মধুখালী উপজেলার মধুপুর গ্রামের হাসিনা বেগম (৫৫), স্বামী মারা গেছে ৮ বছর আগে। স্বামী মারা যাওয়ার পর ১ ছেলে ৩ মেয়েকে নিয়ে অভাব-অনটনে সংসার চালানো হয়ে পড়ে দায়। স্বামী মারা যাবার ৩ বছর পরে একমাত্র ছেলেটিও মারা যায়। ৩ মেয়ের ২ মেয়েকে বিবাহ দিলেও ১ মেয়েকে কষ্টে মাদ্রাসায় পড়াচ্ছেন। কয়েক বছর নানান কাজ করলেও অবশেষে শীতের পিঠা বিক্রি শুরু করেন। প্রায় ৪ বছর ধরে শীতের পিঠা বিক্রি করে চলছে তার সংসার।
শুধু হাসিনা বেগম নয়, উপজেলার মধুপুর, রেলস্টেশনে, কামারখালী, বাগাট, নওপাড়াসহ বিভিন্ন স্থানে তার মতো অর্ধশত নারীর সংসার চলছে শীতের পিঠা বিক্রি করে। শীতকালে শীতের কুয়াশা ভেজা সকাল ও সন্ধ্যায় পিঠা আর পুলির আয়োজন বহুকাল আগে থেকেই করা হয় ঐতিহ্যগতভাবেই। কিন্তু নানা ব্যস্ততার কারণে ইচ্ছে থাকলেও এখন অনেকেই ঘরে ঘরে শীতের পিঠা বানিয়ে খেতে পারে না। বাড়িতে পিঠা বানানোর ঝামেলা এড়াতে অনেকেই পিঠার দোকান থেকে পিঠা ক্রয় করে স্বাদ মিটাচ্ছে। তাই মধুখালীর বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার মোড়ে মোড়ে জমে ওঠে বাহারি শীতের পিঠার দোকান। সন্ধ্যার পর থেকে এক প্রকার সিরিয়াল দিয়ে কিনতে হয় পিঠা। রাস্তার দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে অনেককেই দেখা যায় পিঠা খেতে। আর শীতের পিঠা খাওয়ার তৃপ্তি মেটাতে গিয়ে মধুখালীর অর্ধশতাধিক নারীর উপার্জন হচ্ছে এখান থেকেই। যা দিয়ে চলছে তাদের সংসার, যা তাদের জীবনযাপনে সাহায্য করছে।
শুধু যে সাধারণ মানুষই এই পিঠা খেয়ে থাকেন তা নয়। সব শ্রেণী পেশার মানুষ রাস্তার ধারের পিঠার দোকানের ওপর নিভর্রশীল হয়ে উঠছে দিন দিন। মধুখালীতে ভাপা পিঠা, পাটিশাপটা পিঠা, তেলের পিঠা ও চিতই (চিতি) পিঠা বিক্রি হয়। চিতই পিঠার সঙ্গে সরিষার ভর্তা, শুঁটকি ভর্তা, মরিচের ভর্তা, ধনেপাতা ভর্তা দেয়া হয়। ভাপা পিঠা ১০ টাকা, চিতই ৫ টাকা, তেলের পিঠা ৫ টাকা, খুচানি পিঠা ৫ টাকায় বিক্রি হয়।
৪ বছর ধরে মধুখালী রিক্সাস্ট্যান্ড (সাবেক কৃষি ব্যাংকের নিচে) এলাকার পিঠা বিক্রি করা হাসিনা বেগম জানান, খেজুর গুড় ও চালের গুঁড়া দিয়ে তৈরি ভাপা আর চালের গুঁড়া পানি দিয়ে বানানো হয় চিতই পিঠা। শীতের পিঠা হলেও বছরের প্রায় অনেক মাসই তিনি পিঠা বিক্রি করেন। স্বামীর মৃত্যুর পরে টুকটাক কাজের ফাঁকে পিঠা বিক্রি করেই চলছে তার সংসার। তিনি বলেন, শীত বেশি পড়লে পিঠা বিক্রি বাড়ে। প্রতিদিন গড়ে ৫ থেকে ৭ কেজি চাউলের পিঠা বিক্রি করেন তিনি। চালের গুঁড়া, গুড়, লাকড়ি ও অন্যান্য খরচ বাদে ৫০০-৬০০ টাকা লাভ হয় দিনে। মূলত সকাল ও সন্ধ্যায় পিঠা বিক্রি হলেও তুলনামূলক সন্ধ্যায় দোকানে পিঠার চাহিদা বেশি থাকে। সন্ধ্যার সময় পিঠা কিনতে দোকানে সিরিয়াল দেন ক্রেতারা। অনেকে বাড়ি নিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে খান। এছাড়া বেশি পিঠা প্রয়োজন হলে ২/১ দিন আগে অর্ডার দিয়ে যান।
নয়া শতাব্দী/জেআই
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ