জীবন সংগ্রামে হার না মানা এক যোদ্ধার নাম সেলিম মিয়া (৩৬)। জীবিকার তাগিদে ছুটে এসেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থানার লচমানপুর গ্রাম থেকে কয়েকশ কিলোমিটার দূরের রামগঞ্জ উপজেলায়।
মা, দুই ছেলে এক মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে ৬ জনের সংসার। গ্রামে থাকা অবস্থায় কামলা খেটে কোন রকম খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছিলো। মাঝে মাঝে যখন কাজ থাকতো না, তখন উপোস থাকতে হতো। ছেলে, মেয়ে বড় হচ্ছে সংসারের খরচও বাড়ছে। উপায়ান্তর না দেখে কাজের খোঁজে বের হয়ে চলে আসেন লক্ষীপুরের রামগঞ্জে।
এখানে কিছুদিন কাজ করার পর টাকা জমিয়ে কিনে ফেলেন একটি বাইসাইকেল। শুরু করে দেন ফেরি ব্যবসা। কোন ভ্যান গাড়ি নেই, কোন রিকসা নেই। একটি বাইসাইকেলেই সাজিয়ে ফেলেন ব্যবসার পশরা। সংসারের নিত্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন প্লাস্টিকের দ্রব্যাদি বাচ্চাদের খেলনাসহ প্রায় আড়াইশ থেকে তিনশ প্রকারের দ্রব্যাদিসহ সাইকেলে করেই ঘুরে বেড়ান গ্রামের পর গ্রাম। তার বাইসাইকেলটি প্রথমে দেখেই মনে হবে পুরো একটি দোকান। মাইলের পর মাইল পায়ে সাইকেল চেপে প্লাষ্টিকের দ্রব্যাদি পৌঁছে দেন গ্রামের মানুষের কাছে।
প্রতিদিন সাড়ে তিন হতে চার হাজার টাকা বিক্রি করেন বলে জানান সেলিম মিয়া। মাঝে মাঝে ৫/৬ হাজার টাকাও বিক্রি হয়। লাভ মোটামুটি ভালোই প্রতিদিন গড়ে ৭/৮শ টাকা পর্যন্ত লাভ থাকে কখনও কখনও বেশীও থাকে। বিক্রির উপর নির্ভর করে লাভের অংশ। কখনো কখনো শরীর অসুস্থ হয়ে শুয়ে থাকতে হয়। তখন ভোগান্তিতে পড়তে হয় বলে জানান তিনি।তিনি বলেন, আলহামদুলিল্লাহ এখন আর কোন পিছুটান নেই। প্রতি এক, দেড় মাস পর পর বাড়ি যায়। ছেলে মেয়েরা লেখা পড়া করছে। মায়ের ঔষধ কিনতেও কোন অসুবিধা হচ্ছে না। বাড়িতে দুটি গরু এবং দুটি খাসিও কিনেছি। পাঁচ বিঘা জমি বন্ধক নিয়েছেন। এখন আর কারো মুখাপেক্ষী থাকতে হয় না। আগের থেকে অনেক সুখী জীবন যাপন করছি। গত ৬ বছর যাবত রামগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ফেরি করে এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছি। কোন প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে হয়নি।
আবু সালেহ, কুলছুম বেগমসহ গ্রামের লোকজন জানান, দামে সস্তা তাই আমরাও প্রয়োজনীয় কিছু পণ্য তার কাছ থেকে কিনছি। তবে জিনিসগুলো খুব একটা মানসম্মত না বলেও জানান তারা।
নয়া শতাব্দী/এমআরএইচ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ