সাতক্ষীরা শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নে জাতীয় দলের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের নামে প্রতিষ্ঠিত এগ্রো ফার্মের ইজারার টাকা অথবা জমি ফেরত পাওয়ার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন স্থানীয় জমির মালিকরা।
বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) সাকিব আল হাসান অ্যাগ্রো ফার্ম লিমিটেড নামীয় কাঁকড়া হ্যাচারির সামনে মানববন্ধনে অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় জমির মালিকরা বলেন, তাদের জমিতে কাঁকড়া হ্যাচারি করলেও চুক্তি অনুযায়ী তাদের জমির ইজারার টাকা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। পাঁচ বছরের চুক্তি শেষ হওয়ার পরে আরো দুই বছর হলেও ইজারার টাকা ও জমি কোনোটাই ফেরত দেওয়া হয়নি।
তার আরো বলেন, গরীব ও অসহায় জমির ইজারার টাকা ও জমি ফেরৎ না পেয়ে তারা খুবই কষ্টে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের উপকূলীয় দাতিনাখালি এলাকায় ৪৮ বিঘা জমির ওপর সাকিব আল হাসান অ্যাগ্রো ফার্ম লিমিটেড নামে একটি হ্যাচারি কাঁকড়া খামারের জন্য পাঁচ বছর মেয়াদি চুক্তি করা হয়। চুক্তিতে যাওয়া জমির মালিক ও ফার্মের সঙ্গে লেনদেন করেন অন্যান্য কাঁকড়া ব্যবসায়ীরা। খামারটি বন্ধ থাকায় পাওনা টাকা বা জমি কোনোটাই ফেরত পাচ্ছেন না জমির মালিকরা।
চুক্তি অনুযায়ী স্থানীয় ১২ জন জমির মালিকের কাছ থেকে প্রতি বিঘা জমি ১২ হাজার টাকা হিসেবে ইজারা নেন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানসহ তার দুই ব্যবসায়িক সহযোগী সাহাগীর হোসেন পাভেল ও মো. ইমদাদুল হক। জমির চুক্তিনামার মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর।
প্রকল্পে জমি ইজারাদানকারী আবদুল মজিদের ছেলে সাইফুল ইসলাম জানান, অনেক আগেই ক্রিকেটার সাকিবসহ তিনজনের সঙ্গে জমির চুক্তিপত্রের মেয়াদ শেষ হয়েছে। এছাড়া এর আগে সাকিব আল হাসানের নামে সাইনবোর্ড থাকলেও বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে সাকিবের নামের কোনো অস্তিত্ব নেই। পাশাপাশি, বর্তমানে খামারটি বন্ধ রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
জমির আরেক মালিকসাইফুল ইসলামের বলেন, মেয়াদ শেষ হলেও তারা নতুন করে চুক্তি করছেন না। এমনকি জমিও ফেরত দিচ্ছেন না।
জমির মালিক আবুল বাসার বলেন, মৌখিকভাবে আমরা ঘটনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে জানিয়েছি। তিনি কোনো সুরাহা করতে পারেননি।
জমির আরেক মালিক সামসুদ্দীন গাজী বলেন, একজন স্বনামধন্য ক্রিকেটার হিসেবে আমরা সাকিবকে শ্রদ্ধা করি। তারতো টাকার অভাব থাকার কথা নয়। আমরা সমস্যার সমাধান চাই। আমরা তার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করে প্রশাসনের কাছে যেতে চাই না।
স্থানীয় আব্দুল হালমি জানান, প্রকল্পটিতে এখন সাকিব আল হাসান আদৌ আছেন কিনা তা আমরা বলতে পারছি না। সাকিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনতে চাই না কারণ তিনি দেশের সম্পদ। খামারের শ্রমিকরা পাওনা টাকা ও জমির মালিকদের পাওনা টাকার দাবিতে বিক্ষোভ করেছিলেন। পরবর্তীতে সাকিবের নির্দেশনায় সেই টাকা দ্রুত পরিশোধ করার সিদ্ধান্ত হলে অনেকে টাকা পেয়েছিলেন।
বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী নজরুল ইসলাম বলেন, কাঁকড়া হ্যাচারি থেকে সাকিব আল হাসানের নামের সাইনবোর্ডটি খুলে ফেলা হয়েছে।
প্রকল্পের ইমদাদুল হক ও ঘের ম্যানেজার তৌফিক জানান, প্রকল্পটি এখন আপাতত বন্ধ রয়েছে, তারা টাকা পাবে, পর্যায়ক্রমে তাদের ন্যায্য টাকা দেওয়া হবে এবং অচিরেই এ সমস্যার সমাধান করা হবে, আমরা লোকসানের মুখে পড়েছি।
এ বিষয়ে সাকিব আল হাসানের বন্ধু ও জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার সগীর হোসেন পাভেল জানন, বর্তমানে ফার্মটির সঙ্গে সাকিব আল হাসান নেই। আমরা যাবতীয় পাওনা মিটিয়ে দেওয়ার জন্য দুই মাস সময় চেয়েছিলাম। কিন্তু তার আগেই জমির মালিকরা এসব করছেন। দ্রুত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলে আশা করছি।
প্রসঙ্গত, এর আগে ২০২০ সালে বকেয়া বেতনের দাবিতে কর্মচারীরা আন্দোলনে নামলে বিসিবির হস্তক্ষেপে ও স্থানীয় ক্রীড়াবিদদের মধ্যস্থতায় কর্মচারীদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করা হয়।
নয়া শতাব্দী/জিএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ