সাতক্ষীরার (৫ জানুয়ারি) পঞ্চম ধাপের নির্বাচনের মাধ্যমে জেলার সাত উপজেলার ৭৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ৭৭টিতে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে।
এরমধ্যে নৌকা-৩০, বিদ্রোহী-২৪, বিএনপি স্বতন্ত্র-১৪, জাপা-১, ওয়ার্কাস পার্টি-১, জামায়াত-৬, ও স্বতন্ত্র-১ জন বিজয়ী হয়েছেন। জামানাত হারিয়েছেন নৌকার ৫জন প্রার্থী।
সাতক্ষীরা জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, গত ২০ সেপ্টেম্বর প্রথম ধাপে তালা উপজেলার ১২টির মধ্যে ১১টি এবং কলারোয়া উপজেলার ১২টির মধ্যে ১০টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
সাতক্ষীরার তালা ও কলারোয়া উপজেলার ২১টি ইউপির নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন- তালা সদরের সরদার জাকির হোসেন (আ.লীগ), খলিলনগর ইউনিয়নের প্রণব ঘোষ বাবলু (আ.লীগ), তেতুলিয়া ইউনিয়নের আবুল কালাম (আ.লীগ) ও খলিশখালি ইউনিয়নের সাবির হোসেন (ওয়ার্কার্স পাটি), মাগুরা ইউনিয়নের গণেশ চন্দ্র দেবনাথ (আ.লীগ), ইসলামকাটী ইউনিয়নের গোলাম ফারুক (স্বতন্ত্র), ধানদিয়া ইউনিয়নে মো: জাহাঙ্গীর হোসেন (স্বতন্ত্র), সরুলিয়া ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল হাই, জালালপুর ইউনিয়নে মো: মফিদুল হক লিটু (স্বতন্ত্র), খেশরা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী শেখ কামরুল ইসলাম লাল্টু। অপরদিকে কলারোয়া উপজেলার যুগীখালি ইউনিয়নে রবিউল হাসান (আ.লীগ), সোনাবাড়িয়া ইউনিয়নে বেনজির হোসেন (আ.লীগ), লাঙলঝাড়া ইউনিয়নে অধ্যাপক আবুল কালাম (আ.লীগ), দেয়াড়া ইউনিয়নে মাহবুবুর রহমান মফে (আ.লীগ), হেলাতলা ইউনিয়নে মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন (স্বতন্ত্র), জয়নগর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বিশাখা সাহা, জালালাবাদে মাহফুজুর রহমান নিশান (স্বতন্ত্র), কয়লা ইউনিয়নে সোহেল রানা(স্বতন্ত্র), চন্দনপুর ইউনিয়নের মো: ডালিম হোসেন(স্বতন্ত্র) নির্বাচিত হন।
১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ১৪টির মধ্যে ১৩টি ইউনিয়নে অনুষ্ঠিত হয় নির্বাচন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ৫ জন, আওয়ামী লীগ ৩ জন, বিএনপি ২ জন, জাতীয়পার্টি একজন ও জামাতের এক ও স্বতন্ত্র একজন চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন।
স্বতন্ত্র ১০ জন প্রার্থীর মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ৫ জন, বিএনপির ২ জন, জাতীয়পার্টির একজন ও জামায়াতের একজন।
নির্বাচিতরা হলেন- ধুলিহর ইউনিয়নের মিজানুর রহমান চৌধুরী (বিদ্রোহী), ফিংড়ি ইউনিয়নের মো: লুৎফর রহমান (বিদ্রোহী), ভোমরা ইউনিয়নে ইসরাঈল গাজী (স্বতন্ত্র জাতীয় পার্টি), বৈকারী ইউনিয়নের আবু মো: মোস্তফা কামাল (বিদ্রোহী), লাবসা ইউনিয়নের আব্দুল আলিম (স্বতন্ত্র বিএনপি), কুশখালী ইউনিয়নের মাওলানা আব্দুল গফফার (স্বতন্ত্র জামায়াত), আগরদাড়ি ইউনিয়নে কবির হোসেন মিলন (স্বতন্ত্র), বাঁশদহা ইউনিয়নের মাষ্টার মফিজুল ইসলাম (নৌকা), শিবপুর ইউনিয়নে এস.এম আবুল কালাম (বিদ্রোহী), ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নে আজমল হোসেন (নৌকা), ব্রহ্মরাজপুর মো: আলাউদ্দীন (নৌকা), ঘোনা ইউনিয়নে আব্দুল কাদের (বিদ্রোহী), বল্লী ইউনিয়নে এড. মহিতুল ইসলাম (স্বতন্ত্র বিএনপি)।
২৮ নভেম্বর তৃতীয় ধাপে ১৭টি ইউপিতে সাতক্ষীরার দেবহাটা ৫টি ও কালিগঞ্জের ১২টি ইউনিয়নে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়। এতে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ ও দেবহাটা উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান নির্বাচনে বেসরকারি ফলাফলে নৌকা ৬, বিদ্রোহী ৫, স্বতন্ত্র ৫ ও জাতীয় পার্টির একজন নির্বাচিত হয়েছেন।
নির্বাচনে কালিগঞ্জ উপজেলার কৃষ্ণনগরে সাফিয়া পারভিন (জাপা), দক্ষিন শ্রীপুরে গোবিন্দ চন্দ্র মন্ডল(আ.লীগ), বিষ্ণুপুরে মো: জাহাঙ্গির আলম (স্বতন্ত্র), তারালিতে এনামুল ইসলাম ছোট (আ.লীগ), মথুরেশপুরে বিদ্রোহী আবদুল হাকিম (বিদ্রোহী), চাম্পাফুলে মোজাম্মেল হক গাইন (আ.লীগ), ভাড়াশিমলায় নাজমুল হাসান (বিদ্রোহী), ধলবাড়িয়ায় গাজী শওকত হোসেন (বিদ্রোহী), কুশলিয়ায় আবুল কাসেম মো. সুমন (আ.লীগ), মৌতলায় মো: ফেরদৌস মোড়ল (স্বতন্ত্র), রতনপুরে আলিম আল রাজী (আ.লীগ), নলতায় আজিজুর রহমান (স্বতন্ত্র)। এছাড়া দেবহাটা উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে নির্বাচিতরা হলেন কুলিয়া ইউনিয়নে মো: আসাদুল হক (বিদ্রোহী), পারুলিয়ায় গোলাম ফারুক বাবু (স্বতন্ত্র), দেবহাটায় মো: আব্দুল মতিন(বিএনপি), সখিপুরে সাইফুল ইসলাম (স্বতন্ত্র), নওয়াপাড়ায় আলমগীর হোসেন সাহেব আলী (আ.লীগ)।
২৬ ডিসেম্বর চতুর্থ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সাতক্ষীরার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে তিনটিতে আওয়ামী লীগ ও সাতটিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। এরমধ্যে শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের অসীম কুমার মৃধা, নুরনগর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বখতিয়ার আহমেদ, কাশিমাড়ী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী গাজী আনিছুজ্জামান আনিচ, কৈখালীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রহিম, গাবুরায় স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা জিএম মাসুদুল আলম, বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী জামায়াত নেতা হাজী নজরুল ইসলাম, রমজাননগরে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী শেখ আল মামুন, পদ্মপুকুরে বিএনপি নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী আমজাদুল ইসলাম ও আটুলিয়া ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ কর্মী আবু সালেহ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া জেলার তালা উপজেলার কুমিরা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ আজিজুল ইসলাম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
এদিকে ৫ জানুয়ারি ৫ম ধাপের সাতক্ষীরার আশাশুনির ১১টি, শ্যামনগরের ৩টি এবং কলারোয়া ২টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে সাত উপজেলার ৭৮টি ইউনিয়নের মধ্যে ৭৭টিতে পরিষদ নির্বাচন সম্পন্ন হলো। পঞ্চম ধাপের সাতক্ষীরা ১৬টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এপর্যন্ত প্রাপ্ত ফলাফলে আশাশুনির ১১টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনে শোভনালী ইউনিয়নে মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক (জামায়াত), বুধহাটায় মো. মাহবুবুল হক ডাবলু (আ.লীগ), কুল্যা ওমর সাকী ফেরদৌস পলাশ (আ.লীগ বিদ্রোহী), দরগাহপুর শেখ মিয়ারাজ আলী (আ.লীগ), বড়দল জগদীশ চন্দ্র সানা (আ.লীগ বিদ্রোহী), আশাশুনি সদর এস এম হোসেনুজ্জামান (আ.লীগ), শ্রীউলা দীপংকর বাছাড় দিপু (আ.লীগ বিদ্রোহী), খাজরা এসএম শাহনেওয়াজ ডালিম (আ.লীগ), আনুলিয়া রুহুল কুদ্দুস (বিএনপি), প্রতাপনগর হাজী মো. দাউদ আলী (জামায়াত) ও কাদাকাটি দীপঙ্কর কুমার সরকার দীপ (আ.লীগ)। এছাড়া শ্যামনগর উপজেলায় তিনটি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনে ভুরুলিয়া জাফরুল আলম বাবু (আ.লীগ), শ্যামনগর সদর এড. জহুরুল হায়দার বাবু (আ.লীগ) ও ইশ্বরীপুর ইউনিয়নে এড. জিএম শোকর আলী (আ.লীগ) এছাড়া কলারোয়া উপজেলায় দুটি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনে প্রাপ্ত ফলাফলে কেরালকাতা ইউনিয়নে স. ম গোলাম মোর্শেদ (আ.লীগ) ও কুশোডাঙ্গা গাজী সাঈদ আলী (আ.লীগ বিদ্রোহী) জয়ী হয়েছে। সাতক্ষীরার মোট ৭৭টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের ৩০জন, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ২৪জন, বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র ১৪ জন, জাতীয় পার্টির লাঙল প্রতীকে ১ ও স্বতন্ত্র ১জন, জামাতের ৬জন এবং ওয়ার্কার্স পার্টির একজন ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
দুই-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া প্রত্যেকটি ইউনিয়নে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে বলে জেলার সুশীল সমাজ মনে করেন। জেলা নাগরিক নেতারা মনে করেন-স্বাধীনতা পরবর্তী যতবার স্থানীয় নির্বাচন হয়েছে তারমধ্যে এবারের নির্বাচনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য ভোটারদের কাছে অন্য একমাত্রা যোগ করেছে। প্রত্যেকটি ভোট কেন্দ্রে উৎসবমুখর পরিবেশ লক্ষ্য করা গেছে। নারী-পুরুষ দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট প্রদান করতে পেরে আনন্দ প্রকাশ করেছেন।
সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক আসিনুর রহিম বলেন, আইন-শৃংখলা বাহিনীর নিরপেক্ষ ভূমিকার কারণে সাধারণ মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছেন। বিশেষ করে পুলিশ, র্যাব, গোয়েন্দার কঠোর নজরদারীর কারণে জেলায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে মানুষ ভোট উৎসবে মেতে উঠতে পেরেছে।
এনিয়ে সাতক্ষীরা জেলায় ৭৮ টি ইউনিয়নের মধ্যে সদর উপজেলার আলিপুর ইউনিয়ন ছাড়া সব ইউনিয়নের নির্বাচন সম্পন্ন হল।
নয়া শতাব্দী/এম
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ