ট্রাক চাপায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাফিক্স ডিজাইন ক্র্যাফটস অ্যান্ড হিস্টোরি অফ আর্ট বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদ হাবিব হিমেল নিহতের রেশ না কাটতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাতে ঘটনা ঘটেছে। বুধবার রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুরের আমজাদের মোড়ে কাছে একটি মেসে অতর্কিত ছুরিকাঘাতে সাফফাত নায়েম নাফি নামে এক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছেন। আহত নাফি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের (২০১৯-২০ সেশন) দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তার গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইল জেলায়।
নাফি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতিহার হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। উন্নত চিকিৎসার জন্য আহত শিক্ষার্থীকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাতে ঘটনায় আবারো উত্তপ্ত পরিবেশ বিরাজ করছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই ঘটনায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবার ক্যাম্পাসে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। শিক্ষার্থীরা উপাচার্যকে এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও আহত শিক্ষার্থীর চিকিৎসার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। নইলে আবারো ক্যাম্পাসে অশান্ত পরিবেশ বিরাজ করতে পারে বলে দাবি করেছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা এই ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও আইনের আওতায় আনতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দুইদিন সময় বেঁধে দিয়েছেন। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
কর্মসূচিতে উপস্থিত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর গোলাম সাব্বির সাত্তার জানান, শিক্ষার্থীর উপর অতর্কিত হামলার ঘটনায় আমরা অতি দ্রুত দোষীকে আইনের আওতায় আনতে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। একই সাথে ঐ মেস মালিককে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে নিয়ে আশে-পাশের সকল মেস মালিকের সাথে আলোচনায় বসা হবে। দ্রুত এই বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে আমরা কাজ করছি। ছাত্র উপদেষ্টা তারেক নুর বলেন, এটি নিঃসন্দেহে একটি পূর্ব পরিকল্পিত আক্রমণ। একটি চরমপন্থি গোষ্ঠী এই হামলা করেছে বলে তিনি জানান।
শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বুধবার (৯ মার্চ) রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহী নগরীর আমজাদের মোড় সংলগ্ন সোরাবানের মোড়ে এন আর ছাত্রাবাসে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শরীফ নামে এক শিক্ষার্থী থাকতেন। ওই ছাত্রবাসের ছাত্রদের মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়া বাধ্যতামূলক ছিলো। ফলে ওই ছাত্রাবাসে থাকা কিছু এডমিশন পরীক্ষার্থীর সাথে শরীফের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে শরীফ মেস মালিককে অভিযোগ করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে রাতে ছাত্রাবাসে একটি মিটিং বসেছিল। সেখানে শরীফের বন্ধু নাফিসহ, কয়েকজন গিয়েছিলেন। মিটিংয়ের শেষ পর্যায়ে কিছু স্থানীয় যুবক হঠাৎ করে ছাত্রাবাসে প্রবেশ করে দরজা লাগিয়ে দেন। পরে শরীফ, নাফিসহ তাদের সকলে বের হতে লাগলে ভুক্তভোগী নাফিকে হামলাকারীরা ধরে ফেলে এবং হাতে এলোপাথাড়ি ছুরিকাঘাত করে।
গুরুতর আহত অবস্থায় নাফিকে তার সহপাঠিয়া উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রামেক) ভর্তি করেন। বৃহস্পতিবার উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়।
নগরীর মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার আলী তুহিন নয়া শতাব্দীকে জানান, ‘পুলিশের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। আশা করি অচিরেই হামলাকারীদের শনাক্ত করা যাবে। লিখিত অভিযোগ পায়নি। অভিযোগ সাপেক্ষে এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
উল্লেখ্য, গত ১ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভিতরে ট্রাকচাপায় শিক্ষার্থী মাহমুদ হাবিব হিমেল নিহত হন। এ ঘটনার প্রতিবাদে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ভবনের সামনে প্যারিস রোডে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন ভবন এলাকাগুলোতে গিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫ লক্ষ টাকার অনুদান দেওয়া হয়েছে হিমেলের পরিবারকে।
নয়া শতাব্দী/এস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ