মায়ের ইচ্ছে ছিলো একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা। যেখানে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত গ্রামের অসহায় ও দরিদ্র মানুষ বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা ও ঔষধ পাবে। বিনাচিকিৎসায় আর কেউ মারা যাবে না। দুঃখী মানুষের মুখে ফুটবে হাঁসি। আর সে হাঁসিতে ভরে যাবে মায়ের মুখ।
মায়ের ইচ্ছা ও স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে লোবনান গ্রুপ ও আফতাব উদ্দিন ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ জুনাইদ মায়ের নামে ২০২১ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠা করেন রাহিমা খাতুন জেনারেল হসপিটাল।
মুহাম্মদ জুনাইদের পিতা মাওলানা আফতাব উদ্দিনের নামে আফতাব উদ্দিন ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে এই হাসপাতাল।
ময়মনসিংহের নান্দাইলে দেওয়ানগঞ্জ বাজারের পাশে মনোরম পরিবেশে গড়ে উঠেছে এই হাসপাতাল।নান্দাইল, গফরগাঁও ও হোসেনপুর উপজেলার মোহনায় প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালটি থেকে প্রতিনিয়ত উপকৃত হচ্ছেন তিন উপজেলার প্রান্তিক জনগোষ্ঠী।
ব্রহ্মপুত্র নদের বিস্তৃত চরাঞ্চলের হতদরিদ্র মানুষগুলোও উপকৃত হচ্ছেন এ হাসপাতাল থেকে। সমাজের অসহায় ও গরীবদের স্বাস্থ্যসেবায় বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে রাহিমা খাতুন জেনারেল হসপিটাল।
মাওলানা আফতাব উদ্দিন ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের অর্থায়নে পরিচালিত এ হাসপাতালটি বিগত ১ বছরে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ৫ হাজার হতদরিদ্র মানুষকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করেছেন। চক্ষু শিবির কার্যক্রমের আওতায় ১৩৫ জনকে পরামর্শ ও ঔষধ প্রদান করা হয়েছে। ৮ জনের সানী ও নালী অপারেশন করা হয়েছে।
রাহিমা খাতুন জেনারেল হাসপাতালে সপ্তাহে ১দিন প্রতি শনিবার গরিব রোগীরা পাচ্ছেন বিনামূল্যে মানসম্পন্ন চিকিৎসাসেবা। দুপুর আড়াইটা থেকে সন্ধা পর্যন্ত চলে এই চিকিৎসাসেবা। চিকিৎসাসেবার মান বৃদ্ধি হওয়ায় এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে আস্থায় এসেছে হাসপাতালটি।
ডাক্তার ফি ছাড়াই মাত্র ১০টাকার টিকেটের বিনিময়ে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা বিনামূল্যে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা ও ঔষধ পাচ্ছেন।
হাসপাতালের পরিচালক ও মাওলানা আফতাব উদ্দিন ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের কো-অর্ডিনেটর হুজ্জাতুল ইসলাম মুহাম্মাদ তারিক জামিল বলেন, গত বছর ১জন ডাক্তার ও ৫০ জন রোগী নিয়ে চালু হওয়া রাহিমা খাতুন জেনারেল হসপিটালে দিনদিন বাড়ছে সেবাগ্রহীতার সংখ্যা। বর্তমানে রোগীর সংখ্যা আড়াইশ এর অধিক।
মাওলানা আফতাব উদ্দিন ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের কোষাধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস সাত্তার বলেন, বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে গরিব রোগীদের। তবে বিনামূল্যের চিকিৎসা নিতে মধ্যবিত্ত পরিবার থেকেও রোগীরা আসেন। আমরা তাদেরকেও ফিরিয়ে দেইনা। সবাই ওইদিন বিনামূল্যে চিকিৎসা পান।
হাসপাতালের পরিচালক তারিক জামিল নয়া শতাব্দীকে জানান, বর্তমানে হাসপাতালটিতে নিউরো, মেডিসিন, গাইনি, শিশু, অর্থোপেডিকসহ বিভিন্ন ধরনের আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থা রয়েছে। কিশোরগঞ্জ ও ময়মনসিংহ থেকে এমবিবিএস ডাক্তার এসে রোগী দেখেন।
বর্তমানে ৩জন এমবিবিএস ডাক্তার এবং ২জন মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট চিকিৎসাসেবা প্রদান করছেন।
একই সঙ্গে আউটডোর সেবার পরিধি বাড়ানোর লক্ষ্যে দ্বিতীয়তলার সম্প্রসারিত কাজ খুব শিগগীর শুরু হবে বলে জানান, হাসপাতালের পরিচালক তারিক জামিল।
আফতাব উদ্দিন ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ্ব মাওলানা আফতাব উদ্দিন বলেন, টাকার অভাবে যারা চিকিৎসা করাতে পারেননা সমাজের সেইসব গরীব ও অসহায় মানুষেকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদানের লক্ষ্য নিয়েই হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। মানুষ এখন বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ঔষধ পাচ্ছেন।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ফিরোজা বেগম (৫৫)এবং মফিজ উদ্দিন(৫৯)বলেন, বিনা খরচে ভালা চিকিৎসা, ঔষধ পাইতাছি রাহিমা খাতুন জেনারেল হাসপাতাল থাইক্যা। এই হাসপাতালে সব ধরনের সেবা খুব সহজে পাই আমরা।
ডা: রাজন খাঁন বলেন, এই হাসপাতালের মাধ্যমে তৃণমূলের মানুষ বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ঔষধ পাচ্ছে। এতে তারা খুবই খুশী। আমরা চেষ্টা করি প্রতিটি মানুষের দোড়গোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে।
সরেজমিন দেখা যায, অত্যন্ত শৃংখলার সহিত হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে। ডাক্তারের চেম্বারের সামনে সারিবদ্ধভাবে টিকেট হাতে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন নারী-পুরুষ। অন্য পাশে রোগীরা লাইনে দাঁড়িয়ে বিনামূল্যের ঔষধ সংগ্রহ করছেন। আর ভীতরে ডাক্তারদের বিভিন্ন রোগীদের চিকিৎসা দিতে দেখা গেছে।
বর্তমানে হাসপাতালে রোগী দেখছেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের নিউরো মেডিসিন বিভাগের ডা: রাজন খাঁন ও একই হাসপাতালের শিশু বিভাগের ডা: সেলিম মিয়া এছাড়া গাইনী ডাক্তার হিসেবে রোগী দেখেন ড: সামিয়া আফরিন সাবা। এছাড়া মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট হিসেবে কর্মরত আছেন ডা: মুজাহিদ ও ডা: তাহমিনা আক্তার।
আফতাব উদ্দিন ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের অধীনে বেশকিছু মানবিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে আফতাব উদ্দিন দাখিল মাদরাসা, রাহিমা খাতুন হিফজুল কুরআন মাদরাসা ও এতিমখানা, বাইতুল আমান জামে মসজিদ, ১০টি বয়স্ক কুরআন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তার মধ্যে ৬টি পুরুষ কেন্দ্র, দুটি মহিলা কেন্দ্র এবং ২টি শিশু কেন্দ্র।
ঐতিহ্যবাহী রাজাপুর ফাযিল মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন মাওলানা আফতাব উদ্দিন। ভবিষ্যৎপরিকল্পনায় রয়েছে কারিগরি কলেজ ও বৃদ্ধাশ্রম।
নয়া শতাব্দী/জিএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ