ঢাকা, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

সেলাই মেশিনে তানিয়ার ঘুরে দাঁড়ানো

প্রকাশনার সময়: ১৫ জানুয়ারি ২০২২, ১৫:৫১

নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস থাকলে দু:খ সুখে পরিনত হয় তা প্রমাণ করেছেন বাজিতপুর উপজেলার শিমুলতলা গ্রামের বিধবা তানিয়া আক্তার। জীবন সংগ্রামের লড়াইয়ে তিনি বর্তমানে জয়ী। তিনি সমাজের বিধবা নারীদের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।

২০০৩ সালে ঘটা করে তানিয়া আক্তারের বিয়ে হয় শেখ এনামুল হক কাওসারের সাথে। ২০০৭ সালে স্বামী কাওসার সোনালী ভবিষ্যতের আশায় পাড়ি দেন মধ্যপাচ্যের দেশ সৌদি আরবে। প্রবাস থেকে রেমিটেন্স পাঠাতো কাওসার আর এতে করেই তানিয়া আক্তার সন্তাদের নিয়ে সুখে দিন কাটাতে লাগলো।

হঠাৎ করে ঘটে বিপত্তি। সৌদি আরবে থাকাকালীন সময়ে কাওসার হৃদরোগ আক্রান্ত হন। সৌদি আরবের হাসপাতালে চিকিৎসা চলে তার। চিকিৎসার জন্য দেশ থেকে উল্টো টাকা পাঠাতে হয়। সেখানে কিছুদিন চিকিৎসার করার পর তানিয়া তার স্বামীকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনেন। দেশের নামকরা হাসপাতালে চিকিৎসা করান। ব্যয়বহুল চিকিৎসার খরচ মেঠাতে এক সময় বাড়িতে জমানো টাকায় হাত পড়ে। জমানো সবটাকা শেষ হয়ে যায়। পরে সহায় সম্পত্তি বিক্রি করে স্বামীর চিকিৎসা চালান তানিয়া।

এদিকে একমাত্র উপার্জনক্ষম স্বামী কাওসার যখন বিছানায় শয্যাশায়ী তখন তানিয়া দিশেহারা। চোখে অন্ধকার দেখছেন, এমন সময় জানতে পারেন বাজিতপুর মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা কার্যালয়ে মেয়েদেরকে আত্বনির্ভরশীল করার জন্য সেলাই-ব্লকবাটিকসহ বিভিন্ন প্রকার কর্ম হাতে কলমে শেখানো হয়। কোন গতান্তর না পেয়ে সেখানে তিনি ভর্তি হয়ে যান এবং কয়েক মাসের মাথায় তিনি সেলাই কাজ রপ্ত করেন। বাড়ি এসে সেলাই মেশিন কিনে কাজ শুরু করে দেন। পাড়া-পড়শি, মেয়ে-মহিলাদের জামা-কাপড় তৈরির অর্ডান পান তিনি। এভাবে এলাকায় পরিচিত হয়ে যান ভালো দর্জি হিসেবে। দিন-দিন কাজের পরিমান বাড়তে থাকে।

এদিকে তার স্বামী কাওসার কয়েকবছর রোগ-শোকের পর গতবছর মার্চে সব মায়া ত্যাগ করে পরপারে পাড়ি জমান। স্বামী মারা যাওয়ার পর সেলাই কাজের আয় দিয়ে তানিয়া ছেলে-মেয়ে দুটি সন্তানের ভরণপোষণ, পড়াশোনার খরচ এবং ভাগলপুরের চন্দগ্রাম এলাকায় বাসাভাড়া চালিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে তিনি সেলাই কাজের পাশাপাশি গোটা কয়েক মুরগী পালন করেই স্বচ্চলতা এনেছেন সংসারে।

একমাত্র ছেলে এবার এসএসসি পরীক্ষায় আবতাব উদ্দিন স্কুল এন্ড কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে। তানিয়া আক্তার বলেন, ‘স্বামী যখন হৃদরোগসহ আমি অন্যান্য রোগে আক্রান্ত তখন আমি দিশেহারা। অকূল পাথারে ভাসছিলাম এমনি সময় বাজিতপুর মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে সেলাই প্রশিক্ষণ শেষে সেলাই কাজ করে আমাকে ঘুরে দাঁড়াতে হয়েছে । আমার মতো বিধবা নারীরা যেন নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস নিয়ে নিজেরা বিভিন্ন প্রকার কাজ শিখে ঘুরে দাঁড়াতে পারে।’

বাজিতপুর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা দিলরুবা আক্তার বলেন, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের আওতাধীন বাজিতপুর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ে উপজেলা পর্যায়ে আই জি এ প্রকল্পের আওতায় দু:স্থ-অসহায় ও বিধবা নারীদের স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান করে। প্রশিক্ষণ শেষে তারা আয়বদ্ধক কর্মকাণ্ডে নিজেদের সম্পৃক্ত করে স্বাবলম্বী হয়েছে।

নয়া শতাব্দী/জেআই

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ