মুকুলে মুকুলে ছেয়ে গেছে আম গাছটি। মুকুল ছাড়া চোখে পরছেনা গাছের পাতা। আমের শাখায় শাখায় বাতাসে দোল খাচ্ছে সেই মুকুল দল। বাতাসে মিশে সৃষ্টি করছে মৌ মৌ গন্ধ। সর্ববৃহৎ আম গাছটির শাখা-প্রশাখা আর মুকুলের ঘ্রাণ মানুষের মনকে বিমোহিত করছে। পাশাপাশি মধুমাসের আগমনী বার্তা শোনাচ্ছে সোনালি রঙের মুকুলগুলো। মুকুলসহ দুইশো বছরের এই পুরনো আম গাছটি এক পলক দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ছুটে আসছেন দর্শনার্থীরা।
ঠাকুরগাঁওয়ের বালীয়াডাঙ্গী উপজেলার আমজানখোর ইউনিয়নের হরিণমারী সীমান্তে মন্ডুমালা গ্রামে অবস্থান এই সূর্য্যপরী আম গাছটির। গাছটি ০৩ বিঘা জমি জুড়ে দাঁড়িয়ে আছে। অসংখ্য ইতিহাসের নীরব সাক্ষী প্রাক ঐতিহাসিক যুগের প্রাচীন এই সূর্যপুরী আম গাছ। উত্তরের শান্ত জনপদের নীরব সাক্ষী এই গাছটির ডালপালার দৈর্ঘ্য প্রায় ৯০ ফিট। গাছটির বয়স কত তা ঠিক করে বলতে পারছেন না কেউ। তবে এলাকার বেশির ভাগ মানুষ এক মত যে প্রায় ২০০ বছরের কম নয়।
এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় আমগাছ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে গাছটি। এই গাছটিকে ঘিরে এরই মধ্যে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার হরিনমারি গ্রাম পরিচিতি পেয়েছে সাড়া দেশজুড়ে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে নিজ চোখে আমগাছটি দেখার জন্য ছুটে আসছেন দর্শনার্থীরা। গাছকে দেখেই ডালের উপরে ওঠে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গিতে ছবি তুলছেন তারা। ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধ দর্শনার্থীরাও গাছের ডালের উপরে উঠে ছবি তুলে মনের স্বাদ মিটানোর চেষ্টা করছেন।
ঢাকা থেকে আসা দর্শনার্থী বেলাল হোসেন বলেন, বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে অনেকদিন আগেই জানতে পারি যে এ জেলায় সবচেয়ে বড় আমগাছটি আছে। আজকে নিজ চোখে দেখা হল। বিশ্বাস করতে একটুও কার্পণ্য করিনি যে এটি সবচেয়ে বড় আমগাছ এশিয়ার মধ্যে। আজ দেখে অনেক ভাল লাগছে। তবে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা উচিত বলে আমি মনে করি। অনেকজনে শিশুসহ, মহিলারাও গাছের উপরে উঠছে এতে করে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
রাজশাহী থেকে আসা দর্শনার্থী সালেহ আহমেদ বলেন, আমি ৭ ঘন্টা মোটরসাইকেল জার্নি করে এসেছি। আমি একটি ভিডিও দেখেছিলাম বালীয়াডাঙ্গীতে একটি বড় আমগাছ আছে। আজকে নিজের চোখে দেখে আমি বিমোহিত হয়েছি। জীবনে এত বড় আম গাছ আমি দেখিনি। আনন্দের পাশাপাশি যে বিষয়টি বলতে চাই যে, আমরা যারা অনেক দূর থেকে আসি দেখতে। আমার মত আরও অনেকজনে এসেছেন। এতদূর থেকে আসার পর অবশ্যই বিশ্রাম ও খাবারের প্রয়োজন। কিন্তু এখানে সেটির ব্যবস্থা নেই। এখানে একটি রেস্ট হাউজ, ভাল মানের রেস্টুরেন্ট এবং একটি মানসম্মত ওয়াশরুম স্থাপন করা জরুরী। এতে করে দর্শনার্থীরা উপকৃত হবে।
মালিকপক্ষের একজন মোল্লা সাহেব বলেন, এখানে জমির খাজনা, সরকারি ট্যাক্সের কারণে ভিতরে দর্শনার্থী প্রবেশ বাবদ বিশ টাকা নেওয়া হয়। এখানে বিধিনিষেধ দেওয়া হলেও মানুষ মানেনা। আর গতবছরের চেয়ে এ বছর মুকুল অনেক বেশী দেখা যাচ্ছে। গতবছর পঞ্চাশ মণ আম পেয়েছি। এ বছর যে হারে মুকুল আশা করছি তিনশ মণ আম পাব। আর বাজারের চেয়ে এই গাছের আমের দাম একটু বেশী রাখা হয়। যেহেতু এটির চাহিদা অনেক বেশী। আমরা প্রতি কেজি একশত টাকা দরে বিক্রি করে থাকি।
বালীয়াডাঙ্গী উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা যোবায়ের হোসেন বলেন, যেহেতু সেটি ব্যক্তিমালিকাধীন সেহেতু তারা চাইলে সেখানে পিকনিক স্পষ্ট, রেস্ট হাউজ ও রেস্টুরেন্ট করতে পারেন। আমাদের পক্ষ থেকে তাদেরকে একটি প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে।
নয়া শতাব্দী/এমআরএইচ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ