ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

হাসি নেই প্রতিমা কারিগরদের মুখে 

প্রকাশনার সময়: ২১ জানুয়ারি ২০২২, ১৩:৪৮

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব সরস্বতী পূজা আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি। এই উৎসবকে সামনে রেখে ফরিদপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ।

প্রতি বছরই মন্দিরের পাশাপাশি জেলা শহর ও বিভিন্ন উপজেলার পাড়া-মহল্লায়ও হয় বিদ্যা দেবীর পূজা। এসব পূজার জন্য যেসব কারিগর প্রতিমা বানান তাদের মুখে নেই হাসি। কারণ, সরস্বতী প্রতিমা তৈরি নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করলেও পুনরায় করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় ক্রেতা সংকটে ভুগছেন তারা।

সরেজমিনে শহরের পৌর এলাকার ভাজনডাঙ্গা পালপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, সরস্বতী প্রতিমা তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। কাঠামো তৈরির পর এখন মাটির কাজ চলছে। কয়েকদিনের মধ্যেই রংয়ের কাজ শুরু করা হবে।

প্রতিটি বাড়ির পুরুষ সদস্যদের পাশাপাশি নারীরাও অংশ নিয়েছেন প্রতিমা তৈরির কাজে। প্রতিমার মাটির কাজ শেষে রোদে শুকাতে দেওয়া হয়েছে। বাড়ির উঠান এবং মাঠে সারি সারি করে রাখা হয়েছে প্রতিমা। ওই এলাকায় প্রায় এক হাজার প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে বিক্রির জন্য।

শহরের ভাজনডাঙ্গা পালপাড়ার বাসিন্দা সরস্বতী প্রতিমা তৈরির কারিগর প্রদীপ চন্দ্র পাল জানান, গত বছর বাণী-অর্চনার জন্য ১শটি প্রতিমা তৈরি করেছিলেন। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এই বছর তৈরি করছেন ৬০টি। তারপরও সবকটি বিক্রি হবে কি না তা নিয়ে সন্দেহে রয়েছেন।

তিনি আরো জানান, ৫শ থেকে ১০ হাজার টাকা দামের প্রতিমা রয়েছে আমার কাছে। এখনো প্রতিমার অর্ডার পাইনি। ক্রেতাই আসছেন না। তাছাড়া করোনার কারণে ভালো দাম পাওয়া যাবে কি না তা নিয়েও শঙ্কায় আছি।

পাচু গোপাল পাল বলেন, ‘গত বছরও করোনার কারনে সরস্বতী প্রতিমা বানিয়ে অনেক লোকসান হয়েছে। এবছরও আবার করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় চিন্তায় রয়েছি। প্রতিমা বানিয়ে রাখছি, কিন্তু মন ভালো নেই।’

তিনি আরো বলেন, ‘গত দেড় বছর যাবত পরিবার পরিজন নিয়ে খুব কষ্টে জীবনযাপন করছি। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সহায়তা আমরা এখন পর্যন্ত পাইনি।’

পুরুষ সদস্যের পাশাপাশি প্রতিমা তৈরিতে সাহায্য করেন নারী সদস্যরাও। গৃহবধূ সুচিত্রা পাল বলেন, ‘পুরুষ সদস্যদের পাশাপাশি আমি নিজে সহ বাড়ির সকল সদস্যই প্রতিমা তৈরির কাজে সহায়তা করি। প্রতিমা তৈরি করে বিক্রি করে যা লাভ হয় তা দিয়েই আমাদের সংসার চলে। কিন্তু করোনার কারনে ব্যবসার অবস্থা ভালো না। কোনোরকমে দিনপাত করছি।’

প্রতিমা তৈরির কারিগর বিনয় পাল বলেন, ‘প্রতিদিন ৭শ টাকা মজুরি হিসেবে আমি প্রতিমা তৈরির কাজ করি। করোনার কারনে এবছর কাজ কম, তাই খুব কষ্টে জীবনযাপন করছি।’

দীর্ঘ ৪০ বছর যাবত প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন পরেশ চন্দ্র পাল। তিনি বলেন, ‘দুর্গা, কালি, সরস্বতী, নারায়নসহ বিভিন্ন দেব দেবীর প্রতিমা তৈরি করছি ৪০ বছর যাবত। প্রতিমা তৈরি করেই সংসার চালিয়ে আসছি। কিন্তু গত দেড় বছর করোনার কারনে পূজা অর্চনা কমে যাওয়ায় প্রতিমার চাহিদাও কমে গেছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এবছর ভেবেছিলাম সরস্বতী প্রতিমা তৈরি করে লাভবান হতে পারবো, কিন্তু করোনা আবার বেড়ে যাওয়ায় প্রতিমার অর্ডার কমে গেছে। খুব কষ্টের মধ্যে দিয়ে দিনপাত করছি আমরা। সরকার আমাদের একটু সহায়তা করলে আমরা ভালোভাবে বাঁচতে পারতাম।’

নয়া শতাব্দী/এম

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ