রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় নিমঘুটু গ্রামে বোরো ধানের জমিতে সেচের পানি না পেয়ে আদিবাসী দুই কৃষক আত্মহত্যার ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। শনিবার (৯ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১১ টায় রাজশাহী নগরীর কাজীহাটা এনজিও ফোরাম কার্যালয়ে ‘রক্ষাগোলা সমন্বয়’ কমিটি এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পাঠ করেন গোদাগাড়ী রক্ষাগোলা সমন্বয় কমিটির সদস্য রঞ্জিত সাওরীয়া।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মৃত কৃষক অভিনাথ মার্ডির স্ত্রী রোজিনা হেমব্রন, ও রবি মার্ডির ভাই সুশীল মার্ডি, রক্ষাগোলা সমন্বয় কমিটির উপদেষ্টা প্রসেন এক্কা, সভাপতি সরল এক্কা, সিসিবিভিওর সমন্বয়কারী আরিফ ও প্রশিক্ষণ সমন্বয়কারী নিরাবুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ)-এর নলকূপ অপারেটর সাখাওয়াতের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবি করেন। এছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে তারা বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন।
দাবিগুলো হলো- অভিনাথ মার্ডি ও রবি মার্ডির আত্মহত্যায় প্ররোচণায় সাখাওয়াত হোসেনকে বিচারের মাধ্যমের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। বরেন্দ্র অঞ্চলে সেচ কার্যক্রমের অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের জন্য বিএমডিএ কর্তৃপক্ষকে তদন্তের আওতায় এনে দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বরেন্দ্র অঞ্চলে ডীপ পরিচালনার ক্ষেত্রে কৃষকবান্ধব নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে এবং সুষ্ঠু তদারকির বিধান রাখতে হবে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে ডীপ অপারেটর হিসেবে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠিদের ও প্রাপ্তিক কৃষকদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠিদের ও প্রান্তিক কৃষকদের পর্যাপ্ত পরিমাণে সেচের পানির অভিগম্যতার সুযোগ নিশ্চিতকল্পে নীতিমালায় সুস্পষ্ট বিধান থাকতে হবে।
এসময় তারা বলেন, গত ২৩ মার্চ বিকেলে গোদাগাড়ী উপজেলাধীন নিমঘুটু আদিবাসী পল্লীর অভিনাথ মার্ডি ও রবি মার্ডি ধানের জমিতে সেচের পানি না পেয়ে এবং বিএমডিএর নলকূপ অপারেটর সাখাওয়াত হোসেনের অসদাচারণের ফলে বিষপান করে। ফলে ওই দিনই অভিনাথ মার্ডি মৃত্যুবরণ করেন। আর তার ভাই রবি মার্ডি ২৫ মার্চ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ঘটনার পরে সাখাওয়াত হোসেনের নামে গোদাগাড়ী থানায় অভিযোগ দায়ের করতে গেলে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের অসহযোগিতা ও অবহেলার দরুণ ঘটনার ২ দিন পর ২৫ মার্চ মামলা দায়ের করতে সমর্থ হই। গভীর নলকূপ অপারেটর সাখাওয়াত হোসেনের নামে দীর্ঘদিন ধরেই সেচের পানি প্রদানের ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ থাকলেও তিনি সেগুলোর কোন তোয়াক্কায় করেননি। উপরন্ত সেই গভীর নলকূপের আওতাধীন চাষযোগ্য জমির অর্ধেক কৃষক ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি কৃষকদের দেরীতে পানি প্রদান করা হতো।
সংবাদ সম্মেলনে তারা অভিযোগ করেন, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই যে, নিমঘুটু গ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি কৃষকের আত্মহননের পেছনে সাখাওয়াত হোসেনের মতো জাতিবিদ্বেষী ও দুর্নীতিবাজ ডীপ অপারেটর যেমন দায়ী ঠিক তেমনি এই বরেন্দ্র অঞ্চলের সেচ কার্যক্রম পরিচালনাকারী সংস্থা বিএমডিএ’র অব্যবস্থাপনা ও অনিয়ম সমানরূপে দায়ী।
খোদ কৃষি মন্ত্রণালয়ের তদন্তে উঠে এসেছে সাখাওয়াত হোসেন বিএমডিএ কর্তৃক নির্ধারিত পানির দাম ১২৫ টাকা ঘণ্টার পানি ১৩৫ টাকায় কৃষকদের কাছে বিক্রি করতেন। এই অনিয়ম বহুদিনব্যাপী চলমান থাকলেও কর্তৃপক্ষের কোন তদারকি ছিলো না। গোটা বরেন্দ্র অঞ্চলের সেচের পানি গভীর নলকূপ অপারেটরদের কবজায়, যাদের হাতে জিম্মি হয়ে আছে প্রায় ৪ লাখ কৃষক। নলকূপ অপারেটর নির্বাচনের ক্ষেত্রেও বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ স্বার্থবাদী চক্র ও দলীয় সমর্থন বিবেচনায় রাখে যার ফলে নলকূপগুলোর পানি বণ্টন নীতি দলীয় নেতা-কর্মীদের স্বেচ্ছাচারিতার অংশ হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে এসকল অসৎ নলকূপ অপারেটররা যে ক্ষমতাসীন দলের নামের অপব্যবহার করছে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
তারা আরো অভিযোগ করেন, বিএমডিএ’র কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও অসৎ নলকূপ অপারেটররা মিলে বরেন্দ্র অঞ্চলে একটি পানি মাফিয়াতন্ত্র কায়েম করেছে যার শিকার এই লক্ষ লক্ষ অসহায় কৃষক।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ