দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর মেধাবী ছাত্রী মারুফা পাশে দাড়িয়েছেন র্যাব-৬ সাতক্ষীরা। শুক্রবার (৮ এপ্রিল) বিকেলে তালা উপজেলার জেয়ালা নলতা গ্রামে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৬) সাতক্ষীরার একটি টিম হাজির হয়ে মেধাবী ছাত্রী মারুফার হাতে উপবৃত্তি নগদ মোট ৩০ হাজার টাকা তুলে দেন।
উপবৃত্তির অর্থ প্রদানের সময় উপস্থিত ছিলেন, র্যাব-৬ সাতক্ষীরা ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার ইশতিয়াক, সিনিয়র ডিএডি এসএম জিলুর রহমান, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান এসএম নজরুল ইসলাম, সাংবাদিক এসএম হাসান আলী বাচ্চু, গাজী ফরহাদ, বিএম বাবলুর রহমান, পার্থ মন্ডল, জহর হাসান সাগরসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
এসময় মেডিকেলে চান্সপ্রাপ্ত মেধাবী ছাত্রী মারুফা বলেন, পারিবারিকভাবে আর্থিক অনটনের মধ্য দিয়ে নিজের ইচ্ছা শক্তি ও সকলের দোয়াতে এ পর্যায়ে পৌছাতে পেরেছি। আমাকে পড়াতে যেয়ে বাবাকে বাড়ির গরু বিক্রি করতে হয়েছে। কিন্তু ভর্তির টাকা ম্যানেজ করা কষ্টকর হয়ে উঠেছিল পরিবারের কাছে। র্যাব-৬ সাতক্ষীরা ভর্তির টাকা প্রদান করেছেন। তাদের অসংখ্যা ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
মারুফা আরো বলেন, তিন বোনের মধ্যে আমি বড়। এক বোন ক্লাস ফোরে পড়ে আরেক বোন এখনও স্কুলে যাওয়া শুরু করিনি। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন। আমি যেন চিকিৎসক হয়ে সাধারণ মানুষের সেবা করতে পারি।
মারুফার পিতা আজিত বিশ্বাস আবেগ আপ্লুত হয়ে বলেন, আমার মেয়েকে পড়ানোর জন্য অনেকের কাছে হাত পেতে সাহায্য নিয়েছি। খুলনায় মেডিকেল কোচিং করাতে গিয়ে ৫০ হাজার টাকার গরু বিক্রি করে দিতে হয়েছে। আজ আমার মেয়ে মেডিকেলে চান্স পেয়ে অর্থের অভাবে ভর্তি হতে পারছিল না। কিন্তু র্যাব -৬ এর সদস্যরা মেয়ের ভর্তির জন্য আর্থিক সহযোগিতা করেছেন। আপনারা আমার মেয়ের জন্য দোয়া করবেন।
র্যাব-৬ এর কোম্পানী কমান্ডার ইশতিয়াক বলেন, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা উন্নতি কাজে জড়িত না। র্যাব পরিবার অসহায় ও অসচ্ছল মানুষের সহযোগিতায় কাজ করে যাচ্ছে। এমন অসহায়ত্বের খবর পেলে সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জানাবেন। আমরা তাদের পাশে দাঁড়াবো ইনশল্লাহ।
প্রসঙ্গত, সাতক্ষীরার তালা উপজেলার সদর ইউনিয়নের জেয়ালা নলতা গ্রামের নিকারী পাড়া (জেলে পল্লীর) আর্থিক অনাটনের পরিবার মো. আজিত বিশ্বাস ও গৃহিণী তাছলিমা বেগমের দম্পর্তির ৩ কন্যার মধ্য বড় কন্যা মারুফা। জেলেপল্লীর মেয়ে মারুফা তার শিক্ষা জীবনে মাধ্যমিক পরীক্ষায় এ জে এইচ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৫.০০ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। ভর্তি হন তালা মহিলা কলেজে সেখানেও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়ে কৃতকার্য হন। এবার মারুফা অদম্য ইচ্ছা শক্তি নিয়ে এমবিবিএস ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষায় ৭৪ টেস্ট স্কোর পেয়ে ৩৫৩৪ মেরিট পজিশনে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছেন। কিন্তু দারিদ্রতাকে মাড়িয়ে জেলেপল্লীর (নিকারী) অদম্য মেধাবী ছাত্রী মারুফা খাতুন মেডেকেলে চান্স পেলেও অর্থের অভাবে ভর্তি হওয়া অনিশ্চিতার দিকে ধাবিত হওয়ার আগেই পাশে দাড়াঁলেন র্যাব-৬ সাতক্ষীরা।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ