ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

একসঙ্গে দুই শিশুর মৃত্যু, দায় কে নিবে? 

প্রকাশনার সময়: ১৪ মার্চ ২০২২, ০৮:৪১

অভাবে সন্তানদের ডাক্তার দেখাতে পারেননি মা, কেনেন নাপা সিরাপ। ভেবেছিলেন সন্তানরা এতেই সুস্থ হয়ে উঠবেন। কিন্তু; না সেই সিরাপ খেয়ে তারা একেবারেই নীরব হয়ে গেলেন। মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ কেড়ে নিল তাজা দুটি শিশুর প্রাণ। অথচ এই দায় নেওয়ার কেউ নেই।

ইসমাইল হোসেন ও লিমা বেগম দম্পতির প্রথম সন্তান জন্মের তিনদিনের মাথায় মারা যায়। প্রথম সন্তান হারানোর সেই বেদনা ভুলিয়ে রেখেছিল দুই সন্তান ইয়াছিন খান (৭) ও মোরসালিন খান (৫)। সংসারে আর্থিক টানাপোড়েন থাকলেও দুই ছেলের আদর- যত্নের কমতি ছিল না কোনো। তবে এবার একসঙ্গে দুই সন্তানকে হারিয়ে পাগলপ্রায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের ইসমাইল-লিমা দম্পতি।

ইসমাইল সিলেটে একটি ইটভাটায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। আর লিমা কাজ করেন আশুগঞ্জের একটি চাল কলে। অভাবের সংসারে নুন আনতেই পান্তা ফুরায় তাদের। টাকার অভাবে জ্বরে আক্রান্ত দুই শিশু সন্তানকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে না পেরে বাড়ির পাশের একটি ফার্মেসি থেকে নাপা সিরাপ এনে খাইয়ে ছিলেন লিমা। কিন্তু সেই সিরাপ খাওয়ানোর পরই অসুস্থ হয়ে পড়ে শিশু ইয়াছিন ও মোরসালিন। সিরাপ খাওয়ার কিছুক্ষণ আগে তাদের দুইজনকে চালের রুটি, খিচুড়ি এবং শুকনা বড়ই খাওয়ানো হয়েছিল বলে জানিয়েছেন স্বজনরা।

দুই শিশুর পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, জ্বর থাকার কারণে গত ১০ মার্চ বিকেলে ছোট ছেলে মোরসালিন তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলে মা লিমা বেগমকে। তখন মা জানায়, চাল কল থেকে কাজের টাকা পাওয়ার পর তাকে ভালো চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাবে। এখন ফার্মেসি থেকে সিরাপ এনে খাওয়াবে। পরে দুই শিশুর দাদি নিলুফা বেগম বাড়ির পাশে সড়ক বাজারের মা ফার্মেসি থেকে এক বোতল নাপা সিরাপ কিনে আনেন। এরপর সেই সিরাপ আধা চামচ করে ইয়াছিন ও মোরসালিনকে খাওয়ানো হয়। এর কিছুক্ষণ পরই তারা বমি করতে থাকে।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে দুই শিশুর মা লিমা বেগম বলেন, রুটি-খিচুড়ি খাওয়ার পর আমার ছেলে বলতেছে আম্মা আমাকে ভালো ডাক্তারের কাছে নিবা না? আমি তখন বলেছি ভালো ডাক্তারের কাছে নিতে পারব না, আমার কাছে এখন টাকা নেই। আপাতত দুই ভাইকে একটা নাপা সিরাপ এনে খাওয়াই। সিরাপ খাওয়ানোর ১৫-২০ মিনিট পর দুইজনই বমি করে। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পর অক্সিজেন দিয়ে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলে। আর সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর ডাক্তার জানায়- আপনার ছেলেরা সম্পূর্ণ সুস্থ। বাড়িতে নিয়ে টক আর পানি খাওয়ান বেশি করে। পরে বাড়িতে আনার পথে একজন এবং বাড়িতে নেওয়ার পর আরেকজনের মৃত্যু হয়।

এ দিকে, নাপা সিরাপ খেয়ে দুই শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ উঠার পর থেকেই গা ঢাকা দিয়েছেন দুর্গাপুর গ্রামের সড়ক বাজারের মা ফার্মেসির সত্ত্বাধিকারী মো. মঈনউদ্দিন। রোববার (১৩ মার্চ) দুপুরে দুর্গাপুরের পার্শ্ববর্তী তাজপুর গ্রামে মঈনউদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারের কাউকেই পাওয়া যায়নি। ফার্মেসি পরিচালনার জন্য ঔষধ প্রশাসন থেকে ড্রাগ লাইসেন্স নেওয়ার পাশাপাশি নূন্যতম সি-গ্রেডের ফার্মাসিস্ট কোর্স করা একজন ফার্মাসিস্টের প্রয়োজন হয়। তবে মা ফার্মেসিতে এগুলো ছিল কিনা- সে সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো তথ্য নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে।

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ঔষুধ প্রশাসনের সহকারী পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) হোসাইন মো. ইমরান বলেন, আশুগঞ্জ উপজেলায় মা ফার্মেসি নামে ১৭টি লাইসেন্স আছে। এখন এর মধ্যে দুর্গাপুরের মা ফার্মেসির লাইসেন্স আছে কিনা- সেটি স্পষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। কারণ মালিককে আমরা পাইনি। সেজন্য তার কাগজপত্র আছে কিনা- সেটি যাচাই করতে পারছি না। এছাড়া কোনো ফার্মাসিস্ট ছিল কিনা- সেটিও জানা যাচ্ছে না। তার সন্ধান না পাওয়া পর্যন্ত তার ফার্মেসির বৈধতা সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাবে না।

নয়া শতাব্দী/এম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ