ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

ঈদকে সামনে রেখে বেপরোয়া লাগেজ পার্টি

জড়িত দুই দেশের চক্র
প্রকাশনার সময়: ২৬ মার্চ ২০২২, ২২:০৪

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ‘লাগেজ পার্টি’। ওপার থেকে নিয়ে আসছে পোশাক। এর সাথে জড়িত দুই দেশের একাধিক চক্র। জড়িত ব্যক্তিদের আটক, পোশাক জব্দ থেকে শুরু করে জরিমানা আদায়সহ নানা পদক্ষেপেও কিছুতেই থামছে না লাগেজ পার্টির দৌরাত্ম্য।

অভিযোগ আছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে প্রভাবশালী ব্যক্তি, কথিত কিছু মিডিয়া কর্মীকে ম্যানেজ করে ওপার থেকে দেদারছে আসছে তৈরি পোশাক। ঈদকে সামনে রেখে কয়েক কোটি টাকার পণ্য আনার টার্গেটে নেমেছে ওই লাগেজ পার্টি।

সম্প্রতি এ সংক্রান্ত বিষয়ে অভিযোগ উঠার পর একাধিক কর্মকর্তা বদলি হলেও চিত্র একেবারেই পাল্টায়নি।

সর্বশেষ শনিবার চার ভারতীয় নাগরিকের নিয়ে আসা আট ব্যাগ ভর্তি পোশাক আটক করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখার সময় পোশাক গণনার কাজ শেষ হয় বলে জানা গেছে। আপতত জব্দ হিসেবে দেখানো ১১ ধরণের ১৪৭০টি পোশাকের মূল্য আনুমানিক প্রায় ১০ লাখ টাকা বলে ধারণা পাওয়া যায়।

এর আগে ২৪ মার্চ র‌্যাবের হাতের চার ভারতীয় নাগরিকসহ পাঁচজন পোশাক নিয়ে যাওয়ার সময় র‌্যাবের হাতে আটক হয়। ১৭ মার্চ কাপড় আটক হলে এ নিয়ে দিনভর ‘নাটক’ করে কাস্টমস। ২১ মার্চও বিপুল পরিমাণ পোশাক জব্দ করা হয়।

যাত্রীদের লাগেজ সুবিধার আওতায় উল্লেখ আছে, বিদেশ ফেরত যাত্রী যুক্তিসংগত পরিমাণে খাদ্যদ্রব্য, পরিধেয় গৃহস্থালী বা অন্যবিধ সামগ্রী ১৫ কেজি নিতে পারবেন। এর বেশি হলে তাকে নিয়ম অনুসারে শুল্ক সুবিধা দিতে হবে। এক বছরে তিনি তিনবার ৪০০ ডলার পর্যন্ত দামের পণ্য নিয়ে যেতে পারবেন।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, করোনা শুরুর পর থেকে একাধিক চক্রের মাধ্যমে ভারত থেকে পোশাক আসা শুরু হয়। সাম্প্রতিক সময়ে সেটি বেড়ে যায়।

এক্ষেত্রে সেখানকার ব্যবসায়িরা লোক দিয়ে এসব পণ্য পাঠান। এসব পণ্য ঢাকা, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় যায়। বাংলাদেশের ব্যবসায়িদের পাশাপাশি কথিত কয়েকজন মিডিয়া কর্মীও এর সাথে জড়িত। কাস্টমসসহ বন্দরের সংশ্লিষ্টদেরকে ম্যানেজ করে তারা অবাধে এসব পণ্য নিয়ে যাচ্ছেন। ৫০ এর অধিক ভারতীয় দম্পতি এ পেশায় জড়িয়ে পড়েছেন বলে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া যায়।

সূত্রটি জানায়, কিছুদিন ধরে বাংলাদেশের ব্যবসায়িদের মধ্যে আভ্যন্তরীন দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এরই অংশ হিসেবে একজন আরেকজনের পণ্য ধরিয়ে দিচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবারও একটি পক্ষ এ পণ্য ধরিয়ে দেন। এদিকে র‌্যাব সূত্র জানায়, ২৪ মার্চ দুপুরে কিশোরগঞ্জের ভৈরব থেকে ৬৬৫ পিস ভারতীয় থ্রিপিসসহ পাঁচজনকে আটক করা হয়। এর মধ্যে চার ভারতীয় নাগরিক হলেন- পশ্চিমবঙ্গের খিদিরপুরের রহমত আলী নাদিম, আশফাক আলী, ওয়াজিদ হোসাইন, তিলজলার আরশাদ আলী। তাদের কাছ থেকে চারটি ভারতীয় পাসপোর্ট জব্দ করা হয়।

এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার বরিশল গ্রামের মো. বশির আহম্মেদকে আটক করা হয়। গত ১৭ মার্চ লাগেজ পার্টির একটি চালান আটক করতে অনেকটা বাধ্য হয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এক পর্যায়ে ছেড়ে দেওয়ারও চেষ্টা করে। সাংবাদিকরা চ্যালেঞ্জ করলে কিছুটা পিছু হটেন। তবে শেষ পর্যন্ত নানা টালবাহানার পর নামকাওয়াস্তে শুল্ক আদায় করে পণ্য বহনকারি ভারতীয় নাগরিক ধনঞ্জয় ও তার স্ত্রী রূপাকে ছেড়ে দেয় কাস্টমস। ব্যাগেজ সুবিধার বাইরে পৌনে ছয় লাখ টাকার পণ্য আনার কথা উল্লেখ করে ৮৩ হাজার টাকা শুল্ক আদায় করে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

এ ব্যাপারে আখাউড়া স্থলবন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা মোঃ মিজানুর রহমান চৌধুরী সাংবাদিকদেরকে জানান, এ বন্দর দিয়ে যেন অতিরিক্ত পণ্য নিয়ে কেউ না যেতে পারে সেটির জন্য কঠোর নজরদারি রয়েছে। লাগেজ সুবিধার বাইরে কাউকে পণ্য নিয়ে যেতে দেওয়া হবে না বলে জানান তিনি।

নয়া শতাব্দী/এম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ