ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আদালতের আদেশ অমান্য করে চলছে স্থাপনা নির্মাণ

প্রকাশনার সময়: ০৭ মার্চ ২০২২, ১৯:২৬

কক্সবাজার সদরের খরুলিয়ার হিন্দুপাড়ায় দুই সংখ্যালঘুর জমির বিরোধের মাঝে ফায়দা লুটতে মরিয়া হয়ে উঠেছে একটি চিহ্নিত ভূমিদস্যু চক্র। মামলাধীন জমিটির ব্যাপারে আদালতের নিষেধাজ্ঞার আদেশ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা থাকা সত্ত্বেও বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে গায়ের জোরে বেআইনিভাবে স্থাপনা নির্মাণ করে যাচ্ছে স্থানীয় আলমগীর ও তার সহযোগীরা, এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

সূত্রে জানা যায়, খরুলিয়া মৌজার বিএস ৯৫৩ নং খতিয়ানের ৫৭৬০ দাগের ০.৩০ একর জমি নিয়ে মৃত মহেদ্র শর্মা এবং মৃত নন্দকুমার শর্মার ওয়ারিশদের মধ্যে বিগত কয়েক বছর ধরে বিরোধ চলে আসছে। এই বিরোধকে কেন্দ্র করে কক্সবাজার সদর সিনিয়র সহকারী জজ আদলতে একটি মামলাও চলমান রয়েছে। যার মামলা নং ২৩৩/২১। আদালত দরখাস্তের শুনানি শেষে গত বছরের ৮ জুন জমিটির উপর একটি নিষেধাজ্ঞার আদেশ জারি করেন। উক্ত আদেশে নালিশি জায়গার পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও হস্তান্তর করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।

কিন্তু নিষেধাজ্ঞার আদেশ অমান্য করে মামলাটির বিবাদী অধির শর্মা গং খরুলিয়া কোনারপাড়ার মৃত মো. আব্দুস সোবাহানের পুত্র মো. আলমগীরের কাছে জমিটি বিক্রি করেছেন বলে জানা যায়। এর প্রেক্ষিতে বাদীগণ আইনি প্রতিকার পেতে আদালতের দ্বারস্থ হলে আদালত চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি একই আদেশ পুনরায় জারি করেন। আদালতের আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ওই জায়গায় ইমারত নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে আলমগীর ও তার সহযোগীরা।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সোমবার (৭ মার্চ) সকাল ১১টার দিকে উক্ত জমিটির উপর ৭ জন শ্রমিক ইমারত নির্মাণের কাজ চালাচ্ছে। স্তূপ করে রাখা হয়েছে ২৭ ব্যাগ সিমেন্ট, ৩ বান্ডিল ৪ সুতা রড, দেড়শ ফুট কঙ্কর এবং এক ট্রাক সমপরিমাণ বালি। উপস্থিত শ্রমিকেরা সেখানে নির্মাণ সরঞ্জাম নিয়ে দেদারছে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, কোনারপাড়া-হিন্দুপাড়ার চলাচলের একমাত্র রাস্তার পাশ কেটে মাটি সরিয়ে বিরোধীয় জমিটির সাথে মিশিয়ে ফেলা হচ্ছে। ফলে চলাচলের রাস্তাটিও বর্ষা মৌসুমে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে বলে আশংকা করছেন স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক প্রতিবেশী জানান, দীর্ঘদিন ধরে উভয়ের মাঝে বিরোধ চলছে জমিটি নিয়ে। দুইদিন আগে পুলিশও এসেছিল। সেসময় পুলিশ বলেছে জমিটির উপর আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কোনো পক্ষ যেন জমিটির উপরে কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ না করে। কিন্তু এখন দেখতে পাচ্ছি আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের দুই ব্যক্তির দ্বন্দ্বের মাঝখানে এসে আলমগীর নামের এক লোক রাত-দিন শ্রমিক লাগিয়ে স্থাপনা নির্মাণ করছে। বাঁধা দিতে গেলে আলমগীর ও তার সহযোগীরা হাঙ্গামা শুরু করে। এমনকি গ্রামবাসীর সামনে প্রকাশ্যে মৃত নন্দকুমারের ওয়াশিদের প্রাণ নাশের হুমকি দিচ্ছে। এঘটনায় আমাদের হিন্দু সমাজের মাঝে চরম আতংক বিরাজ করছে। যেকোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

এবিষয়ে অভিযুক্ত আলমগীরের সাথে যোগাযোগ করা হলে প্রতিবেদককে বলেন, জায়গাটি আমরা অধির শর্মার কাছ থেকে ক্রয় করেছি। সেখানে আইনগত কোন জটিলতা কিংবা আদালত কর্তৃক নিষেধাজ্ঞা রয়েছে কিনা সে বিষয়েও জানা নেই। তবে বিরোধীয় জমিটির মামলার বাদী বাবুল শর্মার সাথে একাধিকবার দাঙ্গাহাঙ্গামা ও প্রাণ নাশের হুমকির বিষয়ে জানতে চাইলে মামলাটির অপর বিবাদী অধির শর্মার কাছে বিস্তারিত জেনে নিতে পরামর্শ দেন। সুযোগ থাকলে পরে দেখা করে জানাবেন বলে প্রতিবেদককে আশ্বস্ত করেন।

আলমগীরের কথার সূত্র ধরে ও বিরোধীয় জমি বিক্রি করার আইনগত ভিত্তি কতটুকু জানতে অধির শর্মার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রতিবেদকের পরিচয় নিশ্চিত হয়ে ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে পরে যোগাযোগ করবেন বলে সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) সেলিম উদ্দিনের সাথে। তিনি বলেন, আদালতের নির্দেশনা পেয়ে এসআই আল আমিনের নেতৃত্বে ঘটনাস্থলে পুলিশের একটি টিম পাঠিয়েছিলাম। পুলিশ আদালতের নির্দেশনার বিষয়টি উভয় পক্ষকে অবগত করে কোন প্রকার স্থাপনা না করতে অনুরোধ করে। কিন্তু পরবর্তীতে বিবাদী পক্ষের লোকজন আদালতের নির্দেশ অমান্য করে ওই জায়গায় স্থাপনা নির্মাণ করছে বলে অভিযোগ পেয়েছি। আইনি জটিলতা থাকায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আটক করা সম্ভব হচ্ছেনা বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

নয়া শতাব্দী/এস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ