্ষদর্শী আবু তাহের এ কথা জানিয়ে আফসোসের সুরে বলেন, নরপিশাচরা সেই সুযোগটিও দিল না।
মোরশেদ বলি এক দশক ধরে পরিবার নিয়ে সৌদি আরবে প্রবাস জীবনের পর দুই বছর আগে গ্রামে ফিরেন। তিনি গ্রামে এসে মাছের ঘেরসহ ক্ষেত-খামার শুরু করেন। এলাকায় আসার পর থেকে পানি সেচ প্রকল্প নিয়ে স্থানীয় বিএনপি নেতা ও সাবেক মেম্বার মোহাম্মদুল হকের সঙ্গে বিরোধের সৃষ্টি হয়।
ঘটনার সময় নিহত মোরশেদ বলী যখন চেরাংঘর স্টেশনের তরকারি দোকানের সামনে এসে কেনাকাটা করছিলেন তখনই আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজুল মোস্তফা আলাল এবং যুবলীগ নেতা জয়নাল আবেদীন গলিটি ঘিরে লোকজনের আসা-যাওয়ার পথ বন্ধ করে দেয়।
এসময় দুজনই সমস্বরে বলতে থাকেন-ওপরের নির্দেশ আছে মোরশেদ বলীকে মেরে ফেলার জন্য। এমন হুঁশিয়ারির সঙ্গে সঙ্গেই মামলার এক নম্বর আসামি আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল মালেক তার হাতের লম্বা কিরিচ নিয়ে প্রথমে মোরশেদের মাথা লক্ষ্য করে কোপ মারে।
এরপর সৌদি আরব থেকে হত্যার মিশন নিয়ে আসা আসামি মোহাম্মদ আলী প্রকাশ মোহাম্মদ হাতুড়ি দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য মোরশেদের অন্ডকোষে বারবার আঘাত করে।
ঘটনার অন্যতম প্রধান নায়ক আসামি মোহাম্মদুল হক এ পর্যায়ে ধারাল কিরিচ দিয়ে মোরশেদের ডান হাতের কব্জিতে কোপ দিয়ে প্রায় বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। এরপর জাহাঙ্গীর আলম, মতিউল ইসলাম, ছৈয়দুল হক, হামিদুল হক, তাহেরুল ইসলাম, ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ও মেম্বার আরিফুল্লাহ, আক্কাস, শাহিন, খোরশেদ আলম, সৈয়দ মোহাম্মদ আলী প্রকাশ আলী ভাইয়ের ভাই মাহমুদুল করিম ও গ্রেফতার হওয়া দিদারুল আলম, আবদুল্লাহ, আবদুল আজিজ, আবদুল হাই, উমর ফারুক, ইয়াছিন, সাইফুল ইসলাম, ওসমান, আজহারুল ইসলাম ও জাহেদুল ইসলামসহ অন্যান্যরা ছোরা, লোহার রড দিয়ে মোরশেদকে উপর্যুপরি আঘাতে আঘাতে ঝাঝরা করে ফেলে। এলাকার লোকজনের মতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু নিশ্চিত করে সংঘবদ্ধ খুনির দল এলাকা ছাড়ে।
নিহত মোরশেদ বলির ছোট ভাই ও মামলার বাদী শিক্ষানবিশ আইনজীবী জাহেদ আলী জানান, স্থানীয় বিএনপি ও আওয়ামী লীগের ১১ জনের একটি সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে আমাদের এলাকাজুড়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে আসছিল। তারাই আমাদের পরিবারের সেচ পাম্পটি দখলে নিয়ে কৃষকদের জিম্মি করে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছিল। এমনকি সিন্ডিকেট সদস্যরাই এলাকায় করছিলেন ভূমিদস্যুতা থেকে যাবতীয় অপকর্ম।
তিনি বলেন, নিহত মোরশেদ অন্যায়ের বিরুদ্ধে একটু প্রতিবাদী ছিলেন। তিনি সিন্ডিকেটের অবৈধ কাজের প্রতিবাদ করতে গিয়েই খুনের শিকার হলেন।
মামলার বাদী জাহেদ আলী জানান, সাবেক ইউপি মেম্বার ও বিএনপি নেতা মোহাম্মদুল হক সেচ পাম্পটি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে তার চাচাত ভাই এবং ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতি ও আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল মালেকের মাধ্যমে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের নিয়ে সিন্ডিকেটটি গঠনে অন্যতম ভূমিকা পালন করেন।
এদিকে অভিযোগ উঠেছে, সদর লীগের আহ্বায়ক মাদুল করিম মাদু নিহত মোরশেদের জানাযার সময় খুনিদের আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করার কথা জানালেও উল্টো পিএমখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল মোস্তফা আলালল ও পাওয়ার আলির ভাইদের মামলা থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সদর আ’লীগের আহ্বায়ক মাদুল করিম মাদু বলেন, তারা মামলায় পাওয়ার আলির ভাই নিরহ মামদুল করিমসহ আরো কয়েকজনকে আসামি করেছে। যা অন্যায় হয়েছে। নিরহ কাউকে আসামি না করলেও পারতেন।
হত্যাকাণ্ডে জড়িত আওয়ামী লীগ নেতাদের বহিষ্কার করা হবে না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মামলার কপি হাতে পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভিযোগের বিষয়ে পুলিশের বক্তব্য:-
মোরশেদ হত্যাকাণ্ডের আগে দুই দফায় ঘুস লেনদেন এবং থানা কন্টাক্ট এর বিষয়ে জানতে চাইলে সদর থানার ওসি তদন্ত সেলিম উদ্দিন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এটি অসত্য বানোয়াট অভিযোগ।
তিনি বলেন, ঘটনার দিন আমি মামলার সাক্ষী দিতে কক্সবাজারের বাইরে চলে এসছি। তারা হয়তো অভিযোগ করতে পারে আপনারা সাংবাদিকরা বিষয়ে অনুসন্ধান করতে পারেন।
বর্তমান সময়ে থানায় পাওয়ার আলির কোন প্রভাব দেখতে পাননি উল্লেখ করে তিনি বলেন, হয়তো তার ভাই মাহমদুল করিম কোনো কারণে থানায় আসেন। কারণ থাকলে সবাই যেমন ওসি স্যারের কাছে আমার কাছে আসেন। এর বাইরে তার সাথে আমার কোনো ব্যাক্তিগত সম্পর্ক নাই।
সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মনীরুল গিয়াস বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের বিষয়ে এ মুহূর্তে কিছু বলা উচিত হবে না, তবে পুলিশের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ভিত্তিহীন। সদর থানায় দালাদের প্রবেশ বন্ধ হয়ে গেছে আরো অনেক আগেই। হয়তো পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা সহজ তাই অনেকে অভিযোগ করেন। আমার বিরুদ্ধে তো ১০লাখ টাকা ঘুসের অভিযোগ করেছিল একটি পক্ষ।
তিনি বলেন, এখন আমাদের কাজ হচ্ছে খুনের সাথে জড়িতদের ধরে আইনের আওয়াতায় আনা।
কে এই পাওয়ার আলি:-
ক্ষমতাবান কিংবা বলবানদের ছায়াতলে থেকে কত চুনোপুঁটি রাতারাতি রাঘববোয়াল বনে গেছে, বিদ্যমান সমাজ বাস্তবতায় এর হিসাব মেলানো ভার। তাও মাত্র বছর দশেক আগে। এই এক দশকে তার উত্থান রূপকথা গল্পকেও হার মানিয়েছে। গৃহপরিচারক এখন হাজার কোটি টাকার মালিক। তার নাম সৈয়দ মোহাম্মদ আলী ওরফে ‘পাওয়ার আলী’ হিসেবে পরিচিত।
তিনি কক্সবাজার সদরের পিএমখালী ইউনিয়নের গোলারপাড়া গ্রামের দরিদ্র নৌকার মাঝি ইলিয়াস প্রকাশ ওরফে কালু মাঝির ছেলে। কক্সবাজারের চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলীর গৃহকর্মী হিসেবে ১৯৯৪ সালে জীবিকা নির্বাহ শুরু করেছিলেন।
প্রতারক আলীর ক্ষমতার প্রভাব এতই বেশি, কক্সবাজার প্রশাসনের শীর্ষ কর্তা থেকে শুরু করে শীর্ষ রাজনৈতিক নেতারাও আর্শীবাদ পেতে নিয়মিত হাজিরা দেন তার দরবারে। জটিল কোনো সমস্যায় আটকে গেলে জেলার শীর্ষ আমলা ও রাজনীতিবিদরা সাহায্যের জন্য আলীর কাছে ছুটে যান। কক্সবাজার প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ অফিসারদের সামনে বসিয়ে রেখে ফোনে সচিব ও আইজিপিকে ধমক দিয়ে কথা বলেন এই আলী। সেই দৃশ্য দেখে রীতিমতো হতচকিত হয়ে যান তারা। এসব ঘটনার সত্যতাও পেয়েছেন কক্সবাজারে কর্মরত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা ও স্থানীয় বাসিন্দারা।
তারা বিভিন্ন সময় দেখেছেন, এসপি অতিযত্ন করে ঘরে রান্না করা খাবার নিয়ে দেখা করতে আসেন আলীর বাসায়। গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্তা বসে থাকেন আলীর অফিসে। আলী তার কাছে আসা লোকজনকে প্রায়শ বলে বেড়ান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিয়মিত ফোন করে তার শারীরিক অবস্থার খোঁজ-খবর নেন। শেখ রেহানার সঙ্গে তার পারিবারিক সম্পর্ক। এমনকি আলী নিজের ব্যবহৃত মোবাইলে প্রধানমন্ত্রীর পাঠানো ক্ষুদে বার্তাও (মেসেজ) কক্সবাজারের শত শত মানুষকে দেখিয়েছেন। প্রতারক আলী হিলারি ক্লিনটন-বারাক ওবামা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে সম্পর্কের কথাও বলে বেড়ান। এছাড়া বিভিন্ন বাহিনী প্রধান, গোয়েন্দা প্রধান, পুলিশ প্রধানরা তার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করেন বলেও প্রচার করেন। অসীম ক্ষমতাধর এই পাওয়ার আলী এখনো পুরো কক্সবাজার জেলা ও তার নিজ এলাকা পিএমখালী ইউনিয়নের চিহ্নিত ত্রাস এবং রহস্যজনক তার মিথ্যা দাপট, প্রতারণা এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে এলাকাটি এখন ভূতুড়ে নগরীতে পরিণত হয়েছে। তার কথা ছাড়া এখনো পিএমখালীতে 'পান থেকে চুন খসেনা।
তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পাওয়ার আলি। মোরশেদ বলিকে হত্যার নির্দেশ তিনি দিয়েছেন এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আলি ওরফে পাওয়ার আলি বলেন, এটি মিথ্যা কথা। আমার কোনো ক্ষমতা নাই। পুলিশ থানার সঙ্গে আমার পরিচয় নাই। যারা বলে এসপি -ডিআইজি আমার পায়ে ধরে বসে থাকে তাদেরকে প্রমাণ করতে বলে অথবা আপনি প্রমাণ করেন। প্রধানমন্ত্রী বা শেখ রেহানা এবং মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট নিয়ে আলোচনা গুলোও সত্য না বলে দাবি তার। একই সাথে কোনো নেতাও তাকে হাজিরা দেন না বলে দাবি করেন এই আলি।
তিনি আরো বলেন, সবাই জানে আমার ভাই মাহমদুল করিম থানায় দালালি করে, সে আমার কথা শুনে না। এ কারণে গত দুই বছর ধরে তার সাথে আমার সুসম্পর্ক নাই। মামলায় আমার দুই ভাই আসামি হয়েছে। আমি তাদের দায়ভাবর নেবে না, এমনকি আমার সন্তানের ও দায়ভার নেবে না। আর পিএমখালীতে যা হয় তার দায় আমার ভাইয়েরা যারা জড়িত তাদের। আমার কাউকে শেল্টার দিই না।
নয়া শতাব্দী/জিএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ