ঢাকা, রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

ধর্মের বাণী শুনাচ্ছে দিল্লীর আখড়ার মোহন্তরা

প্রকাশনার সময়: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০২:০৬ | আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১১:২৮

কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলার কাটকাল ইউনিয়নের দিল্লীর আখড়ার মোহন্তরা সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মাঝে বিগত চারশত বছর ধরে ধর্মের বাণী শুনাচ্ছে। কেউ তাদের ধর্মের বাণীতে অনুপ্রানিত হয়ে বা কেউ সংসার প্রতি বৈরাগ্য হয়ে এখানে এসে বৈঞ্চব মন্ত্র দীক্ষা নেয়। মোহন্তরা দেশ-দেশান্তরে ধর্মের বাণী শুনিয়ে পথহারা হিন্দুদের সত্যের পথে দিকে ধাবিত করে।

ইতিহাস থেকে জানা গেছে, দিল্লির সম্রাট জাহাঙ্গীরের শাসন আমলে (১৬০৫-১৬২৭) একদল রাজকর্মচারী বর্তমান মিঠামইন উপজেলার কাটখাল এলাকায় পদার্পণ করে। এসে পরস্পরের মাধ্যমে অবহিত হয় যে, এই হাওরের প্রত্যান্ত অঞ্চলে এক অলৌকিক গুণসম্পন্ন সাধু থাকেন এবং আরো অবগত হয় যে, সাধুর নিকট যে যা চায় তা প্রাপ্ত হয়ে পরমতৃপ্তি লাভ করে থাকে। রাজকর্মচারীদের মনে আগ্রহ জন্মে এ হাওরের গভীর অরন্যে সাধুর সহচার্য লাভের। তাই তারা মেঘনা নদীর মোহনায় যাত্রা বিরতি করে। তারা খোঁজ করে সাধুকে দেখতে পান। এই অরন্যের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীর তটে গভীর ধ্যানরত এক প্রকান্ড বৃক্ষতলে। একসময় সাধু নারায়ণ গোসাঁইয়ের ধ্যান ভঙ্গ হলে তিনি দেখতে পান জন কয়েক লোক তার পাশে বসে আছে। নারায়ণ গোসাঁই রাজকর্মচারীদের প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, গুরুজীর আদেশ প্রাপ্ত হয়ে মানুষের সর্বোচ্চ কল্যাণে পরব্রহ্মের উপাসনা করছি যদি কারো কোন উপকারে আসে তাই।

ঘটনাক্রমে রাজকর্মচারীরা নারায়ণ গোসাঁইর সাধুচরিত আচরণে খুবই সন্তোষ্টি হয়ে গোসাঁইকে একটি উপাসনালয় করে দেয়ার জন্য অনুমতি প্রার্থনা করেন। পরে সম্রাট জাহাঙ্গীরের পক্ষ থেকে ৩৭২ একর ভূমি নিস্করভাবে তাপ্রত্রে শ্রী শ্রী নারায়ণ গোসাঁসাইর নামে দেবোত্তর করে দেন। রাজকর্মচারীরা নিবেদন করে যে, আপনার সাথে যে আলাপচারিতা ও বিভিন্ন ঘটনাবহুলকে স্মরণ রাখার জন্য আপনার উপাসনালয়ের নাম দিল্লির সম্রাটের সাথে সম্পর্কীত করতে চাই। গোসাঁই অনুমতি দিলে এই উপাসনালয়ের নাম দিল্লির আখড়া হওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করছি। সিদ্ধপুরুষ নারায়ণ গোসাঁই আনন্দিত হয়ে অনুমতি জ্ঞাপন করেন। আর এই সময় থেকে এই গহিন অরণ্যের আখড়াটি দিল্লির আখড়া নামে পরিচিত লাভ করে। শ্রী শ্রী নারায়ন গোসাঁই সংগীত বিশারদও ছিলেন। তিনি নিজে সংগীত রচনা করতেন এবং নিজেই সুরারোপ করতেন। আবার ভক্ত ও শিষ্যমন্ডলীকে তা শিক্ষাও দিতেন। তার রচিত সংগীতগুলো ‘নির্বাণ সংগীত’ নামে পরিচিত।

মহান পুরুষ শ্রী শ্রী নারায়ণ গোসাঁইয়ের অন্তর্ধানের পর যারা দিল্লির আখড়া পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন তাদেরকে মোহন্ত বলা হয়। যিনি বৈঞ্চবগণের মাঝে অধিকতর দায়িত্বশীল ও উপযুক্ত তারেই ‘জগতমোহনী ধর্মমতের’ নিয়ম অনুযায়ী মোহন্ত পদে অধিষ্টিত করা হয়। বর্তমান যিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত তার নাম নারায়ণ দাস মোহন্ত গোসাঁই (৬৩)।

তিনি বলেন, জন্মস্থান জেলার ইটনার বড়হাটি হলেও এখানে ৬বছর বয়স থেকে এখানে আছি। সেই বাবা-মা দিয়ে দিয়ে গিয়েছিল আর যাইনি আখড়া ছেড়ে। এই আখড়ায় নারায়ণ গোস্বামী ও গঙ্গারাম গোস্বামী দু’জনের সমাধিস্থল এই আখড়ায় আছে। এখানে যারা দায়িত্ব থাকেন বৈঞ্চব বিবাগী। যারা বিয়ে-সাদি করেন নি। দু’জন সেবায়েত আছি এখানে আমি আর আনন্দ নামে একজন। ব্রহ্মা,বিষ্ণু,মহেশ্বের এই তিনে মিলে ইশ্বর এ মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে নারায়ণ গোসাঁই এই আখড়া প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ৩.৭২ একর জমির মধ্যে এখন আখড়ার দখলে আছে ২.২৬ একর ভূমি। বাকী ১.৪৮একর ভূমি প্রজাবিলিতে চলে গেছে। আখড়ার জমি এলাকার প্রভাবশালীরা নিজেদের নামে রেকর্ড করে বিক্রি করেছে। সিএস রেকর্ড আখড়ার নামে হলে অন্যান্য রেকর্ড তাদের নামে করিয়েছে। পৌষমাসে সংক্রান্তির মেলা, ভাদ্র মাসে তাল নবমীর অনুষ্ঠান, অষ্টমীর মেলা হয় আখড়ার প্রাঙ্গনে সেখানে বিপুল লোকের সমাগম হয়। করুণা পরিস্থিতির কারণে দু’বছর হয়নি।

সাপান্ত গ্রামের তারণবালা (৬২) বলেন, ৪০বছর ধরে এখানে আছি। গুরুদেব-গুরুপাঠে আমি থাকি। তারণবালার মতো অনেক মহিলা এই আখড়ায় থাকেন এবং আখড়ায় জন্য নিবেদিত প্রাণ কর্মী হয়ে পড়ে।

নয়া শতাব্দী/জিএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ